সুদান থেকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : সংঘাতপূর্ণ সুদান থেকে ৭০০ বাংলাদেশিকে নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম। তিনি বলেন, সব কিছু ঠিক থাকলে আগামী মঙ্গলবার বাংলাদেশিদের খার্তুম থেকে বাসে করে ৮৫০ কিলোমিটার দূরে পোর্ট সুদানে নেওয়া হবে। সেখান থেকে সৌদি আরবের জাহাজে তাদের জেদ্দায় পৌঁছানো হবে। এরপর সেখান থেকে তাদের বিমানের ফ্লাইটে করে দেশে ফেরত আনা হবে।

আজ রোববার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুদান থেকে বাংলাদেশিদের ফেরত আনার বিষয়ে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।

সুদানে অবস্থানরত সব বাংলাদেশিকে দ্রুত নিবন্ধনের আহ্বান জানিয়ে শাহরিয়ার আলম বলেন, সুদানের পরিস্থিতি ভালো নয় এবং সেখান থেকে অন্য জায়গায় চলে যাওয়ার চেষ্টা করা ঠিক হবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন সবাইকে নিরাপদে ফেরত আনার জন্য এবং সেই চেষ্টা করছি। যারা এখনো ফেরত আসার জন্য নিবন্ধন করেননি, তাদের অনুরোধ করছি নিবন্ধন করার জন্য।

তিনি জানান, সুদানে প্রায় ১৫০০ বাংলাদেশি আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭০০ বাংলাদেশি দেশে ফেরত আসার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

প্রতিমন্ত্রী জানান, সুদানের বাংলাদেশিদের দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়াটি তদারকি করার জন্য বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত তারেক আহমেদ এবং জেদ্দা মিশনের কর্মকর্তারা পোর্ট সুদানে অবস্থান করছেন।

এক প্রশ্নের জবাবে শাহরিয়ার আলম বলেন, জেদ্দায় পৌঁছানোর পর বাংলাদেশিদের সাধারণ ফ্লাইটে করে ফেরত আনা হবে। যদি প্রয়োজন হয় চার্টার্ড ফ্লাইটেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ বিমান এবং বিমানবাহিনী উভয়ই প্রস্তুত আছে। সৌদি সরকার বাংলাদেশিদের ফেরত আনার জন্য জাহাজ দিচ্ছে এবং জেদ্দায় বাংলাদেশিদের থাকার জন্য হোটেলের ব্যবস্থা করবে।

তিনি আরও জানান, আমরা যখনই পারি, যতজনকে পারি নিয়ে আসব। নির্দিষ্ট সংখ্যক বাংলাদেশি না হলে পাঠাব না বিষয়টি সে রকম নয়। প্লেনের ব্যবস্থা সাপেক্ষে তাদের দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফেরত আনা হবে।

শাহরিয়ার আলম জানান, এখন পর্যন্ত ৩৫ জন বাংলাদেশি যারা সৌদি আরব বা অন্য দেশের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন তারা কোম্পানিগুলোর উদ্যোগে নিরাপদ জায়গায় রয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৪ জন জেদ্দায় এবং একজন সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছেছেন।

সংঘর্ষের তৃতীয় সপ্তাহে বাংলাদেশিদের নিরাপদে সরানোর ব্যবস্থা করা দেরি হলো কিনা জানতে চাইলে পররাষ্ট্র পতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশিদের নিরাপদে ফেরত আনার জন্য বিবদমান দুপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সেটি সফল হয়নি।

খার্তুমের উপকণ্ঠ যেখান থেকে বাস ছাড়বে সেই জায়গা পরিবর্তন করে অন্য জায়গা থেকে বাংলাদেশিদের বাসে ওঠানো সম্ভব কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, আজ যে জায়গা নিরাপদ দুদিন পরে সেটি নিরাপদ না-ও থাকতে পারে। আমরা বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছি।

সরকারের দেওয়া সুদানের হটলাইনে সংযোগ না পাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা কাজ করছেন। তারা টানা ইন্টারনেট যোগাযোগ রাখতে পারছেন না। রোববারের বৈঠকেও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের ইন্টারনেটের সংযোগ বারবার বিঘ্নিত হচ্ছিল। এ ক্ষেত্রে যারা সংযোগ পাচ্ছেন না তারা যেন তাদের ফোন নম্বরসহ একটি ক্ষুদে বার্তা পাঠিয়ে রাখেন। তিনি সেখানকার বাস্তবতা বিবেচনায় রেখে হটলাইনে বাংলাদেশ থেকে কল না দিতে অনুরোধ জানান।

উল্লেখ্য, গত ১৫ এপ্রিল থেকে সুদানের সেনাবাহিনী ও আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে সংঘর্ষ চলছে। গত দুই সপ্তাহে এ সংঘর্ষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। বিভিন্ন দেশ নিজেদের নাগরিকদের সুদান সরিয়ে নিলেও বাংলাদেশের নাগরিকরা সংঘাতপূর্ণ খার্তুম ও আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে রয়েছেন। অনেক বাংলাদেশি স্থানীয়দের লুটপাটের শিকার হয়ে অনাহারে মানবেতর দিন কাটাচ্ছেন বলে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবরে প্রকাশিত হয়েছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশিদের ফেরত আনার প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করার কথা জানাল সরকার।

Share