নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে মিরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
সোমবার সকাল ৭টা ১০ মিনিটে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল এস এম শামীম উজ জামান। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তার সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী।
এসময় বিউগলে বাজানো হয় করুণ সুর। সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল সামরিক কায়দায় সালাম জানায়।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে এবারের শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হচ্ছে ভিন্ন আবহে। সব কর্মসূচিতেই থাকছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলার তাগিদ। বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞের মর্মন্তুদ যন্ত্রার স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা রায়েরবাজার শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্মৃতিস্তম্ভে নিবেদন করা হচ্ছে শ্রদ্ধার্ঘ্য। দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়েছে। শোকের প্রতীক কালো পতাকাও উড়ছে।
বিজয়ের ঊষালগ্নে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের হারানোর দুঃসহ যন্ত্রণার দিন আজ। ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিসংগ্রামের শেষলগ্নে বাঙালি যখন চূড়ান্ত বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে, ঠিক তখনই একাত্তরের আজকের দিনে এদেশীয় নরঘাতক রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির সদস্যরা মেতে ওঠে দেশের বুদ্ধিজীবীদের বর্বরোচিত হত্যাযজ্ঞে। বিজয়ের চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি মেধার সে নৃশংস নিধনযজ্ঞ আনন্দোন্মুখ জাতিসহ গোটা বিশ্বকেই হতবিহ্বল করে দেয়।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমর্পণের মাত্র দু’দিন আগে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাতের অন্ধকারে কেবল ঢাকা শহরেই প্রায় দেড়শ বুদ্ধিজীবী ও বিভিন্ন পেশার কৃতি মানুষকে চোখ বেঁধে অপহরণ করে নিয়ে যায়।
পরদিন সকালে ঢাকার মিরপুরের ডোবা-নালা ও রায়েরবাজার ইটখোলায় বিক্ষিপ্তভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায় বুদ্ধিজীবীদের নিথর দেহ। কারও শরীর বুলেটবিদ্ধ, কারও বা অমানুষিক নির্যাতনে ক্ষতবিক্ষত। হাত পেছনে বেঁধে বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নাড়িভুঁড়িও বের করে ফেলা হয়েছিল অনেকেরই।
বাঙালি জাতির দীর্ঘ মুক্তিসংগ্রামে এসব বুদ্ধিজীবী নিজেদের মেধা, মনন ও লেখনীর মাধ্যমে স্বাধীনতার সংগঠকদের প্রেরণা জুগিয়েছেন। দেখিয়েছেন মুক্তির পথ। গোটা জাতিকেও উদ্দীপ্ত করেছেন অধিকার আদায়ের সংগ্রামে।
১৪ ডিসেম্বরকে বুদ্ধিজীবীদের নিধনযজ্ঞের শিকারের দিন হিসেবে স্মরণ করা হলেও মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই ইতিহাসের এ ঘৃণ্যতম অপকর্মের সূচনা হয়। সপ্তাহজুড়ে এদের তালিকায় একে একে উঠে আসে অসংখ্য বুদ্ধিদীপ্ত সাহসী মানুষের নাম। পরে কৃতি এসব বুদ্ধিজীবীর তালিকাই তুলে দেওয়া হয়েছিল তৎকালীন জামায়াতে ইসলামীর সশস্ত্র ক্যাডার গ্রুপ কুখ্যাত আলবদর ও আলশামস বাহিনীর হাতে। নেপথ্যে ছিল পূর্ব পাকিস্তানের তৎকালীন গভর্নরের সামরিক উপদেষ্টা রাও ফরমান আলী।
মূলত ১০ ডিসেম্বর থেকেই রাতের আঁধারে তালিকাভুক্ত বুদ্ধিজীবীদের বাসা থেকে চোখ বেঁধে রায়েরবাজার এবং মিরপুর বধ্যভূমিতে নিয়ে গুলি ও বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা শুরু হয়। আর এ অপকর্মের চূড়ান্ত নীলনকশারই বাস্তবায়ন ঘটে ১৪ ডিসেম্বর।