রেমিট্যান্সের ডলার ১১৫ টাকার উর্ধে কেনা যাবে না

রিজার্ভ রয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : রেমিট্যান্সের ডলার ১১৫ টাকার উর্ধে কেনা যাবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আবারও এমন নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ডলার সংকট মোকাবেলায় বিদেশি এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো রেমিট্যান্সের ডলার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের বাইরে ১২ থেকে ১৪ টাকা বেশি দরে কেনা শুরু করে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও বাধ্য হয়ে প্রতিযোগিতা মূলক দরে সর্বোচ্চ ১২২ থেকে ১২৩ টাকায় ডলার কিনতে শুরু করে। ফলে ডলারের এই ঊর্ধ্বমুখী দর রোধে কেন্দ্রীয় ব্যাংক আবারও দাম বেঁধে দিয়েছে। এখন থেকে সব প্রণোদনাসহ সর্বোচ্চ ১১৫ টাকার বেশি দরে ডলার কেনা যাবে না। ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। অন্যদিকে গত সোমবার এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন আকুর বিল বাবদ ১২১ কোটি ডলার পরিশোধের পরেও বর্তমানে বিপিএম ৬ অনুসারে রিজার্ভের পরিমাণ রয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গতকাল বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে।

গত ৮ নভেম্বর বুধবার সন্ধ্যায় ব্যাংকের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) ও বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে কোন কথা বলতে চাননি আর্থিক প্রতিষ্ঠান দুটির কর্তারা। বৈঠক সূত্রে জানা যায়, গত বুধবার এক্সচেঞ্জ হাউসগুলো সর্বোচ্চ ১২৪ টাকা দরে রেমিট্যান্সের ডলার কেনার কথা জানিয়েছে। যা সরকারি নির্ধারিত ১১০ টাকা ৫০ পয়সা হারের চেয়ে ১৩ দশমিক ৫০ টাকা বেশি। এর ফলে ডলারের বাজারে আরও বেশি অস্থিরতা তৈরি হয়। এ অবস্থা নিয়ন্ত্রণে নতুন এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। এখন থেকে এবিবি ও বাফেদা বেঁধে দেওয়া প্রবাসী আয়ের প্রতি ডলারের দাম ১১০ টাকা ৫০ পয়সার বাইরে সর্বোচ্চ ১১৫ টাকার বেশি দরে কেনা যাবে না।

এদিকে এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়ন আকুর বিল পরিশোধের পরেও বর্তমানে বিপিএম ৬ অনুসারে রিজার্ভের পরিমাণ রয়েছে ২০ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার। গতকাল বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। গত সোমবার আকুর মাধ্যমে সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসের আমদানি বিল বাবদ ১২১ কোটি ডলার বাংলাদেশ ব্যাংক পরিশোধ করেছে। গত মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংক আকুর পরিশোধিত বিল সমন্বয়ের পর রিজার্ভের সর্বশেষ চিত্র প্রকাশ করেছে। সাধারণত প্রতি সপ্তাহে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চালন বা রিজার্ভ দুই থেকে আড়াই কোটি ডলার কমছে। কিন্তু দুই মাস পর পর আকুর ১ বিলিয়নের বেশি দায় মেটাতে হয়। গত সোমবার সেপ্টেম্বর-অক্টোবর দুই মাসের বিল পরিশোধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, গত ৩১ অক্টোবর দেশে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ২৬ দশমিক ৪৭ বিলিয়ন ডলার বা ২ হাজার ৬৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৫০ হাজার ডলার। আইএমএফের শর্ত অনুযায়ী, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থেকে গঠিত তহবিলের অর্থ ৫ দশমিক ৭৬ বিলিয়ন ডলার বাদ দিলে নিট রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ২০ দশমিক ৭১ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ বিপিএম-৬ ম্যানুয়াল অনুযায়ী গ্রস রিজার্ভ ছিলো ২০ দশমিক ৭১ বিলিয়ন। এখান থেকে আকুর বিল পরিশোধের পর দেশের রিজার্ভ কমে ১৯ দশমিক ৫০ বিলিয়ন ডলারে নামে। তবে বৃহস্পতিবার এর সাথে সর্বশেষ আসা রেমিট্যান্স যোগ হওয়ায় রিজার্ভের পরিমাণ দাঁড়ায় ২০ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার।

উল্লেখ্য, রেমিট্যান্স, রপ্তানি আয়, বিদেশি বিনিয়োগ, বিভিন্ন দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার ঋণ থেকে যে ডলার পাওয়া যায়, তা দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ তৈরি হয়। আবার আমদানি ব্যয়, ঋণের সুদ বা কিস্তি পরিশোধ, বিদেশি কর্মীদের বেতন-ভাতা, পর্যটক বা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনাসহ বিভিন্ন খাতে যে ব্যয় হয়, তার মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রা চলে যায়। এভাবে আয় ও ব্যয়ের পর যে ডলার থেকে যায় সেটাই রিজার্ভে যোগ হয়। আর বেশি খরচ হলে রিজার্ভ কমে যায়। সম্প্রতি বৈশ্বিক উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে বৈদৈশিক মুদ্রায় টান পড়ে। সেই সাথে কমতে থাকে প্রবাসী আয়। সরকারের জ্বালানি, খাদ্য আমদানি ও বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ করতে হয় রিজার্ভ থেকে। এর ফলে আশঙ্কাজনকভাবে কমতে থাকে রিজার্ভ। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর গত বছরের মার্চ থেকে দেশে ডলার-সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। যা এখনো অব্যাহত আছে। এ সংকট দিন দিন বাড়ছে। বাজারে ‘স্থিতিশীলতা’ আনতে রিজার্ভ থেকে নিয়মিত ডলার বিক্রি করে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। চলতি অর্থবছরে এরই মধ্যে সাড়ে ৪ বিলিয়ন ডলারের মতো বিক্রি করা হয়েছে। ফলে ধারাবাহিকভাবে কমছে অর্থনীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর সূচকটি। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বেশকিছু বিষয়ে নির্দিষ্ট শর্ত দিয়ে বাংলাদেশকে ৪৭০ কোটি মার্কিন ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে চলতি বছরের জানুয়ারির শেষের দিকে। এই ঋণের প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬২ লাখ ৭০ হাজার ডলার গত ফেব্রুয়ারিতে পায় বাংলাদেশ। এই শর্তের মধ্যে অন্যতম ছিল জুনে প্রকৃত রিজার্ভ ২ হাজার ৪৪৬ কোটি ডলার। সেপ্টেম্বরে তা ২ হাজার ৫৩০ ডলার এবং ডিসেম্বরে ২ হাজার ৬৮০ ডলারে রাখার কথা ছিল। কিন্তু পরে এসব শর্ত শিথিল করেছে সংস্থাটি। তারপরও প্রত্যাশিত রিজার্ভ রাখা নিয়ে অনিশ্চয়তা কাটেনি।

Share