আদালত প্রতিবেদক : নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা–সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের দুটি ধারা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে সংবিধান সংশোধনের ক্ষেত্রে গণভোটের বিধান পুনর্বহাল এবং আইনের আরও চারটি ধারা বাতিল করেছেন আদালত।
বহুল আলোচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলোপসহ বেশ কিছু বিষয়ে ১৩ বছর আগে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী আনা হয়েছিল। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন ও আইনের কয়েকটি ধারার বৈধতা নিয়ে করা পৃথক রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল মঙ্গলবার এ রায় দেন।
পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে ৫৪টি ক্ষেত্রে সংযোজন, পরিমার্জন ও প্রতিস্থাপন আনা হয়েছিল। আর ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারার মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। রায়ে আদালত বলেছেন, ওই ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে, যেটি হচ্ছে গণতন্ত্র।
ওই দুটিসহ আইনের ৪৭ ধারা এবং পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সংবিধানে যুক্ত ৭ক, ৭খ এবং ৪৪ (২) অনুচ্ছেদ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি বিধানগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আগামী জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন আদালত। রায়ে আদালত বলেছেন, ২০১১ সালের পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের বাকি ধারাগুলো সংশোধন, সংযোজন, প্রতিস্থাপন ও বিলোপ ইত্যাদি বিষয়ে আইন অনুসারে পরবর্তী সংসদ সিদ্ধান্ত নিতে পারে।
সংবিধানে জাতির জনক ও ৭ মার্চের ভাষণসহ কয়েকটি ধারার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ভার আদালত সংসদের জন্য ‘রেখে দিয়েছেন’ বলে জানান অন্যতম রিট আবেদনকারী বদিউল আলম মজুমদার। সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম প্রথম আলোকে বলেন, আদালত বিষয়টি রাজনীতিবিদদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত প্রজ্ঞাবান সিদ্ধান্ত। আদালত তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে সংবিধানের মূল কাঠামো হিসেবে উল্লেখ করেছেন। হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে বহাল থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা কেউ বাদ দিতে পারবে না। কর্তৃত্ববাদী সরকারব্যবস্থাও প্রতিষ্ঠিত হবে না।
রায়ের পর অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকার সাংবিধানিকভাবেই বৈধ সরকার। এর (অন্তর্বর্তী সরকার) সঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাংঘর্ষিক অবস্থান নেই। কার অধীনে নির্বাচন হবে, এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ত্রয়োদশ সংশোধনী নিয়ে রিভিউর সিদ্ধান্তের পর এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে। এ ক্ষেত্রে ত্রয়োদশ সংশোধনীর রায়ের আগে আপিল বিভাগ পরপর দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অধীনে করার সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন। গত তিনটি নির্বাচন নির্বাচন নয়, ভোট ডাকাতি হয়েছে। যে কারণে আপিল বিভাগের আগের সিদ্ধান্ত অনুসরণ করে আগামী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে হতে বাধা নেই।
প্রসঙ্গত, আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ ২০১১ সালের ১০ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতামতের ভিত্তিতে সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী (তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা) বাতিল ঘোষণা করে রায় দেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিক ও এক ব্যক্তির করা পৃথক চারটি আবেদন আগামী ১৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগে শুনানির জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
পঞ্চদশ সংশোধনী রিট:- আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১১ সালের ৩০ জুন জাতীয় সংসদে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন পাস হয়। ২০১১ সালের ৩ জুলাই এ-সংক্রান্ত গেজেট প্রকাশ করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইন চ্যালেঞ্জ করে গত ১৮ আগস্ট সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট ব্যক্তি রিট করেন। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট গত ১৯ আগস্ট রুল দেন। রুলে পঞ্চদশ সংশোধনী আইন কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
