ধর্ষণ মামলার বাদীকে বিয়ে করে ১৩ বছর সংসারের পর সাজাপ্রাপ্ত হয়ে গ্রেপ্তার

বগুড়া প্রতিনিধি : ধর্ষণ মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে ৯ মাস কারাগারে ছিলেন তিনি। আদালতের মাধ্যমে মামলার বাদীকে বিয়ে করে জামিনে মুক্তি পান। এরপর ১৩ বছর ধরে চলছিল তাঁদের সংসার। হঠাৎ গতকাল বুধবার তাঁকে সেই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ঘটনাটি ঘটেছে বগুড়ার ধুনটে।

পুলিশ ও আদালত সূত্রে জানা গেছে, মামলা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ না করায় বিচারকাজ শেষে রায় ঘোষণা করেছেন আদালত। ধর্ষণের অভিযোগে দুলু প্রামাণিক (৩৫) নামের ওই ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দেন বগুড়া নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক নুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির। জরিমানার টাকা পরিশোধ করতে না পারলে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আশেকুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, রায় ঘোষণার সময় আদালতে উপস্থিত না থাকায় দুলুর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। পুলিশ সেই গ্রেপ্তারি পরোয়ানার ভিত্তিতে গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাঁকে গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

গ্রেপ্তার দুলু প্রামাণিক উপজেলার কালেরপাড়া ইউনিয়নের আনারপুর দহপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৯ সালে ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১১টার দিকে স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছেদ হওয়া এক নারীর ঘরে ঢুকে ধর্ষণ করেন দুলু প্রামাণিক। এ সময় ওই নারীর চিৎকারে স্থানীয় লোকজন আসার আগেই দুলু প্রামাণিক পালিয়ে যায়। ঘটনার পরের দিন ওই নারী বাদী হয়ে দুলু প্রামাণিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে ধুনট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি মামলা করেন। এর চার দিন পর পুলিশ দুলু প্রামাণিককে গ্রেপ্তার করে। পরে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) বুলবুল হোসেন আসামির বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

নয় মাস কারাভোগের পর ধর্ষণের শিকার ওই নারীকে আদালতের মাধ্যমে বিয়ে করে দুলু প্রামাণিক। পরে তাঁকে আদালত থেকে জামিনে মুক্তি দেওয়া হয়। জামিনের পর থেকে তাঁরা দুজন নিজ বাড়িতে সংসার শুরু করেন।

বগুড়ার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত–২ এর বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আশেকুর রহমান বলেন, বিয়ের পরে মামলার আসামি আদালত থেকে জামিন পেয়ে পলাতক ছিলেন। আদালতে তাঁর কোনো আইনজীবী ছিল না। আর এর মধ্যে মামলার বাদী আসামির বিরুদ্ধে আদালতে এসে বিচারকের কাছে সময়মতো সাক্ষী দিয়েছেন। এ কারণে আদালত আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন।

গ্রেপ্তারের পর থানা–হাজতে আসামি দুলু প্রামাণিক বলেন, তাঁর স্ত্রীর আদালতে সাক্ষী দেওয়ার বিষয়ে তিনি জানতেন না। মামলায় তাঁর কিছু হবে না বলে স্ত্রীর আশ্বাসের ওপর বিশ্বাস করে আইনি মোকাবিলা করেননি তিনি। এখন তিনি রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন।

Share