তারেক-মিশুকের মৃত্যুর দুর্ঘটনায় বাসচালক কি আদো দায়ী ছিলো?

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : নন্দিত চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ ও তাঁর বন্ধু মিশুক মুনীর ২০১১ সালে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হন। ওই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বিচারিক আদালতে বাসচালক জামির হোসেন দোষী সাব্যস্ত হন। যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া জামির কারাগারে মারা যান গত বছর। তার মৃত্যুর পর প্রশ্ন উঠছে, তারেক-মিশুকের মৃত্যুর দুর্ঘটনায় বাসচালক জামির কি আদো দায়ী ছিলো?

বুয়েটের অধ্যাপক ড. সামছুল হকের অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, বাসচালক জামির ছিলেন ‘নির্দোষ’। ওই দুর্ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি ঘটেছিল বলেও মনে করেন তিনি।

মানিকগঞ্জের একটি গ্রামে চলচ্চিত্রের শুটিং স্পট দেখে ঢাকা ফেরার পথে ২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান খ্যাতিমান চিত্র পরিচালক তারেক মাসুদ এবং শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে এটিএন নিউজের সাবেক প্রধান নির্বাহী মিশুক মুনীর।

ওই দুর্ঘটনায় মাইক্রোবাসচালক মোস্তাফিজুর রহমান, প্রোডাকশন সহকারী মোতাহার হোসেন ওয়াসিম ও জামাল হোসেন মারা যান। তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদ ও শিল্পী ঢালী আল-মামুনসহ আহত হন পাঁচজন।

দুর্ঘটনার জন্য মাইক্রোবাসে আঘাত করা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসের চালক জামির হোসেনকে দায়ী করে যাবজ্জীবন সাজা দেয় বিচারিক আদালত। অন্যদিকে আরেকটি মামলায় তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট।

মিশুক মুনীরের পরিবারের পক্ষ থেকে করা ক্ষতিপূরণের আরেকটি মামলা হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত বাসচালক জামির হোসেন কারাবন্দি অবস্থায় গত বছরের ১ আগস্ট ঈদের দিন মারা যান। কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে থাকার সময়ে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন, পরে রাজধানীর হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

সারা দেশকে নাড়া দেয়া ২০১১ সালের ওই সড়ক দুর্ঘটনার জন্য বিচারিক আদালতে জামির দোষী সাব্যস্ত হলেও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) দুর্ঘটনা রিসার্চ ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ড. সামছুল হকের একটি অনুসন্ধানে দাবি করা হয়েছে, বাসচালক জামির ছিলেন ‘নির্দোষ’।

মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তারেক মাসুদ, মিশুক মুনীরদের দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাস
সরেজমিন অনুসন্ধান, প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য এবং বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণের ভিত্তিতে ড. সামছুল হক বলছেন, সেদিন রাস্তায় সঠিক লেনেই ছিল জামিরের বাস। একটি বাঁকের মুখে তারেক মাসুদ-মিশুক মুনীরদের বহনকারী মাইক্রোবাসটি আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসার কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা জামিরের বাসটির সঙ্গে সংঘর্ষ হয়।

বিচারিক আদালতে ওই দুর্ঘটনার বিচারপ্রক্রিয়ায় বেশ কিছু ত্রুটি ঘটেছিল বলেও মনে করছেন অধ্যাপক ড. সামছুল হক। এ কারণে হাইকোর্টে সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তিনি। এরই মধ্যে সাক্ষী হিসেবে তার নাম আদালতে দাখিলও করেছে বিবাদীপক্ষ। তবে করোনার কারণে দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছে শুনানি।

ড. সামছুল হক বলেন, ‘সঠিক বিজ্ঞানভিত্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরতেই আমি কোর্টে যেতে রাজি হয়েছি। বিচারিক আদালত যে সাক্ষ্য-সাবুদের ভিত্তিতে রায় দিয়েছে, আমি সেখানে মিসক্যারেজ অফ জাস্টিস (ন্যায়বিচারের ব্যত্যয়) দেখতে পেয়েছি। এ কারণে আমি বিষয়টির ব্যাপারে বলতে আদালতে যেতে ইচ্ছুক।’

তিনি বলেন, ‘কোনো দুর্ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গে আমরা যারা শিক্ষিত সমাজ আছি, তারাও শুধু চালককে দোষী করে বক্তব্য দেই। এই মানসিকতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সড়ক দুর্ঘটনার মতো একটা জটিল ফরেনসিক বিষয়কে কয়েকজন নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়ে দেয়। এ মামলার বিচারে সিস্টেমের ভুল ছিল। এটা চলতে পারে না। এটার পরিবর্তন ঘটাতে হবে।’

কী আছে ড. সামছুল হকের অনুসন্ধানে : বুয়েট অধ্যাপক ড. সামছুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, ‘তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরের মৃত্যু অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি ঘটনা। ওই দুর্ঘটনার পরপরই আমি এর কারণ গভীরভাবে খতিয়ে দেখতে শুরু করি। অনুসন্ধানের একদম শুরুতে কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক আমাকে ব্যাপক সহযোগিতা করেছিলেন।

‘তারা প্রথম দিনে ঘটনাস্থলের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছবি আমাকে পাঠিয়েছিলেন। কিছু ছবি তোলা হয়েছিল উঁচু গাছ থেকে, যেগুলো আমার কাছে ছিল সারকামসটেন্সিয়াল এভিডেন্সের মতো। সেসব ছবি দেখে আমি বুঝেছিলাম, এখানে অনেক কিছু বলার মতো বিষয় লুকিয়ে আছে।’

তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকদের কাছ থেকে আরও বেশ কিছু কন্টেন্ট পেয়েছিলাম। এর মধ্যে একটি ভিডিও ছিল, যেখানে বাসের উইন্ডশিল্ডের কাছে বসা একজন নারীর কথা ছিল। তার সাবলীল বিবরণ থেকে আমি বুঝতে পেরেছিলাম, দুর্ঘটনাস্থল থেকে অনেক নতুন কিছু পাওয়ার আছে।’

ড. সামছুল হক নিজেও পরদিন দুর্ঘটনাস্থলে যান। বিভিন্ন আলামত নিবিড় পর্যবেক্ষণ করার পাশাপাশি কথা বলেন স্থানীয় লোকজন ও তদন্ত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে।

তিনি বলেন, ‘একে একে বিভিন্ন বিষয় আমার কাছে স্পষ্ট হচ্ছিল, সেই সঙ্গে সাধারণ বিবরণের মধ্যে গোঁজামিলগুলোও ধরা পড়ছিল। তখনও আমি দুর্ঘটনা কবলিত মাইক্রোবাসটি ভালোভাবে দেখতে পারিনি। ওটা একদম চ্যাপ্টা হয়ে গিয়েছিল। মাইক্রোবাসে কে কার পাশে বসেছিলেন সেটা তখনও আমি জানতাম না।’

তিনি বলেন, ‘অনুসন্ধানের পাশাপাশি তদন্ত কমিটির রিপোর্টের অপেক্ষা করছিলাম। তিন সদস্যের এ কমিটির সঙ্গে আমার একজন সাবেক ছাত্রও যুক্ত ছিলেন। তিনি আমাকে অনেক সহযোগিতা করেছেন। একই সঙ্গে আমার কাছে যেসব তথ্য-প্রমাণ ছিল, সেগুলো একসূত্রে গাঁথার চেষ্টা করছিলাম। তবে এর মধ্যে খণ্ড খণ্ড বেশ কিছু মিসিং লিংক ছিল।

‘এর মধ্যেই ডেইলি স্টারে তারেক মাসুদের সহকারী মনীশ রফিকের একটি সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। মনীশ ছিলেন মাইক্রোবাসচালকের ঠিক পাশের আসনে; দুর্ঘটনায় তিনিও সামান্য আহত হন। মনীশের বক্তব্য থেকে এমন কিছু বিষয় পাই, যেটি আমার প্রাথমিক অনুসন্ধানকে একটি কাঠামোর মধ্যে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।’

ড. সামছুল হক বলেন, ‘সাধারণভাবে যেকোনো দুর্ঘটনা ঘটার আগে গাড়ির হার্ড ব্রেক কষার কথা। হার্ড ব্রেক অ্যাপ্লাই করলে রাস্তায় একটি স্পিড মার্ক পাওয়া যায়। আর সেই স্পিড মার্ক পেলে গাড়ির আসল অবস্থান চিহ্নিত করা যায়। অথচ আমি রাস্তায় কোনো স্পিড মার্ক পাইনি।

‘আমরা যারা দুর্ঘটনা বিষয়ে কাজ করি, তাদের কাছে বিষয়টি গোলমেলে। আমি তখন ভাবার চেষ্টা করছিলাম, বৃষ্টির কারণেই রাস্তায় হয়ত স্পিড মার্ক নেই। তবে সেটা মিলছিল না। স্পিড মার্ক এমন একটি বিষয় যার কোনো না কোনো চিহ্ন থাকবেই। কারণ এ সময় চাকার প্রচণ্ড ঘর্ষণে রাস্তার পাথরকুচি উঠে যায়।’

তিনি বলেন, ‘তাহলে কেন এ ধরনের চিহ্ন নেই- সেটি নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছিলাম। অবশেষে সেই প্রশ্নের জবাব পাওয়া গেল মনীশ রফিকের সাক্ষাৎকারে। তিনি বলেছিলেন, সেদিন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। মাইক্রোবাসের পেছন দিকে যাত্রীরা মুখোমুখি বসে তুমুল আড্ডায় মেতেছিলেন। তার কথার প্রতিটি বিষয় আমার সামনে একেকটি চিত্র তৈরি করছিল। মাইক্রোবাসে মুখোমুখি কী করে বসা যায়! তার মানে সেটির আসনে পরিবর্তন আনা হয়েছিল। মনীশ আরও বলেন, হঠাৎ একটি বাস দৈত্যের মতো তাদের মাইক্রোবাসে আঘাত করে।’

এই ‘হঠাৎ’ শব্দটি অনেক প্রশ্নের জবাব পাইয়ে দেয় ড. শামসুল হককে। তিনি বলেন, ‘হঠাৎ হলেই তো গাড়ির স্পিড মার্ক পাওয়া যায় না! কিছু দূর আগে থেকে দেখতে পেলেও হার্ড ব্রেক কষা সম্ভব, কিন্তু কী এমন পরিস্থিতি সেখানে তৈরি হয়েছিল যে কারণে বাসটিকে তারা হঠাৎ দেখতে পেলেন!’