এই রুলে ইন্টারভেনার (আদালতকে সহায়তাকারী) হিসেবে বিএনপি, গণফোরাম, জামায়াতে ইসলামী এবং একটি বেসরকারি সংস্থা ও কয়েকজন ব্যক্তি যুক্ত হন। এরপর পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৬টি ধারার বৈধতা নিয়ে নওগাঁর রানীনগরের নারায়ণপাড়ার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. মোফাজ্জল হোসেন গত অক্টোবরে আরেকটি রিট করেন। এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২৯ অক্টোবর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে আইনের ওই ধারাগুলো কেন সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। রুলের ওপর ৪ ডিসেম্বর শুনানি শেষ হয়। পরদিন আদালত রায়ের জন্য ১৭ ডিসেম্বর (গতকাল) তারিখ ধার্য করেন।
গতকাল সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে রায় ঘোষণা শুরু হয়ে পৌনে একটার দিকে শেষ হয়। পর্যবেক্ষণসহ রুল আংশিক যথাযথ (অ্যাবসলিউট) ঘোষণা করে রায় দেন আদালত। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন। পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের করা রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়া ও আইনজীবী রিদুয়ানুল করিম উপস্থিত ছিলেন। বদিউল আলম মজুমদারও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া বিএনপির পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জয়নুল আবেদীন ও মো. রুহুল কুদ্দুস এবং আইনজীবী কায়সার কামাল ও ফারজানা শারমীন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। জামায়াতের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।
গণতন্ত্র এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংবিধানের অংশ:- রায়ে হাইকোর্ট বলেছেন, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ঘোষণা করেছিলেন আপিল বিভাগ। ২০১১ সালের ১০ মে সংক্ষিপ্ত আদেশে আপিল বিভাগ ওই ব্যবস্থার অধীনে পরবর্তী দুটি (দশম ও একাদশ) জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে উল্লেখ করেন। আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত হয়, ১৬ মাস পরে। ২০১১ সালের ৩০ জুন পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারার মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বিলুপ্ত করা হয়। পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ওই দুটি ধারা সংক্ষিপ্ত আদেশের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
বিভিন্ন নজির ও রায় পর্যালোচনা করে আদালত বলেন, জনগণ সার্বভৌম সংবিধানের অন্যতম মূল কাঠামো। সংবিধান সর্বোচ্চ আইন। জনগণ সংবিধানের ক্ষমতার উৎস। জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানের মূলনীতি। গণতন্ত্র সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। সময়ের পরিক্রমায় এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন সংবিধানের অংশ।
নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার মৌলিক কাঠামো হিসেবে আসে:- নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা মূল সংবিধানে ছিল না বলে রায়ে উল্লেখ করেছেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেছেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে এটি সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত হয়। বড় রাজনৈতিক দলগুলোর ঐকমত্য, জনগণ ও সুশীল সমাজের দাবির মধ্য দিয়ে ওই পদ্ধতি মৌলিক কাঠামো হিসেবে সংবিধানে আসে ১৯৯৬ সালে। নজির তুলে ধরে আদালত বলেন, জাতীয় সংসদের সংবিধান সংশোধন করার ক্ষমতা আছে, তবে এ ক্ষমতা সংবিধানের বাইরে গিয়ে নয়।
বিগত তিন নির্বাচন জনগণের আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ:- রায়ে আদালত বলেন, পঞ্চদশ সংশোধনীর বিধানের মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত করার ফলে তিনটি জাতীয় নির্বাচন (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে) নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হয়, যা জনগণের আস্থার প্রতিফলন ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে। সর্বশেষ দেশে গণ–অভ্যুত্থান হয়েছে। এতে হাজারো মানুষের আত্মদান, হাজারো মানুষ স্থায়ীভাবে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে বিগত সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয় সংবিধানের ১০৬ অনুচ্ছেদ অনুসারে আপিল বিভাগের রেফারেন্সের ভিত্তিতে এবং জনগণের অভিপ্রায়ে। এখন জাতির প্রত্যাশা, এমন একটি পদ্ধতি প্রতিষ্ঠা করা, যেটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন, নতুন গণতন্ত্র, নতুন স্বাধীনতা ও নতুন বাংলাদেশ কার্যকরভাবে নিশ্চিত করবে।
