রেমিট্যান্স বেশি আসছে আরব আমিরাত থেকে

পিছে পড়েছে সৌদি আরব

নয়াবার্ত‍া প্রতিবেদক : চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে আরব আমিরাত থেকে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। আরব আমিরাতে বসবাসকারী প্রবাসীরা জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে ৮৩ কোটি ২৬ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স বাংলাদেশে পাঠিয়েছেন। আর সৌদি আরব থেকে এসেছে ৮১ কোটি ৭২ লাখ ডলার। এক্ষেত্রে সৌদি আরব থেকে আসা রেমিট্যান্স প্রবাহে ভাটা পড়েছে। অথচ গত দুই অর্থবছর দেশে সবচেয়ে বেশি রেমিট্যান্স আসে সৌদি আরব থেকে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব বলছে, এই তিন মাসের দুই মাসেই সৌদির চেয়ে আরব আমিরাত থেকে বেশি রেমিট্যান্স এসেছে দেশে। সর্বশেষ সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবধান সবচেয়ে বেশি। এ মাসে আরব আমিরাত থেকে এসেছে ২৬ কোটি ৪০ লাখ ডলার। আর সৌদি আরব থেকে এসেছে ২১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে সৌদি আরবের চেয়ে আরব আমিরাত থেকে ১ কোটি ৫৪ লাখ ৩০ হাজার ডলার বেশি রেমিট্যান্স এসেছে। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, আরব আমিরাত থেকে প্রবাসীরা দেশে যে রেমিট্যান্স পাঠান, তার অধিকাংশ ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে পাঠান। ঐ দেশ থেকে অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠানোর সুযোগ অনেক কম। অথচ বরাবরই সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো থেকে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। ব্যাংকের চেয়ে কার্ব মার্কেটে ডলারের দাম অনেক বেশি হওয়ায় সম্প্রতি তা আরও বেড়ে গেছে। সে কারণেই সৌদি থেকে বৈধ পথে রেমিট্যান্স কমছে আর আরব আমিরাত থেকে বাড়ছে।

ব্যাংকগুলোতে এখন রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ে ডলারের মূল্য ১১০ টাকা। আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। আন্তঃব্যাংক ব্যবস্থায় ডলারের মূল্যও ১১০ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু খোলা মুদ্রাবাজারে ডলারের দর ১১৮ টাকা থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। যার কারণে প্রবাসীরা হুন্ডির মাধ্যমে রেমিট্যান্স পাঠাতে বেশি আগ্রহী হচ্ছেন। ফলে আনুষ্ঠানিক বা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ সূচক রেমিট্যান্স। বিষয়টি বিবেচনা করে এখন রেমিট্যান্সের ডলার বাড়তি আড়াই শতাংশ বেশি দামে কিনতে পারবে ব্যাংকগুলো। অর্থাৎ রেমিট্যান্স আনতে সরকারের আড়াই শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে এবার ব্যাংকগুলো আড়াই শতাংশ প্রণোদনা দিতে পারবে। এর ফলে প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠালে এখন থেকে প্রতি ডলারে ১১৫ টাকা করে পাবেন। ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সিদ্ধান্তের ফলে চলতি অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহেই রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রথম ৩ মাসে দেশে রেমিট্যান্স এসেছে ৬১৬ কোটি ৬৩ লাখ ৩০ হাজার ডলার। জুলাইয়ে রেমিট্যান্স এসেছে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার এবং আগস্টে রেমিট্যান্স এসেছে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। এক মাসের ব্যবধানে রেমিট্যান্স কমেছে ৩৭ কোটি ৩৭ লাখ মার্কিন ডলার। সেপ্টেম্বরে আসে ১৩৪ কোটি ৩৬ লাখ ৬০ হাজার ডলার। যা গত ৪১ মাসের মধ্যে সর্বনিম্ন। এর আগে ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে ১০৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। আর সর্বশেষ চলতি অক্টোবরের প্রথম ২০ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১২৫ কোটি ৭০ হাজার ডলার। মাস শেষে যার পরিমাণ ১৬০ কোটি ডলার পেরুতে পারে বলে ধরণা করা হচ্ছে। এছাড়া গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ ডলার। আগের ২০২১-২০২২ অর্থবছরে মোট রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৭ লাখ মার্কিন ডলার। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ হয়েছিল। যার পরিমাণ ছিল ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ মার্কিন ডলার।

Share