নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি : প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেছেন, ‘বিচার বেচাকেনার জিনিস নয়, কোনো বিচারক যদি বিচার বেচাকেনা করেন, তাহলে সেটি ডাকাতির চেয়েও খারাপ।’ তিনি বলেন, ওই বিচারককে প্রত্যাহার করতে বিন্দুমাত্র হেজিটেশন (দ্বিধা) করা হবে না।
আজ বুধবার বিকেলে নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির ভবনে আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। পরে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আদালত প্রাঙ্গণে বিচার প্রার্থীদের জন্য নির্মাণাধীন বিশ্রামাগার ‘ন্যায়কুঞ্জ’র ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। পরে তিনি জেলার বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।
আইনজীবীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বলেন, ‘কোনো বিচারক নিয়ে প্রশ্ন বা অভিযোগ থাকলে, আপনারা শক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সুপ্রিম কোর্টকে জানাবেন। দুষ্ট বিচারক থাকলে তাঁর জন্য আইনি বিধান আছে, আপনারা আদালত বর্জনের মতো কোনো কাজ করবেন না। এতে জুডিশিয়ারি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আপনারা সহনশীল হবেন, সহযোগিতা করবেন।’ তিনি সংসদে জনগণের প্রতিনিধিত্ব করতে আইনজীবীদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। দুর্নীতি, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। যুদ্ধ করতে হবে মানি লন্ডারিংসহ সব দুর্বলতার বিরুদ্ধে। আমরা কোনোভাবেই ৭১-এর রক্ত বৃথা যেতে দেব না। সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করে, পরিশ্রম করে জিততে চাই।’
‘আইনজীবী ও বিচারক একে অপরের পরিপূরক’ উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘যে অর্থনৈতিক সক্ষমতায় রাষ্ট্র এগিয়ে যাচ্ছে, সেই গতিতে জুডিশিয়ারিকে এগিয়ে নিতে হবে। জুডিশিয়ারি পিছিয়ে থাকলে রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। স্বল্প সময়ে সঠিক বিচার নিশ্চিতে বিচারকের পাশাপাশি আইনজীবীদের বড় ভূমিকা আছে। দ্রুত বিচারে ম্যাজিক লাগে না, আইনজীবী ও বিচারকের পরিশ্রমই যথেষ্ট।’
প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আরও বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জে এখনো আশির দশক ও ২০০০ সালের আগের মামলা পেন্ডিং (অনিষ্পন্ন) আছে। বিচারপ্রার্থীরা আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন। আদালতের বারান্দায় ঘুরতে ঘুরতে তাঁরা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে যদি বলেন, “এ দেশে বিচার নাই, বিচার পেতে কষ্ট হয়।” তাহলে কি অন্যায় হবে? নিশ্চয়ই না। তাঁদের বিচার পাওয়ার অধিকার শাসনতান্ত্রিক অধিকার।’ তিনি বিচারপ্রার্থীদের কষ্ট অনুভব করতে আইনজীবী ও বিচারকদের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল গোলাম রব্বানী, হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মুন্সি মো. মশিয়ার রহমান, আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার জেনারেল সাইফুর রহমান, জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ আসশামস জগলুল হোসেন, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নাজমুল হক শ্যামল, চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ফারহানা ফেরদৌস, জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ, পুলিশ সুপার গোলাম মোস্তফা রাসেল, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি হাসান ফেরদৌস, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মোহসীনসহ বিচারক, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।