এরপর আবার দুর্ঘটনাস্থলে যান ড. সামছুল হক। এ সময় স্থানীয় একজনের বক্তব্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া পত্রিকায় প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজনের বক্তব্য ছাপা হয়।

এসব থেকে পরিষ্কার হয়, দুর্ঘটনার ঠিক কিছু আগে একটি বড় বাস রাস্তার বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকা একটি অটোরিকশাকে ওভারটেক করে। ওই বাসটির পিছু পিছু একই দিকে যাচ্ছিল তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাস। ওই বাসটির পিছু নিয়ে তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটি অটোরিকশাকে একইভাবে ওভারটেক করতে বাঁকের মুখে নিজের ডান লেনে চলে গিয়েছিল। এ সময়েই বাঁকের বিপরীত দিক থেকে আসা জামির হোসেনের বাসের সঙ্গে মাইক্রোবাসটির সংঘর্ষ হয়।

ড. সামছুল হক বলেন, ‘অটোরিকশাকে ওভারটেক করা বাসটির চালক কিন্তু বাঁকের অন্য প্রান্তে বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটিকে দেখতে পেয়েছিলেন। এরপরও তিনি ক্যালকুলেটেড (হিসাব করা) ঝুঁকি নিয়ে অটোরিকশাকে ওভারটেক করে আবার নির্ধারিত বাম লেনে বাসটিকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। মহাসড়কে চলাচলকারী বাস-ট্রাক সাধারণত এ ধরনের হিসাবি ঝুঁকি নিতে অভ্যস্ত।

‘তারেক মাসুদদের মাইক্রোবাসটিও সামনের বাসটিকে অনুসরণ করে ডান লেনে চলে যায়। তবে একজন শহুরে চালকের জন্য কাজটি ছিল মারাত্মক ভুল। সামনের বাসের মতো তিনি আর মাইক্রোবাসকে আবার বাম লেনে নিতে পারেননি। আর এই ভুলের কারণেই বিপরীত দিক থেকে আসা চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটির সঙ্গে মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়।’

বিপরীত দিকের বাসের চালক জামির বাঁকের মুখে নিজের সঠিক বাম লেনেই ছিলেন বলে মনে করছেন ড. সামছুল হক।

তিনি বলেন, ‘উল্টো দিকে আকস্মিকভাবে ভুল লেনে চলে আসা মাইক্রোবাসের বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসচালক জামির হোসেনের কোনো প্রস্তুতি ছিল না। কারণ বাঁকের উল্টো দিক থেকে তিনি মাইক্রোবাসটিকে দেখতেই পাননি। আর এ জন্যই সেই হঠাৎ দুর্ঘটনা, যেখানে বাসচালক ব্রেক কষারও সময় পাননি।’

দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে বিধ্বস্ত অবস্থায় রাস্তায় এর বাম দিকের লেনে পাওয়া যায়। ফলে মামলার রায়ে বিচারিক আদালতের বিচারক বিষয়টির উল্লেখ করে বলেন, ‘অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয় যে, মাইক্রোবাসটি তার সঠিক লেনেই ছিল।’

তবে ড. সামছুল হক বলেন, এখানে বোঝার ভুল আছে। বিষয়টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করা ড. শামসুল হক নিউজবাংলাকে বলেন, “সাংবাদিক বন্ধুদের কাছ থেকে আমি দুর্ঘটনাকবলিত মাইক্রোবাসটির টার্মিনাল পজিশনের বেশ কিছু ছবি পেয়েছিলাম। একটি দুর্ঘটনাকে বিশ্লেষণের জন্য ‘টার্মিনাল পজিশন’ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটা হলো দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটির চূড়ান্ত অবস্থান।”

তিনি বলেন, “এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হলো, একটি বাসের সঙ্গে সংঘর্ষের পর কোনো মাইক্রোবাস যদি তার ‘সঠিক’ লেনে থাকে (যদিও সে অবস্থানটিও ছিল রাস্তার মাঝ বরাবর), তাহলে ধরে নিতে হবে দুর্ঘটনার আগের চিত্র ছিল অন্যরকম। কারণ একটি বাসের যে ভর ও গতি, তাতে সংঘর্ষের পর মূল অবস্থান থেকে মাইক্রোবাসটির বেশ কিছুটা দূরে সরে যাওয়ার কথা। মাইক্রোবাসের জীবিত আরোহীদের বক্তব্যেও সেটি জানা গেছে। ফলে দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসটিকে রাস্তার মাঝ বরাবর পাওয়ার অর্থ হলো, প্রকৃতপক্ষে সেটি রং সাইডে ছিল। ধাক্কা খাওয়ার পর এর টার্মিনাল পজিশনটি পাওয়া গিয়েছিল মধ্য রাস্তায়।

“আর দুর্ঘটনার আগে মাইক্রোবাসটি সত্যিই নিজের বাম লেনে থাকলে ধাক্কা খাওয়ার পর সেটির রাস্তার কিনারায় বা রাস্তার পাশে চলে যাওয়ার কথা ছিল। এটাই হলো বিজ্ঞান। অথচ বিচারপ্রক্রিয়ায় এই বিজ্ঞানকে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।”

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর মাইক্রোবাসের অবস্থা দেখে পরিষ্কার বোঝা গেছে, বাসের সঙ্গে এর আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছিল। ডিভাইডারবিহীন একটি সড়কে এ ধরনের আংশিক মুখোমুখি সংঘর্ষ হতে হলে দুটি যানের যেকোনো একটিকে রং সাইডে থাকতে হয়। এ ক্ষেত্রে মাইক্রোবাস ও বাসের অবস্থান এবং সংঘর্ষে সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত অংশ দেখে পরিষ্কার বোঝা যায়, মাইক্রোবাসটিই ওভারটেক করতে গিয়ে রং সাইডে ছিল। দুর্ঘটনার পর সরকারের গঠিত তদন্ত কমিটি ও মানিকগঞ্জ জেলা পুলিশের প্রতিবেদনেও বিষয়টির উল্লেখ রয়েছে। তবে মামলার বিচারের ক্ষেত্রে সেটি বিবেচনায় নেয়া হয়নি।’

