কিডনি রোগে কী খাওয়া যাবে আর কী যাবে না

ডা. তাসনোভা মাহিন : কিডনি রোগে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সমস্যা বা কিডনি অকার্যকর হওয়ার প্রধানতম কারণ অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস। এ ছাড়া যাঁরা অনেক দিন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন, দীর্ঘদিন ধরে ব্যথার ওষুধ খাচ্ছেন, যাঁদের অটোইমিউন রোগ (শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা সুস্থ অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে) আছে, তাঁদের কিডনি রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
কারও কিডনির কার্যকারিতা তিন মাসের বেশি সময় ধরে কম বা ক্রমাগত কমে যেতে থাকলে তাকে বলে দীর্ঘমেয়াদি কিডনি সমস্যা (ক্রনিক কিডনি ডিজিজ)। এ অবস্থায় কী কী খাবার খাওয়া যাবে এবং কী খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে।

প্রোটিন : কিডনি সমস্যা ধরা পড়ার পর অনেকেই প্রোটিন বা আমিষ–জাতীয় খাবার খাওয়া একদম কমিয়ে দেন। গবেষণায় দেখা গেছে, আমিষ–জাতীয় খাবার অত্যধিক কমিয়ে দিলে পুষ্টিহীনতা হয়। এতে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমে যায় এবং মৃত্যুঝুঁকি বেড়ে যায়।

কিডনির কার্যক্ষমতা বুঝে প্রোটিন গ্রহণের মাত্রা ঠিক করা উচিত। কিডনির কার্যক্ষমতা কতটুকু আছে, রক্তের পরীক্ষা দিয়ে নির্ণয় করা যায়। কিডনির সমস্যা মৃদু হলে স্বাভাবিক খাবার খেতে বাধা নেই। যদি e GFR< 60 হয়, তাহলে আমিষ বা প্রোটিন দিনে ০.৮/কেজি ওজন খেতে হবে। এর মানে ৬০ কেজি ওজনের একজন রোগী দিনে ৪৮ গ্রাম প্রোটিন খেতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে, এই মাত্রা তৈরি হয়েছিল পশ্চিমা বিশ্বের মানুষের জন্য, কারণ তাদের খাবারে মাংসের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে। বাংলাদেশের মানুষের খাদ্যাভাসে মাছ বা মাংসের পরিমাণ এমনিতেই তুলনামূলক কম।
কিডনির সমস্যা থাকলেও দিনে ১টা ডিম, দুপুর ও রাতের খাবারে ২ টুকরা মাছ বা মাংস, ৩ বা ৪ টেবিল চামচ ডাল খেতে বাধা নেই। তবে রেড মিট মানে গরু বা খাসির মাংসের পরিবর্তে মুরগির মাংস ও মাছ খাওয়া ভালো।

ফল ও শাকসবজি : কিডনি রোগীদের সব সময় যে নানা ধরনের ফল বা শাকসবজি খাওয়া নিষেধ, এ ধারণা ঠিক নয়। শুধু কারও রক্তে যদি পটাশিয়ামের মাত্রা বেশি থাকে বা কিডনির জিএফআর যদি ৩০–এর কম হয়, তাহলে পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার কম খেতে হবে। ডাবের পানি, কলা, খেজুর, শুকনা ফল, আলু, টমেটো, শসা, পালংশাক, ফলের রসে পটাশিয়াম বেশি থাকে।
আপেল, পেয়ারা, আঙুর, নাশপাতি, জাম, তরমুজ—এ ফলগুলোয় পটাশিয়াম তুলনামূলক কম থাকে। এ ফলগুলো পরিমাণমতো খাওয়া যাবে।
শাকসবজি সেদ্ধ করে পানি ফেলে দিয়ে তারপর রান্না করতে হবে।

খাবার লবণ : খাবারে অতিরিক্ত লবণ পরিহার করতে হবে।

ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি : কিডনির জিএফআর ৬০–এর কম হলে দিনে ১০০০ গ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম না খাওয়া ভালো। ছয় মাস অন্তর রক্তে ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি–এর মাত্রা পরীক্ষা করে প্রয়োজন হলে খেতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।

ডা. তাসনোভা মাহিন সহযোগী কনসালটেন্ট, মেডিসিন বিভাগ, স্কয়ার হাসপাতাল।

Share