বগুড়া প্রতিনিধি : প্রথমে রাতের অন্ধকারে বিদ্যুতের মিটার চুরি। পরে ওই স্থানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় একটি কাগজ। সেখানে লেখা থাকে ‘মিটার পাবে’। এর নিচে জুড়ে দেওয়া হয় মুঠোফোন নম্বর। পরে ওই নম্বরে বিকাশের মাধ্যমে চাহিদামতো টাকা পাঠানো হলে চুরি হওয়া মিটারটি আবার মালিকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বগুড়ার ধুনট উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের শিল্প মিটার চুরি করে এভাবে চাঁদা আদায় করছে সংঘবদ্ধ একটি চক্র।
মিটার ফেরত পেতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের তিন থেকে সাত হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হচ্ছে। অনেকে আবার নিয়মিত চাঁদা দিয়ে মিটার চুরির হাত থেকে রক্ষা করছেন। ধুনট উপজেলা পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের হিসাব অনুযায়ী, গত ১ মাসে ১৫ থেকে ২০ জন গ্রাহকের মিটার চুরি হয়েছে। পরে মিটারের মালিক ওই নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করে টাকা দিয়ে আবার মিটার ফেরত পেয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার রাতে ধুনট সদর ইউনিয়নের চালাপাড়া গ্রামের গোলাম মোস্তফা, আবদুল লতিফের চালকল ও মাটিকোড়া গ্রামের আবদুল হামিদের কারখানা থেকে বৈদ্যুতিক মিটার চুরি করা হয়। চুরি হওয়া তিনটি মিটারের স্থানেই বিকাশ নম্বর ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত মিটারের মালিকেরা পরদিন সকালে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁরা একেকজন ছয় থেকে সাত হাজার টাকা বিকাশ নম্বরে পাঠিয়ে মিটারগুলো ফেরত পেয়েছেন।
উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের পিপুল বাড়ি গ্রামের সোলাইমান আলী মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার মিটার চুরির পর সেখানে একটি কাগজ পেয়েছিলাম। সেখানে “মিটার পাবে” লেখা ছিল। পরে আমি এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ দিই। তবে এ খবর পেয়ে দুর্বৃত্তরা আমাকে মুঠোফোনে হুমকি দেয়। পরে ক্ষতির ভয়ে ছয় হাজার টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছি।’ একই ইউনিয়নের পাঁচথুপি গ্রামের আরও তিন গ্রাহক এভাবে টাকা দিয়ে চুরি হওয়া মিটার ফেরত পেয়েছেন বলে তিনি দাবি করেন।
উপজেলার চালাপাড়া গ্রামের চালকলমালিক গোলাম মোস্তফা বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে থ্রি ফেজের একটি শিল্প মিটার পেতে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়। কয়েক দিন আগে আমার চালকল থেকে একটি শিল্প মিটার চুরি হয়। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে চোর চক্রের দেওয়া বিকাশ নম্বরে তিন হাজার টাকা দিয়ে মিটারটি উদ্ধার করা হয়েছে।
ধুনট পল্লী বিদুৎ অফিস সূত্রে জানা গেছে, চালকল, করাতকল, ইটভাটা কিংবা গভীর নলকূপ, যেখানে বিদ্যুৎ বেশি লাগে, সেখানে ‘থ্রি ফেজের’ মিটার ব্যবহার করা হয়। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে এ ধরনের ৩৭৫টি শিল্প মিটার আছে। এর মধ্যে গত এক মাসে বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান থেকে ১৫ থেকে ২০টি শিল্প মিটার চুরি হয়েছে। পরে গ্রাহকের মধ্যে অনেকেই টাকা দিয়ে মিটরগুলো ফেরত এনেছেন। তবে চুরির পর মিটারগুলো ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তাই বিদ্যুৎ অফিস থেকে পরে গ্রাহকদের বিনা মূল্যে মিটার সরবরাহ করা হয়েছে।
ধুনট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির উপমহাব্যবস্থাপক মাহবুব জিয়া বলেন, চুরির পর বিকাশ নম্বরে টাকা আদায় করে মিটার ফেরতের ঘটনা শুধু ধুনটেই নয়। পুরো জেলার বিভিন্ন উপজেলায় একটি চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়ে চলছে। গত এক মাসে ১৫ থেকে ২০টি চুরির ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি মিটারের মূল্য ১৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। তবে গ্রাহকেরা টাকা দিয়ে মিটারগুলো ফেরত আনলেও সেটা আর প্রতিস্থাপন করা যায় না। পরীক্ষা করার জন্য ঢাকায় পাঠাতে হয়। গ্রাহদের ক্ষতির কথা চিন্তা করে তাঁদের বিনা মূল্যে নতুন মিটার দেওয়া হচ্ছে। এতে সামগ্রিকভাবে গ্রাহক ও পল্লী বিদুৎ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই নম্বরগুলো পুলিশের কাছে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের চেষ্টা চলছে।
এ বিষয়ে ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, সর্বশেষ গতকাল বুধবার সকালে দুই ব্যবসায়ী তাঁদের মিটার চুরির বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেন। তবে এ বিষয়ে থানা থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই তাঁরা দুর্বৃত্তদের টাকা দিয়ে মিটার ফেরত নিয়েছেন। পরে তাঁরা থানা থেকে অভিযোগ প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। তবে চুরির পর কাগজে লিখে দেওয়া মুঠোফোন নম্বরের সূত্র ধরে এ বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। সেই সঙ্গে চক্রটিকে আটকের চেষ্টা করা হচ্ছে।