ব্যাংকের কাছে উদ্বৃত্ত টাকা দ্রুত কমছে

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : ব্যাংকগুলোর কাছে থাকা টাকা কমছে দ্রুত। গত নভেম্বর শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য কমে ১ লাখ ৪১ হাজার কোটি টাকায় নেমেছে। আগের মাস অক্টোবর শেষে যা ছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৩২ কোটি টাকা। আর গত জুন শেষে ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ২৭২ কোটি টাকা। ব্যাংক খাতে সর্বোচ্চ ২ লাখ ৩২ হাজার কোটি টাকার উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ২০২১ সালের জুনে। উদ্বৃত্ত তারল্য কমার মানে, অনেক ব্যাংক এখন চরম তারল্য সংকটে রয়েছে।

ব্যাংকের উদ্বৃত্ত তারল্য মানেই ঋণযোগ্য তহবিল নয়। বরং ট্রেজারি বিল ও বন্ডের বিনিয়োগ থেকে সহজে বিনিময়যোগ্য সম্পদ (এসএলআর) সংরক্ষণের অতিরিক্ত অংশ উদ্বৃত্ত তারল্য হিসেবে বিবেচিত হয়। বিল ও বন্ড বন্ধক রেখে ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে রেপো, স্পেশাল রেপোসহ বিভিন্ন উপায়ে স্বল্পমেয়াদি ধার নিতে পারে। তারল্য সংকটে পড়ে অনেক ব্যাংক এখন বিধিবদ্ধ নগদ জমা (সিআরআর) ও এসএলআর রাখতে ব্যর্থ হয়ে জরিমানা গুনছে। মূলত আমানতকারীর সুরক্ষা বিবেচনায় প্রতিটি ব্যাংককে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বিধিবদ্ধ তারল্য সংরক্ষণ করতে হয়। পুরো ব্যাংক খাতে পর্যাপ্ত তারল্য না থাকায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দ্বারস্থ হচ্ছে।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিভিন্ন ব্যাংক ২০ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা ধার নিয়েছে। আগের দিন ধারের পরিমাণ ছিল ১৩ হাজার ৪২২ কোটি টাকা। বিভিন্ন মেয়াদি বিল ও বন্ড লিয়েন করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে স্বল্পমেয়াদি ধারের স্থিতি ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি। এর বাইরে কোনো ধরনের উপকরণ ছাড়াই গত সপ্তাহে কয়েকটি ব্যাংককে ২২ হাজার কোটি টাকা ধার দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। এর বাইরে আন্তঃব্যাংকে বিভিন্ন মেয়াদে লেনদেন হয়। তবে এখন বেশির ভাগ ব্যাংকের হাতে পর্যাপ্ত নগদ টাকা না থাকায় কলমানিসহ আন্তঃব্যাংকে লেনদেন হচ্ছে খুব সামান্য। গতকাল আন্তঃব্যাংকে মোট ৪ হাজার ৯৮৯ কোটি টাকা লেনদেন হয়। এর মধ্যে এক দিন মেয়াদি কলমানিতে গড়ে ৯ দশমিক ২১ শতাংশ সুদে লেনদেন হয়েছে ৩ হাজার ৮২৭ কোটি টাকা। কলমানিতে সর্বোচ্চ সুদ উঠেছিল ৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। আন্তঃব্যাংকে গতকাল সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদে ৯১ দিন মেয়াদি ধার করেছে ১৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, ডলার সংকট মেটাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলার বিক্রির বিপরীতে বাজার থেকে প্রচুর টাকা উঠিয়ে আনছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি নেওয়া হয়েছে। এতে করে সরকারকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরাসরি ঋণ না দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে তুলতে হচ্ছে। কিছু ব্যাংকের ক্ষেত্রে আস্থাহীনতা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে।

Share