নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানকে একঘরে করলেন সিনেমার মানুষেরা। আজ বুধবার দুপুরে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠন মিলে এই সিদ্ধান্ত নেয়। এখন থেকে চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠানে জায়েদকে কেউ আমন্ত্রণ জানাতে পারবেন না, তিনিও কোনো অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারবেন না। যে আমন্ত্রণ করবেন, তাঁকেও একঘরে করবে ১৮ সংগঠন। একই সঙ্গে মিশার বিরুদ্ধেও কঠোর অবস্থানের কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের জহির রায়হান কালার ল্যাব মিলনায়তনে এ নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্রের ১৮ সংগঠনের নেতারা। সেখানে জায়েদ খানের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ তুলে ধরেন সংগঠনগুলোর নেতারা। সেখানে বলা হয়, শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কাজ না করে ব্যক্তি স্বার্থে নিজের পরিচয় ব্যবহার করেছেন। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার জানান, জায়েদকে একঘরে করার ফলে কোনো প্রযোজক ও পরিচালক জায়েদকে নিয়ে কোনো কাজ করতে পারবেন না। কারও সঙ্গে নিজের ইচ্ছায় কাজ করতে চাইলেও কেউ তা করতে পারবেন না।
নানা কারণে সমালোচিত জায়েদ খানকে ‘বয়কট’ করার পেছনে সুনির্দিষ্ট কিছু অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে চলচ্চিত্র পরিবার। মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘চলচ্চিত্রের শৃঙ্খলা ও নির্মাণ ব্যয় কমিয়ে আনতে এ বছরের শুরুতে সব সংগঠন মিলে চলচ্চিত্র নির্মাণ নীতিমালা প্রণয়ন কমিটি গঠন করে। চলচ্চিত্রের সব সমিতি এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানালেও শিল্পী সমিতি ব্যক্তি স্বার্থের কারণে এর বিরোধিতা করে। আমরা তাদের বোঝানোর জন্য কয়েকবার মিটিং করি। শিল্পী সমিতির উপদেষ্টা কমিটিতে আছেন এমন সিনিয়র শিল্পীদের মাধ্যমে বোঝানোর চেষ্টা করলেও তাঁরা কমিটির বিরোধিতা করেন। বিশ্বস্ত সূত্রে চলচ্চিত্র পরিবার জানতে পেরেছে, এই নীতিমালা কমিটির সবচেয়ে বেশি বিরোধিতা করেছেন জায়েদ খান। তাঁর কারণেই শিল্পী সমিতির কমিটির অন্য সদস্যরা এ নীতিমালা মেনে নিতে পারছেন না।’
চলচ্চিত্র পরিবারের দাবি, জায়েদ খান অন্য শিল্পীদের হয়রানি করেন, মিথ্যা মামলার ভয় ও ক্ষমতার দাপট দেখান। তাঁর কাজের সমালোচনাকারীকে সমিতির সদস্যপদ বাতিলসহ নানাভাবে ক্ষতির চেষ্টা করেন। চিত্রনায়ক সালমান শাহর ছবির নৃত্য পরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘১৪ বছর বয়স থেকে এফডিসিতে কাজ করি। এখন আমার বয়স ৫৪। ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে জায়েদ খান আমার সদস্যপদ বাতিল করেছেন। লোক দিয়ে আমাকে অপদস্থও করেছেন।’ জায়েদের এ রকম আরও বহু অপকর্মের অভিযোগ চলচ্চিত্র পরিবার পেয়েছে। এ প্রসঙ্গে গুলজার বলেন, সরকারপ্রধানের গঠনমূলক সমালোচনা করা যায়, অথচ জায়েদ খানের সমালোচনা করা যাবে না কেন?
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ২০১৯ সালের চলচ্চিত্র দিবস সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের খরচের জন্য ছয় লাখ টাকা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সরাসরি গ্রহণ করেন জায়েদ খান। জাতীয় কমিটির মাধ্যমে গঠিত অর্থসংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বাচ্চু পরে জায়েদ খানকে বারবার চিঠি দিয়ে ওই টাকার হিসাব চাইলে তিনি হিসাব দেননি, এমনকি কোনো সভাতেও উপস্থিত থাকেননি।
সংবাদ সম্মেলন শেষে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘শিল্পী থেকে শুরু করে চলচ্চিত্রের অনেকেরই জায়েদ খানের বিরুদ্ধে নানা রকম অভিযোগ। চলচ্চিত্রের বিভিন্ন সংগঠন থেকে তাঁকে বারবার সতর্ক করা হয়েছে। নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তিনি গুরুত্বই দেননি। চলচ্চিত্রের স্বার্থের কথা চিন্তা করে, চলচ্চিত্রের ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে সবাই মিলে তাই এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এতে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির অন্য সদস্যের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। আমরা সংগঠনের বিরুদ্ধে নই, সংগঠনের নাম ভাঙিয়ে চলা ব্যক্তির বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। মিশা সওদাগরকে নিয়েও যাতে কোনো প্রযোজক কাজ না করেন, সে ব্যাপারে আমাদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন পরিচালক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন, প্রযোজক সমিতির সেক্রেটারি শামসুল আলম, ফিল্ম ক্লাবের পক্ষ থেকে ওমর সানী, অমিত হাসান প্রমুখ।