সংসদদের গণপরিবহনে নিরাপত্তা দেবে কে?

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : শব্দদূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে রাস্তায় অতিরিক্ত ব্যক্তিগত গাড়ি বের হওয়াকে দুষছেন পরিবেশবাদীরা। এ জন্য তাঁরা গণপরিবহনব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, গণপরিবহনে সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা চলাচল শুরু করলে এই পরিবহনব্যবস্থায় পরিবর্তন আসতে পারে। তবে এমন প্রস্তাব শুনে ক্ষমতাসীন দলের এক নারী সংসদ সদস্য গণপরিবহনে তাঁদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন নামের এই সংসদ সদস্য বলেছেন, সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা গণপরিবহনে চলাচল করলে তাঁদের নিরাপত্তা দেবেন কে? নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় অবশ্য তিনি বলেছেন, তাঁরা লোকজনের শতভাগ দাবিদাওয়া পূরণ করতে পারেন না। তাই নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থেকে যাচ্ছে।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিমূলক প্রকল্পের আওতায় আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে সচেতনতামূলক মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই বক্তাদের বক্তব্যে এসব কথা উঠে আসে। এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়। খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য।

এই প্রকল্পে জরিপ ও মতবিনিময় সভার কার্যক্রমে সার্বিক সহযোগিতায় আছে ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড এবং বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)।

মতবিনিময় সভায় পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) চেয়ারম্যান আবু নাসের খান বলেন, ‘বায়ু দূষণ ও শব্দদূষণের প্রধান উৎস পরিবহন। রাজধানীতে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ জায়গা ব্যক্তিগত গাড়ির দখলে থাকে। ব্যক্তিগত গাড়ির সংখ্যা বেশি হওয়ার কারণে রাজধানীতে যানজট লেগেই থাকে। যানজটে থেকে চালকদের মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়। তাঁরা অপ্রয়োজনেও হর্ন দিয়ে শব্দ দূষণ করছেন। তাই ভালো একটা গণপরিবহন পদ্ধতিতে অবশ্যই আমাদের যেতে হবে। এটা করা গেলে কেবল বায়ু দূষণ নয়, শব্দদূষণও কমে আসবে।’

ভালো গণপরিবহনব্যবস্থা চালু করতে সেভাবে কাজ হচ্ছে না উল্লেখ করে আবু নাসের খান বলেন, এর দায়দায়িত্ব সবাইকে নিতে হবে। পাশাপাশি সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা যতক্ষণ পর্যন্ত গণপরিবহনে চলাচল না করবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত এই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসবে না বলেও মনে করেন তিনি।

আবু নাসের খান যখন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীদের গণপরিবহনে চলাচলের পরামর্শ দিয়ে বক্তব্য দিচ্ছিলেন, তখন পাশেই বসে ছিলেন সংসদ সদস্য খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন। এরপর প্রধান অতিথির বক্তব্যে এই বিষয়ে কথা বলেন খোদেজা নাসরিন আক্তার। তিনি বলেন, ‘অনেকেই বলেছেন রাজধানীতে গাড়ির আধিক্য বেশি। সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীরা গাড়িতে চলবেন। আমাদের নীতিনির্ধারকদের নিরাপত্তা দেবেন কে? কারণ, এখানে রোষানলে পড়াটাই স্বাভাবিক। কারণ, শতভাগ লোকের দাবিদাওয়া আমরা পূরণ করতে পারব না।’

শব্দদূষণের প্রত্যক্ষ শিকার সাধারণ জনগণ উল্লেখ করে এই নারী সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘শব্দদূষণ একটি নীরব ঘাতক। জলবায়ু অভিযোজনের জন্য আমরা যেভাবে কাজ করছি, ঠিক একইভাবে শব্দদূষণ নিয়ে কাজ করতে হবে। শব্দদূষণ কারা করছে, তা নির্ণয় করে আমরা ডিজিটাল প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারি।’

মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্যে স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, ‘শব্দদূষণসহ পরিবেশদূষণ রোধে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত আইন রয়েছে, তবে আইনের প্রয়োগ হোক সর্বশেষ পদক্ষেপ এবং সচেতনতাই হোক সর্বপ্রথম পদক্ষেপ।’

সভাপতির বক্তব্যে স্থপতি মোহাম্মদ আলী নকী বলেন, ‘শব্দ একটি আঘাতসৃষ্ট বাস্তব ঢেউ। এই ঢেউ অসহনীয় পর্যায়ে গেলে তা শব্দদূষণে পরিণত হয়। এই ঢেউয়ের ভেতর একজন মানুষ কত সময় বা কত দিন ধরে অবস্থান করছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ। এটির ওপর নির্ভর করে মানুষের স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটা বেশি। শব্দদূষণ রোধে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে।’

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের (ডিটিসিএ) অতিরিক্ত নির্বাহী পরিচালক মোহাম্মদ রবিউল আলম বলেন, সরকারের এনফোর্সমেন্ট কর্তৃপক্ষকে শব্দমাত্রা পরিমাপক যন্ত্র প্রদান করতে হবে। তাঁরা যেন শব্দের তীব্রতা পরিমাপ করে পদক্ষেপ নিতে পারেন। এ ছাড়া তিনি শব্দদূষণ রোধে রাস্তার পাশে সাউন্ড বেরিয়ারের জন্য গাছ লাগানোর পরামর্শ দেন।

‘অতিরিক্ত শব্দদূষণের ফলে আমরা ধীরে ধীরে বধির জাতিতে পরিণত হচ্ছি’ জানিয়ে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, ‘নেপাল যদি হর্নমুক্ত সিটি ঘোষণা করতে পারে, তবে আমরা কেন পারি না?’এ ছাড়া তিনি প্রতিটি গাড়িতে শব্দদূষণ মনিটরিংয়ের জন্য একটি করে ট্র্যাকিং ডিভাইস স্থাপন করে তার অ্যাকসেস ট্রাফিক বিভাগকে প্রদান করার পরামর্শ দেন।

Share