দুর্ঘটনার জন্য সে সময়ে রাস্তার ‘অবৈজ্ঞানিক’ বাঁককেও দায়ী করছেন ড. সামছুল হক।

তিনি বলেন, ‘১১ ফুট প্রশস্ত ওই রাস্তায় কোনো বাঁক থাকলে রাস্তার বক্রতার ধরন অনুসারে অংশটি অন্তত ১৩ ফুট চওড়া হওয়ার কথা ছিল। তবে বাস্তবে তা ছিল না। একই সঙ্গে বাঁকটিতে গাছপালা থাকায় দৃষ্টিসীমা ছিল একদম কম।

‘ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যেসব ব্ল্যাকস্পট ছিল, এই বাঁকটি তার একটি। মানিকগঞ্জের জোকায় তখন প্রতি বছর তিনটির বেশি করে দুর্ঘটনা ঘটছিল। এখন সেখানে ডিভাইডার করা হয়েছে, রাস্তা চওড়া হয়েছে, ফলে এখন আর দুর্ঘটনা হচ্ছে না।’

ড. সামছুল হকের অনুসন্ধান যেভাবে ‘অন্ধকারে’ : দুর্ঘটনার বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ দাঁড় করানোর পর সেটি সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পক্ষের কাছে তুলে ধরেন অধ্যাপক ড. সামছুল হক, তবে বিষয়টি বিবেচনায় নিতে সবার অনীহা ছিল বলে অভিযোগ তার।

তিনি বলেন, ‘দুর্ঘটনার পরিস্থিতি পুনর্নির্মাণের পর আমি প্রেজেন্টেশনটি কিছু সাংবাদিককে দিয়েছিলাম। তবে সেটি কোথাও প্রকাশ করা হয়নি।

‘বাসচালক জামির হোসেনের বিরুদ্ধে মানিকগঞ্জের আদালতে মামলার বিচার শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরই মধ্যে একদিন ব্র্যাকে একটি সেমিনারে আমি অনুসন্ধানটি সবার সামনে উপস্থাপন করলাম। সেখানে ক্যাথরিন মাসুদের আইনজীবী ব্যারিস্টার সারা হোসেনও ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সারা হোসেন বললেন, আমি যে বিষয়টি বের করেছি সেটির সঙ্গে তাদের ভিন্ন মত নেই, তবে তাদের ফাইন্ডিংস আলাদা। আমি তখন তাকে (সারা হোসেন) বললাম, আপনি আপনার জায়গা থেকে কখনোই বাসচালকের বাইরে যেতে পারবেন না, কিন্তু আমার বিশ্লেষণের পরিসর আরও বিস্তৃত।’

ড. সামছুল হক বলেন, ‘এরপর সারা হোসেনের টিম আমার কাছে এসেছিল, আমাকে সাক্ষ্য দিতে মানিকগঞ্জের আদালতে যেতে বলা হয়েছিল। তবে আমি তখন বলেছিলাম, একজন শিক্ষক হিসেবে দিনের পর দিন আমার পক্ষে মানিকগঞ্জে গিয়ে সাক্ষ্য দেয়া সম্ভব নয়। তা ছাড়া আমি তখন ভেবেছিলাম, আদালত নিশ্চয়ই দুর্ঘটনার সব দিক চুলচেরা বিচার-বিশ্লেষণ করেই রায় দেবে।’

২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি রায়ে জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। রায়ের পর জামিরকে প্রথমে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার ও পরে কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

এ ঘটনায় চমকে যান ড. সামছুল হক। সিদ্ধান্ত নেন, উচ্চ আদালতে তিনি অনুসন্ধানের বিষয়গুলো তুলে ধরবেন। এ জন্য যোগাযোগ শুরু করেন বিভিন্ন মহলে।

বুয়েটের এ অধ্যাপক বলেন, ‘একটি সড়ক দুর্ঘটনার বিচার ও সাধারণ বিচারের মধ্যে যে মাত্রাগত পার্থক্য থাকা প্রয়োজন, সেটি রায়ে দেখতে পাইনি। মনের মধ্যে ছটফট অবস্থা তৈরি হলো। পুরো বিষয়টি আবার নতুন করে কীভাবে সবার সামনে আনা যায়, সেই চেষ্টা শুরু করলাম। মিডিয়া শুরু থেকেই বিষয়টি নিয়ে রক্ষণশীলতা দেখাচ্ছিল, ফলে সেখানকার অনেকেই গুরুত্ব দিতে চাইলেন না। কেউ কেউ এমনও বললেন, আমি বাসচালকের পক্ষে কাজ করছি।

‘তবে আমি বারবারই বলেছি, এখানে বিজ্ঞান কথা বলছে, আমি নিজে কিছু বলছি না। এটা কার পক্ষে যাচ্ছে বা বিপক্ষে যাচ্ছে, সেটা কোনো বিষয় নয়।’

ড. সামছুল হক জানান, এক পর্যায়ে গত বছরের শুরুতে তিনি অ্যাটর্নি জেনারেল ও আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পান।

তিনি বলেন, ‘আমার শুধু মনে হচ্ছিল, একটি অন্যায় হয়ে যাচ্ছে। সেটা জেনেও চুপ করে থাকা আরও ঘোরতর অন্যায় হবে। এ কারণে আমি নিজের দায়বদ্ধতার জায়গা থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করেছিলাম।’

