নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণে কতটা এগিয়েছে বাংলাদেশ, তা পর্যবেক্ষণে দ্বিতীয় দফায় ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধিদল।
ঋণের প্রথম কিস্তি ৪৭০ কোটি ডলার ঋণ ছাড়ের পর আগামী নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় কিস্তির অর্থ ছাড় হওয়ার কথা রয়েছে।
আগামী ৫ অক্টোবর থেকে কয়েক দফায় শর্ত পূরণের বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও বিবিএসসহ সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে বসবে আইএমএফ।
আইএমএফের সফরকে সামনে রেখে ও শর্ত পূরণের সন্তোষজনক জবাব তৈরি করার পূর্বপ্রস্তুতি হিসেবে অর্থমন্ত্রণালয়ে বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে উপস্থিত ছিলেন এনবিআর, বাংলাদেশ ব্যাংক, জ্বালানি বিভাগ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
আন্তঃসভায় উপস্থিত এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আইএমএফকে শর্ত পূরণের অগ্রগতি সম্পর্কে জানাতে হবে। এ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে আমাদের রাজস্ব আদায়ে অগ্রগতি সন্তোষজনক। বিশেষ করে ভ্যাটে। এসময় সভায় ভ্যাট অটোমেশন ও ইএফডি মেশিন বসানোর অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়।
তিনি বলেন, আইএমএফের শর্ত পূরণের অংশ হিসেবে রাজস্ব আদায় বাড়াতে চলতি অর্থবছরের বাজেটে কিছু খাতের ভ্যাট অব্যাহতি তুলে দিয়েছে ভ্যাট বিভাগ। এছাড়া নতুন কিছু খাতে ভ্যাট আরোপ করা হয়েছে। বিষয়গুলো আইএমএফকে জানানো হবে। এছাড়া পেট্রোবাংলাসহ সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাটের বাকি হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারে অর্থবিভাগের সাহায্য চায় ভ্যাট বিভাগ।
একইভাবে আয়কর বিভাগ ও বিভিন্ন খাতে আটকে থাকা টাকা ফেরতে অর্থবিভাগের সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পাওনা প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা আইনি জটিলতায় আটকে আছে। সভায় উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেও আয়কর আদায়ের বিষয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে।
আইএমএফ কর্মসূচি সম্পর্কে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা যায়, আইএমএফ সফরের পুরো বিষয়টি সমন্বয় করবে অর্থমন্ত্রণালয়। আগামী ৫ অক্টোবর দিনব্যাপী জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয়কর, ভ্যাট ও কাস্টমস নীতি শাখার কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক হবে। ওইদিন দুপুর আড়াইটায় প্রথমেই কাস্টমস পলিসির সঙ্গে বৈঠক করবেন আইএমএফ প্রতিনিধিদলের সদস্যরা।
একইদিনে করনীতির কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। আর বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত বৈঠক হবে ভ্যাট পলিসির কর্মকর্তাদের সঙ্গে।
এরপর ৯ অক্টোবর বৈঠক হবে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিমের সঙ্গে। বৈঠকে চলতি অর্থবছরের শর্ত অনুযায়ী রাজস্ব আদায় বাড়ানোর ক্ষেত্রে অগ্রগতিসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে। বৈঠকে কাস্টমস আইনের অগ্রগতি, ক্যাপাসিটি বিল্ডিং এবং নতুন আয়কর আইনের কারণে রাজস্ব আদায়ে কতটা প্রভাব পড়বে তা সহ বেশকিছু বিষয় জানতে চাইবে আইএমএফ।
এর আগে, গত জুলাইয়ে আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দল এনবিআরের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই সময় বেশকিছু শর্তের কথা জানায় আইএমএফ। এসব শর্ত পূরণে কাজ চলছে। আর এ শর্তের অংশ হিসেবে বাজেট অধিবেশনে পাস হয়েছে নতুন আয়কর আইন। আর নতুন আইনের আওতায় ভর্তুকি কমিয়ে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। বেশকিছু নতুন খাতকে করের আওতায় আনা হয়েছে। আয়কর বিভাগের রিস্ক ম্যানেজমেন্টের অংশ হিসেবে কর গোয়েন্দা ইউনিট চালুর বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। পাশাপাশি আয়কর খাতে কমপ্লায়েন্স পূরণে কাজ চলছে।
আগামী ৫ ও ৯ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় বৈঠকের কার্যবিবরণী থেকে আরও জানা যায়, ২০২৩ অর্থবছরে ভ্যাট এবং আগামী ২০২৪ অর্থবছরের ভ্যাট আদায়ের পরিকল্পনা, ইএফডি স্থাপনের অগ্রগতি, ভ্যাট প্রশাসনে সংস্কার, সম্ভাব্য কর্মসূচি, বেঞ্চমার্ক, প্রযুক্তিগত সহায়তা, সক্ষমতা বৃদ্ধি ইত্যাদি আইএমএফকে জানাবে ভ্যাট বিভাগ।
অন্যদিকে, ২০২২-২৩ অর্থবছরের আয়কর ও শুল্ক আদায়, চলতি বছরে আদায়ের পরিকল্পনা, কমপ্লায়েন্স রিস্ক ম্যানেজমেন্ট ইউনিটের স্থিতি, কাস্টমস রাজস্ব প্রশাসনে সংস্কার, নতুন জাতীয় শুল্ক নীতি এবং শুল্ক যৌক্তিককরণের পরিকল্পনা, কারিগরি সহায়তা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির, কর ব্যয় মূল্যায়ন ও করনীতি সম্পর্কে ফলো-আপ জানানো হবে।