রাজশাহী প্রতিবেদক : জামিন শুনানির সময় বাদীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো জান্নাত ফেরদৌসের (১৯) কোলে ছয় মাস বয়সী ফুটফুটে এক শিশু। হঠাৎ শিশুটি কেঁদে ওঠে। তার ওই কান্না আদালতের সবার নজর কাড়ে। এ সময় শিশুটির বাবা শিমুল পারভেজও (২২) কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। জিজ্ঞাসাবাদের সময় আদালত জানতে পারেন, সামান্য ভুল–বোঝাবুঝির কারণে আট মাস আগে শিমুল ও জান্নাতের সংসার ভেঙে গেছে। তালাকও কার্যকর হয়েছে।
এই অবস্থায় আদালতের পক্ষ থেকে শিশুটির ভবিষ্যতের বিষয়টি চিন্তা করে বাদী ও আসামিপক্ষকে আপসের পরামর্শ দেওয়া হয়। পরে দুই পক্ষের সম্মতিতে আদালতকক্ষেই বাসানো হয় বিয়ের আসর। এতে মাত্র দুই কার্যদিবসেই মামলাও নিষ্পত্তি হয়ে যায়।
আজ বৃহস্পতিবার রাজশাহী মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২–এ ঘটনাটি ঘটেছে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, শিমুল পারভেজের সঙ্গে ২০২১ সালের ২ এপ্রিল জান্নাত ফেরদৌসের বিয়ে হয়। তাঁর বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার কাটাখালী পৌর এলাকায়। বিচ্ছেদের কয়েক দিন পর গত ১২ অক্টোবর জান্নাত ফেরদৌস বাদী হয়ে আদালতে যৌতুকের মামলা করেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আজ আদালতে ওই মামলার জামিন শুনানি চলছিল। এ সময় বিচারক মাসুদুজ্জামান লক্ষ করেন, সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো মামলার বাদী জান্নাতের কোলে ছয় মাসের ফুটফুটে এক শিশু কাঁদছে। বিয়ের কিছুদিন পর সামান্য ভুল–বোঝাবুঝিতে আসামি শিমুল তাঁর স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন। ইতিমধ্যে তা কার্যকরও হয়েছে। আদালতে জান্নাতের মা–বাবা ও শিমুলের বাবা উপস্থিত ছিলেন।
শুনানির সময় জান্নাতের চোখে পানি। শিমুলও মাথা নিচু করে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে ছিলেন। দুই পক্ষের আইনজীবী পক্ষে-বিপক্ষে তাঁদের বক্তব্য দিলেও সেটা ছাপিয়ে আদালতের দৃষ্টি পড়েছিল অসহায় শিশুটির দিকে। পরে আদালত জানতে চান, শিশুটির ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে বাদী ও আসামিপক্ষ আপস করতে চায় কি না। একপর্যায়ে আদালত দুই পক্ষকেই কিছু উপদেশমূলক কথা বলেন। এ সময় শিমুল ও জান্নাত দুজনই আপস করতে রাজি হন, কিন্তু তা অবশ্যই আদালতের মধ্যস্থতায়। এ সময় দুই পক্ষের আইনজীবীর অনুরোধে আদালত বিচারকাজ শেষে আদালতে কক্ষের ভেতরেই উভয় পক্ষের আইনজীবী, অভিভাবক ও বার সমিতির সম্পাদকের উপস্থিতিতে কাজী ডাকেন। আদালতের ভেতরেই এক লাখ টাকা দেনমোহর নির্ধারণ করে ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক পুনরায় শিমুল ও জান্নাতের বিয়ে দেওয়া হয়। পরে আদালত সবাইকে মিষ্টিমুখ করান।
বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বিচারক স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই তাঁর খাসকামরায় ডেকে নিয়ে ভবিষ্যতের জন্য শুভকামনা জানান এবং শিশুটিকে কোলে নিয়ে কিছুক্ষণ আদর করেন। আদালতের এই মানবিক উদ্যোগে বাদী, আসামি, আইনজীবী, আদালতের পেশকার, পিয়ন, ম্যাজিস্ট্রেটসহ সবাই তখন আনন্দাশ্রুতে ভিজছেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী রেবেকা সুলতানা বলেন, মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদুজ্জামান এই আদালতে যোগ দেওয়ার পর থেকে মানবিক বিচারের দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যাচ্ছেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টায় এবার আদালতকক্ষে ব্যতিক্রমী বিয়ের আয়োজনের মাধ্যমে একটি সংসারের ভাঙন ঠেকানো গেল। এতে একটি শিশুর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হলো।