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সামনে দেড় ঘণ্টার একটি প্রেজেন্টেশন দেয়ার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ভূমিকা দেয়ার পর তাকে চারটি বা পাঁচটি দিক থেকে ভুল দেখাচ্ছিলাম। মন্ত্রীকে দেখিয়েছিলাম, জামিরের বাস বেপরোয়া গতিতে চলছিল বলা হলেও বাস্তবে এর গতি ছিল নিয়ন্ত্রিত সীমার মধ্যেই। আইনমন্ত্রী প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বিচারপ্রক্রিয়ার সমস্যাটি ধরে ফেললেন। উনি বললেন, সড়ক দুর্ঘটনার মতো বিষয়গুলোকে সাধারণ মামলার মতো করে বিচার করা তো মোটেই ঠিক হচ্ছে না।

‘আমি উচ্চ আদালতে সাক্ষ্য দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলাম। তবে তখনই জানলাম, কোনো মামলা উচ্চ আদালতে যাওয়ার পর নতুন করে সাক্ষী যুক্ত করা যায় না। এটা করতে হলে বিশেষ অনুমতির প্রয়োজন পড়ে।’

এরপর বিবাদীপক্ষ হাইকোর্টে ড. সামছুল হককে সাক্ষী হিসেবে পক্ষভুক্ত করার আবেদন করে। তবে করোনা মহামারির কারণে সেই আবেদনের শুনানি এখনও হয়নি। এরই মধ্যে গত বছরের ১ আগস্ট কারাগারে মারা যান বাসচালক জামির হোসেন।

ড. সামছুল হক বলেন, ‘বৈশিষ্ট্যগত নানান কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা আর সব ঘটনা থেকে আলাদা। একটি হত্যাকাণ্ডের বিচারে যেমন শুধু সাক্ষীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে রায় দেয়া হয়, সেখানে সড়ক দুর্ঘটনার বিচারে সাক্ষীর বাইরেও পারিপার্শ্বিক আরও অনেক কিছু বিবেচনায় নেয়া দরকার।’

তিনি বলেন, “জামিরের মামলায় আদালত ‘সর্বোৎকৃষ্ট সাক্ষী’ হিসেবে যাদের বিবেচনা করেছে, তারা সবাই মাইক্রোবাসের আরোহী৷ দুর্ঘটনার সময় তারা হয় উল্টো দিকে ঘুরে আড্ডা দিচ্ছিলেন, নয়তো ছিলেন একদম পেছনের সিটে। অথচ যিনি মাইক্রোবাসচালকের একদম পাশের সিটে ছিলেন, সেই মনীশ রফিকের সাক্ষ্য নেয়া হয়নি। কোনো বাসযাত্রী বা স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্যও গুরুত্ব পায়নি।”

জামিরের যাবজ্জীবনের রায়ে যা বলেছেন বিচারক : বেপরোয়া গতিতে বাস চালিয়ে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচজনকে হত্যার দায়ে বাসচালক জামির হোসেনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় বিচারিক আদালত। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত দায়রা জজ আল-মাহমুদ ফায়জুল কবীর রায় ঘোষণার পরপরই কারাগারে পাঠানো হয় জামিরকে।

২০১১ সালের ১৩ আগস্ট মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কয়েক দিন পরই জামির হোসেন মেহেরপুর গাংনীর চৌগাছা থেকে গ্রেপ্তার হন। তবে কয়েক মাস পরই জামিনে মুক্তি পান তিনি। এরপর ২০১৭ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পাওয়ার দিন থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি কারাগারে ছিলেন।

রায় ঘোষণা নিয়ে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিচারক দণ্ড ঘোষণার সময় আদালতের কাঠগড়ায় ‘নির্লিপ্ত’ দেখা যাচ্ছিল জামিরকে। রায়ের পর পুলিশ তাকে হাতকড়া পরিয়ে কারাগারে পাঠায়।

বিচারক আদেশে বলেন, ‘জামির হোসেনের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪ ও ৪২৭ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাকে ৩০৪ ধারায় দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হলো। আর দণ্ডবিধির ৪২৭ ধারার অপরাধে দোষী সাব্যস্ত করে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও দুই হাজার টাকা জরিমানা এবং অনাদায়ে আরও এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।’

আসামির উভয় দণ্ড একসঙ্গে চলবে বলেও আদেশ দেন বিচারক।

বিচার চলার সময় ৩২ জনের সাক্ষ্য নেয়া হয়। এর মধ্যে ছিলেন প্রত্যক্ষদর্শী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) কর্মকর্তা। আসামির পক্ষে দুজন সাফাই সাক্ষ্য দেন।

বিচারক রায়ে বলেন, ‘এজাহার, অভিযোগপত্র, খসড়া মানচিত্র, বিআরটিএর চিঠি, জব্দ করা ভুয়া ও মেয়াদোত্তীর্ণ লাইসেন্স, নিশ্চিত মৃত্যু থেকে বেঁচে যাওয়া প্রত্যক্ষদর্শীর অভিন্ন ও অকাট্য সাক্ষ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, আসামি বাসটিকে বৃষ্টি ও বাঁকের মধ্যে অবহেলার সঙ্গে বেপরোয়া গতিতে চালিয়ে একটি মিনিবাসকে ওভারটেক করে মাইক্রোবাসটিকে নির্মমভাবে আঘাত করেন। ফলে তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরসহ পাঁচটি তরতাজা প্রাণ ঝরে যায়। আসামির বেপরোয়া আচরণ ও অবহেলার কারণেই পাঁচজনের মৃত্যু হয়।’

