স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠকারী শাহজাহান সিরাজ মারা গেছেন

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী ও বিএনপি নেতা শাহজাহান সিরাজ মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর।

মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।

বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী রাবেয়া সিরাজ, মেয়ে সারোয়াত সিরাজ ও ছেলে রাজীব সিরাজসহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। বুধবার সকাল ১১ টায় টাঙ্গাইল এলেঙ্গায় প্রথম জানাজা, বাদ জোহর দ্বিতীয় জানাজা কালীহাতী উপজেলায়, বাদ এশা গুলশান সোসাইটি মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে বনানী কবর স্থানে তাকে দাফন করা হবে।

২০১২ সালে শাহজাহান সিরাজের ফুসফুসে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এর কয়েক বছর পর ক্যান্সার ধরা পড়ে মস্তিষ্কেও। শাহজাহান সিরাজ বিএনপির সময়কার বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করেছেন। অসুস্থতার কারণে ২০১৬ সালের পর রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না।

১৯৪৩ সালের ১ মার্চ টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্মগ্রহণ করেন শাহজাহান সিরাজ। তার পিতার নাম আব্দুল গণি মিয়া ও মাতা রহিমা বেগম। ১৯৬২ সালে হামিদুর রহমান শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত হওয়ার মধ্যদিয়ে শাহজাহান সিরাজ ছাত্র-রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৬৪-৬৫ এবং ১৯৬৬-৬৭ দুই মেয়াদে তিনি দুবার করটিয়া সা’দাত কলেজের ছাত্র সংসদের ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। একজন সক্রিয় ছাত্রনেতা হিসেবে তিনি ১১ দফা আন্দোলন এবং ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণ করেন। এরপর তিনি ১৯৭০-৭২ মেয়াদে অবিভক্ত ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী পরিষদ, নিউক্লিয়াসের সক্রিয় কর্মী, ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতা।

মুক্তিযুদ্ধের পর সর্বদলীয় সমাজতান্ত্রিক সরকার গঠনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) গঠনে ভূমিকা পালন করেন, যা ছিলো স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বিরোধী দল। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের প্রতিষ্ঠাতা সহকারী সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন শাহজাহান সিরাজ। পরবর্তীতে জাসদে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। জাসদের মনোনয়নে ৩ বার তিনি জাতীয় সংসদের টাঙ্গাইল-৪ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

শাহজাহান সিরাজ ১৯৯৫ সালে বিএনপিতে যোগ দেন। তিনি বিএনপির মনোনয়নেও একবার একই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। বিএনপি সরকারের শেষ পর্যায়ের দিকে নৌপরিবহন মন্ত্রী হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন।

শাহজাহান সিরাজ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক। ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে বিশাল এক জনসভায় বঙ্গবন্ধুর সামনে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করেছিলেন শাজাহান সিরাজ। এরপর যুদ্ধ শুরু হলে তিনি সশস্ত্র যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ‘বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স’ (বিএলএফ) বা মুজিব বাহিনীর কমান্ডার হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।

এক সময়ের রাজনৈতিক সহকর্মী সাবেক ছাত্রনেত্রী রাবেয়া সিরাজের সঙ্গে ১৯৭২ সালে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন শাহজাহান সিরাজ। রাবেয়া সিরাজ একজন শিক্ষিকা এবং রাজনীতিবিদ। তিনি সর্বশেষ বিএনপির তাঁতী বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

শাহজাহান সিরাজের মৃত্যুতে গভীর শোক জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল- জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক সংগঠন শোক জানিয়েছে।

Share