বগুড়ার সেই বিচারককে প্রত্যাহার

বিশেষ প্রতিনিধি : শিক্ষার্থীর অভিভাবকদের হেনস্তাকারী বগুড়ার সেই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজকে প্রত্যাহার করে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনকে আইন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. মিজানুর রহমানের সই করা এক বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। আইন মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা রেজাউল করিম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

জানা যায়, বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দুই অভিভাবককে বিচারক বেগম রুবাইয়া ইয়াসমিন তার পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এমন অভিযোগে স্কুলের সামনের রাস্তায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা। এর প্রতিবাদে গত মঙ্গলবার বিকেলে স্কুলের সামনের রাস্তা বন্ধ করে কয়েক দফায় প্রতিবাদ জানায় শিক্ষার্থীরা।

বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের মেয়েদের কাছ থেকে জানা যায়, শিক্ষার্থীরা নিজেরাই নিজেদের ক্লাসরুম পালাক্রমে পরিষ্কার করে আসছে। ক্লাস এইটের একটা মেয়ের ওপর যেদিন নিয়ম অনুযায়ী ক্লাসরুম পরিষ্কারের দায়িত্ব আসে সেদিন সে জানায়, পরিষ্কার করতে পারবে না। কারণ তার মা বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজের একজন বিচারক।

তার সহপাঠীরা এ নিয়ে তার সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। সেই মেয়ে ক্লাসরুম পরিষ্কার করেনি। বরং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লিখে ‘হ আমি জাজের মেয়ে দেখে ভাব দেখাই। পারলে তোর মা কেও জাজ হয়ে দেখাতে বল আইসে বস্তি।’ ক্লাসের অন্য মেয়েরা ওই পোস্টে কমেন্ট করে ক্ষোভ প্রকাশ করে।

এরপর তার মা বিচারক রুবাইয়া ইসলাম ওই স্কুলে এসে তিনি ছাত্রীদের অভিভাবকসহ ডেকে পাঠান। ওই বিচারক ছাত্রী ও তাদের অভিভাবকদের মামলার ভয় দেখান এবং অভিভাবকদেরকে তার পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করান।

ওই ঘটনার পর বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ওই ছাত্রীরা বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। রাস্তা অবরোধ করে ওই বিচারকের শাস্তি দাবি করে।

এই বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। এটি সরকারি চাকরিজীবীদের সন্তানদের সঙ্গে বেসরকারি চাকরিজীবী বা ব্যবসায়ীদের সন্তানদের মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব। যতটুকু জেনেছি, সোমবার বিচারকের মেয়ের ক্লাস ঝাড়ু দেওয়া কথা ছিল। তবে সে তিন মাস আগে এই স্কুলে ভর্তি হওয়ায় এখনও পরিবেশ হয়তো বুঝে উঠতে পারেনি। এজন্য সে ঝাড়ু দিতে প্রথমে অস্বীকার করলেও পরে কাজটি করে। এসময় অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে কটাক্ষ করে, যা নিয়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এ কারণে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবককে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু অভিভাবকের মাফ চাওয়াকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে। অভিভাবকরা ভয় পেয়ে এভাবে মাফ চেয়েছেন। তাঁদের কেউ বাধ্য করেনি। এই মাফ চাওয়াটা শিক্ষার্থীরা মেনে নিতে পারেনি।

Share