আসামির পক্ষে আদালতে সাফাই সাক্ষ্য দেন চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্সের বাসটির যাত্রী শাহনেওয়াজ রয়েল ও অধ্যাপক নাসরিন আশরাফী।

তবে বিচারক রায়ে বলেন, ‘তাদের কেউই ওই বাসের যাত্রী হওয়ার প্রমাণ হিসেবে বাসের টিকিট আনেননি। এ দুজন সারা জীবনে এবং ঘটনার পর থেকে অসংখ্যবার বাসে ওঠার কথা। একটি নির্দিষ্ট দিনে কোন বাসে উঠেছিলেন তা মনে রাখা দুঃসাধ্য। তারা যদি ঘটনার পর কোনো ম্যাজিস্ট্রেট কিংবা তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে সাক্ষ্য দিতেন, তাহলে অনেকটাই বিশ্বাসযোগ্য হতো।

‘এ ছাড়া শাহনেওয়াজ সাক্ষ্য দেয়ার সময় বলেছেন, দুর্ঘটনাস্থলে কোনো বাঁক নেই। আর তিনি ছিলেন বাসের বাঁ দিকে চার আসন পেছনে। ফলে ডান দিকের বিষয় দেখা সম্ভবপর নয়। আর নাসরিন আশরাফীও বলেছেন, সেখানে বাঁক ছিল না। তার চশমার পাওয়ার ৩.৫০। ক্ষীণ দৃষ্টিশক্তির একজন বয়স্ক মহিলার পক্ষে দীর্ঘদিনের আগের বৃষ্টির মধ্যে সংঘটিত কোনো ঘটনার সঠিক বিবরণ দেয়া আদৌ সম্ভবপর নয়।’

মাইক্রোবাসের বেঁচে যাওয়া আরোহীরা যা বলছেন : ভয়াবহ ওই দুর্ঘটনায় মারাত্মক আহত হয়েছিলেন চিত্রশিল্পী ঢালী আল মামুন।

তিনি বলেন, ‘মাইক্রোবাসটি ছিল তারেকের, যেটা শুটিংয়ের জন্য ব্যবহার করা হতো। সেদিন আমরা ঢাকায় ফিরছিলাম। চালকের পরের সিটটা ব্যাক টু ব্যাক করা ছিল। তার পরের সিটটা যেভাবে থাকে, সেভাবেই ছিল। আমরা পাঁচজন সামনাসামনি বসেছিলাম।

‘তারেক আর ক্যাথরিন চালকের পেছনে ছিল। আর উল্টো দিকে মিশুক আমার ডান পাশে ছিল; বাঁ পাশে ছিল আমার স্ত্রী। সামনে দুই জন ছিল। তার মধ্যে একজন ছিল তারেকের সহকারী পরিচালক। আমরা মোট ১০ জন ছিলাম।’

দুর্ঘটনার সময়ের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সেদিন বৃষ্টি হচ্ছিল, সে কারণে আমাদের গাড়ির গতি ৩০ থেকে ৪০ কিলোমিটারের বেশি ছিল না। আমরা তখন একটি খাবার দোকান খুঁজছিলাম। সে কারণে গাড়ি স্লো ছিল। আমাদের গাড়ি কখনোই রাস্তার সাদা লাইন ক্রস করেনি।

‘দুর্ঘটনায় গাড়িতে ডান পাশে বসা পাঁচজন স্পট ডেট হয়। আর বাকিরা আহত হই। তার মধ্যে আমার অবস্থা সব থেকে খারাপ ছিল। পরে আমাকে ব্যাংকক নিয়ে যেতে হয়েছিল।’

অধ্যাপক সামছুল হকের গবেষণার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, ‘যেহেতু গবেষণাটি আমি দেখিনি, সুতরাং এ বিষয়ে আমার কোনো বক্তব্য নাই।’

অন্যদিকে মাইক্রোবাসে থাকা প্রোডাকশন কন্ট্রোলার সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা লোকেশন দেখে ফিরছিলাম। মোটামুটি একটা লেভেলে বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি গাড়ির একেবারে পেছনের সিটে হাতের বাম পাশে ছিলাম। সামনের সিটগুলা ঘুরানো ছিল। চালকের পাশে বসা ছিলেন মনীশ রফিক। উনি কিছুই দেখেননি, কিছুই বলতে পারেননি। তার কারণ উনি পেছনের দিকে তাকানো ছিলেন।’

সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি যেখানে বসা ছিলাম সেখান থেকে একদম পরিষ্কার সামনে দেখা যাচ্ছিল। তারেক ভাই এবং ক্যাথরিন আপার মাঝখান দিয়ে একটা ফাঁকা ছিল। সেখান দিয়ে সামনে দেখা যাচ্ছিল। সে সময় তারেক ভাই কথা বলছিলেন। আমি দেখলাম, আমাদের সামনে একটা ছোট পিকআপের মতো আছে। দেখলাম একটা ছোট মিনিবাস আমাদের অপর দিক থেকে আসছে। আমরাও ওই পিকআপটার পিছনে আছি। এ সময় পেছন থেকে একটা বড় বাস আমাদের কাছাকাছি এসেছে।

‘আমাদের গাড়ি তখন বাম পাশে যে সাদা দাগ থাকে তার মধ্যেই ছিল। যখন আমাদের গাড়িটি কার্ব হয়ে ঢুকছিল, তখন উল্টো দিক থেকে একটা বাস এসে সজোরে ধাক্কা দেয়। তখন আমি দুই সিটের মাঝখানে যে জায়গা থাকে সেখানে পড়ে যাই। এরপর আমার আর কিছু মনে নাই। পরে আমাকে যারা তুলেছে তারা বলেছেন, আমার ওপর তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীর পড়েছিলেন। ক্যাথরিন আপা আমাকে নাকি টেনে বের করে মানিকগঞ্জ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।’

