‘হামলাকারীরা বাসায় ঢুকে টাকা-পয়সা, গয়না দিতে বলে’

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : দেশজুড়ে তোলপাড় শুরু হওয়া দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর দুর্বৃত্তদের নৃশংস হামলার বিষয়ে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন তাঁর আহত বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ।

তিনি জানিয়েছেন, বাসায় ঢুকে হামলাকারীরা টাকা-পয়সা, গয়না কোথায় আছে সেগুলো দিতে বলে। বারবার ওয়াহিদা খানমের কাছে চাবিও চেয়েছে মুখোশধারী হামলাকারীরা। চাবি না দিলে তার ৪ বছরের সন্তানকে মেরে ফেলার হুমকিও দেয় হামলায় অংশ নেয়া এক দুর্বৃত্ত।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের বেডে শুয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের কাছে সেই হামলার ঘটনা তুলে ধরেন ইউএনওর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ।

দেশজুড়ে তোলপাড় কেন্দ্র বিন্দু ইউএনও ওয়াহিদা খানমকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর জখম করার ঘটনা ঘটেছে বুধবার দিবাগত রাত তিনটায় তাঁর সরকারি নিজ বাসভবনে । এখন পর্যন্ত দুর্বৃত্তদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব না হলেও এদের ধরতে একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন ঘোড়াঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আমিরুল ইসলাম।

এই হামলায় তাঁর বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলীও গুরুতর আহত হয়েছেন। ওয়াহিদা খানমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হলেও তার বাবা চিকিৎসাধীন আছেন রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিউরো সার্জারি বিভাগে। ওমর আলী শেখ বলেন, “বুধবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে সাড়ে ৩টার দিকে তাহাজ্জুদ নামাজ পরে কেবল শুয়েছিলাম। ঘুম ঘুম লাগছিল।
এমন সময় মেয়ের চিৎকার শুনে ওপর তলায় যাই। মেয়ে তখন আমাকে ডাকছিল আর বলছিল, ঘরে কেউ ঢুকেছে বাবা, দ্রুত আস। আমি ওপর তলায় গিয়ে দেখি মুখোশধারী এক ব্যক্তি মেয়ের কাছে চাবি চাচ্ছিল। টাকা-পয়সা ও গহনা কোথায় তা জানতে চাচ্ছিল বারবার। তথ্য না দিলে আমার নাতিকে মেরে ফেলবে বলে হুমকি দিচ্ছিল ওই ব্যক্তি। একপর্যায়ে আমি তাকে ধরে ফেলি। এ সময় তার সঙ্গে আমার ধস্তাধস্তি শুরু হয়। তখন হাতুড়ি দিয়ে আমার ঘাড়ে আঘাত করলে মেঝেতে পড়ে অজ্ঞান হয়ে যাই। এরপর কি হয়েছে আমি বলতে পারি না।”

ওয়াহিদা খানমের স্বামী মেজবাউল হোসেন রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে কর্মরত। আহত স্ত্রীকে নিয়ে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। তার বাড়ি রাজশাহীতে। ওয়াহিদা খানমের বাবার বাড়ি নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলায়। তাদের চার বছরের এক ছেলে রয়েছে। ওমর আলী শেখ প্রায়ই তার মেয়ের কর্মস্থল ঘোড়াঘাট বেড়াতে আসেন। কয়েক দিন ধরে মেয়ের কাছেই ছিলেন তিনি।

আগের কোনো শত্রুতা বা অন্য কোনো কারণে এ হামলা হয়েছে কি-না জানতে চাইলে মুক্তিযোদ্ধা ওমর আলী শেখ বলেন, মুখোশধারী ব্যক্তি শুধু চাবি আর টাকা-পয়সা কোথায় তা জানতে চেয়েছিল। তার মুখোশ পরা ছিল বলে আমি তাকে চিনতে পারিনি। পরে শুনেছি আমার মেয়েকে কুপিয়ে জখম করা হয়। কেন এ হামলা হয়েছে তা আমি বলতে পারছি না। তবে বাথরুমের ভেন্টিলেটর ভেঙে বের হয়ে যায় ওই ব্যক্তি। তবে বাইরে কেউ দাঁড়িয়ে ছিল।

বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করতে আসা রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব বলেন, এখনও হামলার কারণ জানা যায়নি। ইউএনওকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠিয়েছি আমরা। তদন্ত শেষে জানা যাবে কারা এ হামলা করেছে এবং ঘটনায় সাথে কতজন জড়িত।

এদিকে আহত ইউএনও ওয়াহিদা খানম কথা বলছেন বলে জানিয়েছেন তাঁর ঘনিষ্ঠজনেরা।

Share