রায়ের পর্যবেক্ষণ:- পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ২০ ও ২১ ধারা বাতিল ঘোষণা করে রায়ে আদালত বলেছেন, ধারা দুটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের পর ৭ক ও ৭খ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যা পরিষ্কারভাবে সংবিধানের ৭ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক, যেখানে জনগণের ইচ্ছা, সংবিধানের শ্রেষ্ঠত্বসহ স্বাধীনতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ৭ক ও ৭খ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে বাতিল ঘোষণা করা হলো।
প্রসঙ্গত, ৭ক অনুচ্ছেদে সংবিধান বাতিল, স্থগিতকরণ ইত্যাদি অপরাধ এবং ৭খ সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন–অযোগ্য করার কথা বলা ছিল। বিদ্যমান ৭ক অনুচ্ছেদে কোনো ব্যক্তি শক্তি প্রদর্শন বা শক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বা অন্য কোনো অসাংবিধানিক পন্থায় সংবিধানের কোনো অনুচ্ছেদ রদ, বাতিল বা স্থগিত করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ বা ষড়যন্ত্র করলে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধে দোষী হবেন বলে উল্লেখ রয়েছে।
গণভোটের বিধান পুনর্বহাল:- পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারার মাধ্যমে সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়েছিল। ধারাটি বাতিল ঘোষণা করে রায়ে আদালত বলেন, গণভোটের বিধান বিলুপ্ত করা হয়, যা সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের অংশ ছিল। ১৯৯১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে যুক্ত হয়। সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদের গণভোটের বিধান বিলুপ্তি-সংক্রান্ত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ৪৭ ধারা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। ফলে দ্বাদশ সংশোধনী আইনের ১৪২ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করা হলো।
৪৪(২) বিধান বাতিল:- বিদ্যমান সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদে মৌলিক অধিকার বলবৎকরণ বিষয়ে বলা আছে। ৪৪(২) অনুচ্ছেদ বলছে, ‘এই সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদের অধীন হাইকোর্ট বিভাগের ক্ষমতার হানি না ঘটিয়ে সংসদ আইনের দ্বারা অন্য কোনো আদালতকে তাঁর এখতিয়ারের স্থানীয় সীমার মধ্যে ওই সকল বা এর যেকোনো ক্ষমতা প্রয়োগের ক্ষমতা দান করতে পারবেন।’
রায়ে আদালত বলেন, নির্বাহী ও আইনসভার কার্যক্রম বিষয়ে বিচারিক পুনর্বিবেচনার পূর্ণাঙ্গ ক্ষমতা হাইকোর্টের রয়েছে। আইনের সংশোধন বাতিল করার ক্ষমতাও আছে, যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোকে স্পর্শ করে। হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধানের অভিভাবক, দেশের সর্বোচ্চ আইন। আইনসভা ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সংশোধনের মাধ্যমে অন্য আদালতকে ক্ষমতা চর্চা করার সুযোগ দিয়েছে। যা সংবিধানের ১০২(১) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সরাসরি সাংঘর্ষিক। যে কারণে ৪৪(২) অনুচ্ছেদ সম্পর্কিত পঞ্চদশ সংশোধনী আইনের ১৮ ধারা (সংবিধানের ৪৪ অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপনসংক্রান্ত) বাতিল ঘোষণা করা হলো।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে বড় বাধা দূর হলো:- বদিউল আলম মজুমদারসহ পাঁচ বিশিষ্ট নাগরিকের করা রিটের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী শরীফ ভূইয়া। রায়ের পর তিনি বলেন, তাঁরা পঞ্চদশ সংশোধনী সম্পূর্ণ বাতিল চেয়েছিলেন। আদালত বেশ কয়েকটি ধারা বাতিল করলেও অন্যগুলো বাতিল করেননি। সেগুলো ভবিষ্যৎ সংসদের জন্য রেখে দিয়েছেন। ভবিষ্যৎ সংসদ জাতির প্রয়োজন অনুযায়ী সেগুলো রাখতে পারে অথবা বাতিল করতে পারে। এটা ঐতিহাসিক রায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরে আসার ক্ষেত্রে বড় বাধা দূর হলো।
শরীফ ভূইয়া বলেন, তবে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা এখনই ফিরে এসেছে, বলা যাবে না। কারণ, সেটা বাতিল করা হয়েছিল দুইভাবে। আদালতের রায় ও সংসদ কর্তৃক সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে। বদিউল আলম মজুমদার ও আরও চারজন এ বিষয়ে আপিল বিভাগে রিভিউ আবেদন করেছেন। জানুয়ারিতে শুনানি হবে। সেটা আবেদনকারীদের পক্ষে নিষ্পত্তি হলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফিরবে। যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ফেরে তা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।