আলোচিত ওই দুর্ঘটনার পর ঘিওর থানার তখনকার উপপরিদর্শক লুৎফর রহমান একটি মামলা করেন। অন্যদিকে ঘটনার দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি নিহতদের পরিবারের সদস্যরা মানিকগঞ্জে মোটরযান অর্ডিন্যান্সের ১২৮ ধারায় বাসমালিক, চালক ও ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলা করেন।

পরে সংবিধানের ১১০ অনুচ্ছেদ অনুসারে জনস্বার্থে হাইকোর্টে বদলির নির্দেশনা চেয়ে আবেদন করলে ক্ষতিপূরণের মামলা দুটি হাইকোর্টে চলে আসে।

দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ ডিসেম্বর তারেক মাসুদের পরিবারকে ৪ কোটি ৬১ লাখ ৪৫২ টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে বাসমালিক, চালক ও সংশ্লিষ্ট ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিকে নির্দেশ দেন বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি কাজী ইজারুল হক আকন্দের হাইকোর্ট বেঞ্চ। রায়ের কপি পাওয়ার তিন মাসের মধ্যে টাকা পরিশোধ করতে বলা হয়।

ক্ষতিপূরণের অর্থের মধ্যে বাসের (চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স) তিন মালিকের ৪ কোটি ৩০ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫২ টাকা, বাসচালক জামির হোসেনের ৩০ লাখ টাকা এবং রিলায়েন্স ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির ৮০ হাজার টাকা দেয়ার কথা। এ টাকা ক্যাথরিন মাসুদ, তারেক মাসুদের ছেলে নিষাদ মাসুদ ও বৃদ্ধা মা নুরুন নাহার পাবেন বলে রায়ে বলা হয়।

হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করে বাস মালিকপক্ষ, সেটি এখন আপিলে চূড়ান্ত নিষ্পত্তির অপেক্ষায়। অন্যদিকে মিশুক মুনীরের পরিবারের ক্ষতিপূরণ চেয়ে করা মামলাটি হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।

মিশুক মুনীরের ছোট ভাই আসিফ মুনীর বলেন, ‘আমাদের ক্ষতিপূরণের মামলাটি এখনও হাইকোর্টে পেন্ডিং। কোভিডের কারণে তো আর শুনানি হয়নি। এ ছাড়া দুর্ঘটনা সংবলিত মামলাটিও বিচারিক আদালত পেরিয়ে এখন হাইকোর্টে পেন্ডিং আছে।’

তিনি বলেন, ‘ক্ষতিপূরণের বিষয়টি আসলে একটা প্রতীকী উদাহরণ হিসেবে থাকবে ভবিষ্যতের কোনো ভুক্তভোগী পরিবারের জন্য। ক্ষতিপূরণের রায় পাওয়া যায় এমন একটি আস্থা তৈরি হবে। ক্ষতিপূরণ চেয়ে মানুষ মামলা করতে আসবে।’

অধ্যাপক সামছুল হকের গবেষণার বিষয়ে জানতে চাইলে আসিফ মুনীর বলেন, ‘এ বিষয়ে আমাদের আলাদা কোনো বক্তব্য নাই। এটা উনার একটা গবেষণা, সেখানে তিনি কিছু ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার যৌক্তিকতা থাকতে পারে, কিন্তু যে দুজন চালকের কথা বলা হচ্ছে তারা দুজনই এখন আর বেঁচে নাই।

‘তারা যেহেতু বেঁচে নাই, তা ছাড়া আমি যেটুকু জানি যারা মাইক্রোবাসে ছিলেন তারা নিজেদের কথাবার্তার মধ্যেই ছিলেন, কাজেই তারা তো আর কেউ জানতেন না দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে কিছুক্ষণের মধ্যে। তাৎক্ষণিকভাবে ওইখানে কী হয়েছিল, কোন গাড়ি কার আগে গিয়েছিল, সেটা হয়তো উনাদের পক্ষেও বলা মুশকিল।’

আসিফ মুনীর বলেন, ‘বুয়েটের প্রফেসর একটি ছক এঁকে জিনিসটা দেখিয়েছেন, যেটা আমি দেখেছি। এখন আমরাও যখন ক্লেইম করেছি, আমাদের ক্ষোভের জায়গাটা মূলত ছিল হাইওয়েতে একটি সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছে সে জায়গায়টা বেশ বাঁকা।

‘দুর্ঘটনার পরে সেখানে কিছু সাইনবোর্ড লাগিয়েছে। সড়ক প্রশস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া হাইওয়েগুলো ফোর লেন করা হয়েছে। এটা জরুরি। ট্রাফিক আইন মানা হচ্ছে কি না, সেটা মনিটর করা জরুরি।’

অধ্যাপক সামছুল হকের গবেষণা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘প্রফেসর সাহেব যেটা বলেছেন, তিনি তার গবেষণা থেকে বলেছেন। এটা শতভাগ সত্য বলেও তো আমরা ধরে নিতে পারব না, আর আমরা এই বিতর্কে জড়াতেও চাই না। ওইখানে সে সময়ে কার দোষ ছিল বা না ছিল, সেটা আমাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। এখন ব্যাখ্যা আসতেই পারে।’

