নয়াবার্তা প্রতিবেদক : দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট আজ ৬ জুন বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে ঘোষণা করা হয়েছে। এটি দেশের ৫৩তম, আওয়ামী লীগ সরকারের ২৫তম এবং বর্তমান অর্থমন্ত্রীর প্রথম বাজেট। প্রস্তাবিত এ বাজেটের আকার ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকা। এ বছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং আভ্যন্তরিন ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। অর্থাৎ এটি ঘাটতি বাজেট। এখন প্রশ্ন হলো ঘাটতি বাজেট কাকে বলে এবং বাংলাদেশ কেন ঘাটতি বাজেট করে ?
আমরা সবাই বাজেট কথাটির সঙ্গে কম-বেশি পরিচিত। কিন্তু বাজেট কী বা কত প্রকার, সেটা সম্পর্কে অনেকেরই ধারণা খুব পরিস্কার নয়। এক কথায় বললে, বাজেট হচ্ছে একটি দেশের এক বছরের সম্ভাব্য সব আয় ও ব্যয়ের বিস্তারিত হিসাব-নিকাশ বিবরণী। একটি নির্দিষ্ট সময়কালের জন্য সরকারের সম্ভাব্য ব্যয় এবং রাজস্বসহ অন্যান্য সব আয়ের একটি পূর্বাভাসও বলা যায় একে।
আয় ও ব্যয় সমান কিনা, সেই প্রশ্নেই রাষ্ট্রের বাজেট দুই রকমের হয়ে থাকে। যেমন: সুষম বাজেট ও অসম বাজেট। সরকারের আয় ও ব্যয়ের ওপর ভিত্তি করে অসম বাজেটকে আবার দুভাগে ভাগ করা হয়। এগুলো হচ্ছে: উদ্বৃত্ত বাজেট ও ঘাটতি বাজেট।
কোনো আর্থিক বছরে সরকারের প্রত্যাশিত আয় অপেক্ষা ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হলে তাকে ঘাটতি বাজেট বলে। বাজেটের এ ঘাটতি পূরণের লক্ষ্যে সরকার সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ঋণ, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান নিয়ে থাকে।
বাজেট ঘাটতি দুভাবে পূরণ করা হয় :-
বৈদেশিক উৎস : এটি মূলত বৈদেশিক ঋণ। সরকার বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও দেশ থেকে সহজ শর্তে ঋণ নেয়। এ উৎস থেকে বেশি ঋণ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করতে পারলে তা অর্থনীতির জন্য বেশি সহনীয়। কারণ এতে সুদ হার কম এবং পরিশোধ করতে অনেক সময় পাওয়া যায়; যদিও শর্ত থাকে বেশি।
এ বছর বাজেট ঘাটতি মেটাতে সরকার বিদেশ থেকে ১ লাখ ২৭ হাজার ২০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করছে।
অভ্যন্তরীণ উৎস : সরকার দুভাবে দেশের ভেতর থেকে ঋণ নেয়। যেমন, ব্যাংকিং ব্যবস্থা ও ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা। ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা হচ্ছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। এভাবে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে ঋণ নেয় সরকার।
অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে বেশি ঋণ নেয়ার দুটি বিপদ আছে। ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে সরকার বেশি ঋণ নিলে বেসরকারি খাতের জন্য অর্থ থাকবে কম। ফলে বিনিয়োগ কমে যায়। আর ব্যাংকবহির্ভূত ব্যবস্থা থেকে ঋণ নিলে বেশি হারে সুদ দিতে হয়। এতে সুদ পরিশোধে সরকারকে বেশি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ রাখতে হয়। এতে পরের অর্থবছরের বাজেট বেড়ে যায়। সরকার বেশি পরিমাণ ঋণ নিলে মূল্যস্ফীতিও বাড়তে পারে।
এ বছর সরকার ঘাটতি বাজেট মেটাতে ব্যাংকিং ব্যবস্থা থেকে এক লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার পরিকল্পনা করছে। আর ব্যাংক বহির্ভূত ব্যবস্থার আওতায় ঘাটতি মেটাতে সঞ্চয়পত্র থেকেও ঋণ নেবে সরকার।
বাংলাদেশ কেন ঘাটতি বাজেট করে : উন্নয়নশীল দেশগুলো সাধারণত ঘাটতি বাজেটই প্রণয়ন করে। বাংলাদেশও শুরু থেকেই ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করেছে। উন্নয়নশীল দেশে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিপূর্ণ ব্যবহার, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির লক্ষ্যে কিছুটা ঘাটতি বাজেট প্রণয়ন করতে হয়।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, বাংলাদেশের মতো দরিদ্র দেশে কিছুটা ঘাটতি থাকা ভালো। এতে অব্যবহৃত সম্পদের ব্যবহার বাড়ে, ঘাটতি পূরণের চাপ থাকে। তাতে অর্থনীতিতে উদ্দীপনা সৃষ্টি হয়।
তবে ঘাটতি বেশি থাকাটা আবার ভালো নয়। সাধারণত মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ৫ শতাংশ পর্যন্ত ঘাটতিকে সহনীয় বলে ধরা হয়।