তিনি বলেন, ‘এখন এমন যদি হতো যে, মাইক্রোবাসের চালক বেঁচে আছেন আর তার বিরুদ্ধে বাসমালিক মামলা করতে পারতেন, তাহলে কী হতো, মামলা-পাল্টা মামলায় কোথায় যেত বিষয়টি। এই আলোচনায় গেলে এখন যে খুব লাভ হবে সেটা আমার কাছে মনে হয় না। এখন মূল ফোকাস হওয়া উচিত এই ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা যাতে না ঘটে সে ব্যবস্থা করা দরকার।’

বিষয়টি নিয়ে তারেক মাসুদের স্ত্রী ক্যাথরিন মাসুদের সঙ্গেও যোগাযোগের চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা, তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকায় কথা বলা সম্ভব হয়নি।

মামলার বিষয়ে ব্যারিস্টার সারা হোসেনের বক্তব্যও জানার চেষ্টা করেছে নিউজবাংলা। তবে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি; খুদেবার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া দেননি।

ড. সামছুল হক মামলায় পক্ষভুক্ত হতে পারবেন কি না, সিদ্ধান্ত হাইকোর্টের : আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হককে প্রায় দেড় বছর আগে প্রেজেন্টেশন দিয়েছিলেন অধ্যাপক সামছুল হক। বিষয়টি আইনমন্ত্রীও নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘দেখেন আমি একটা জিনিস পরিষ্কার করে দিতে চাই, ব্যাপারটা হচ্ছে আদালতে যেটা হচ্ছে, সেখানে আমার কিন্তু কোনো এখতিয়ার নাই। উনি (ড. সামছুল হক) স্থানীয় দুর্ঘটনা কমাতে টেকনিক্যাল সাইট উল্লেখ করেছেন।

‘দোষ নির্ণয় করার জন্য তিনি যে জিনিসগুলোতে নজর দিতে বলেছেন, সেটা বিবেচনায় আছে। তার কারণ আমরা যদি দুর্ঘটনা কমাতে পারি, তাহলে দেশের লাভ। তবে মামলা যেটা আছে, মামলার ব্যাপারে কিন্তু আমার কোনো বক্তব্য নাই।’

এ মামলায় অধ্যাপক সামছুল হক পক্ষভুক্ত হয়ে সাক্ষ্য দিতে চেয়েছেন। সে বিষয়টি তোলার পর মন্ত্রী বলেন, ‘এটার বিষয়ে আমার কোনো এখতিয়ার নাই। এটা হাইকোর্টের এখতিয়ার। হাইকোর্টে উনারা দরখাস্ত দেবেন, হাইকোর্ট আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।’

বাস মালিকও সর্বস্বান্ত : চুয়াডাঙ্গা ডিলাক্স বাসের মালিক মুজিবুল হক খোকন জানান, জামির হোসেন ছিলেন তাদের পরিবারের সদস্যের মতো। দুর্ঘটনার পরপরই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। ধীরে ধীরে আক্রান্ত হন বিভিন্ন শারীরিক জটিলতায়।

তিনি বলেন, ‘সাজার রায় হওয়ার পর থেকেই তিনি কারাগারে বন্দি ছিলেন। হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ বেশ কয়েকটি জটিল রোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন। নিয়মিত অনেক ওষুধ খেতে হতো।

‘আমরা তাকে জামিনে মুক্ত করার জন্য হৃদরোগবিষয়ক যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে আদালতে ছোটাছুটি করেছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। কারাগারে থেকেই তিনি মারা যান।’

মামলার পেছনে এক দশক ধরে ছুটতে ছুটতে নিজেও এখন নিঃস্ব বলে জানান মুজিবুল হক খোকন।

তিনি বলেন, ‘স্যারের (ড. সামছুল হক) সাক্ষ্য নেয়ার জন্য আমরা হাইকোর্টে আবেদন করেছি, কিন্তু করোনার কারণে এ বিষয়ে কোনো গতি নেই। কোর্ট চালু হলে আমরা আবার পদক্ষেপ নেব।’

মামলার সবশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে বাসমালিকের পক্ষের আইনজীবী আব্দুস সোবহান নিউজবাংলাকে বলেন, ‘ক্ষতিপূরণ চেয়ে দুটি মামলার মধ্যে তারেক মাসুদের পক্ষের মামলাটির বিষয়ে হাইকোর্ট রায় দিয়েছে। এর বিরুদ্ধে আমরা আপিল করেছি, যা আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে। আর মিশুক মুনীরের পরিবার থেকে যে মামলাটি করা হয়েছে সেটি হাইকোর্টে পেন্ডিং আছে।

‘এ মামলায় আমরা প্রফেসর সাহেবকে (ড. সামছুল হক) সাক্ষী হিসেবে নাম দিয়েছি। বিচারকাজ শুরু হলে আদালত যে দিন ডাকবে, সে দিন তিনি সাক্ষ্য দেবেন।’

ফৌজদারি মামলাটির বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ফৌজদারি মামলা আন্ডার ট্রায়ালে থাকা অবস্থায় যদি আসামি মারা যায়, তাহলে ওই মামলা তার বিরুদ্ধে আর চলবে না। বাস চালককে বিচারিক আদালত যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছিল। সে মামলায় আমরা হাইকোর্টে আপিল করেছি। এরপর চালক জেলখানায় মারা গেলেন।

‘এখন আপিলটা আর চলবে না। আপিলটা এখন ডিসপোজাল হিসেবে গণ্য হবে। ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট থেকে সর্বোচ্চ আদালত পর্যন্ত কোথাও মৃত ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রসিডিং চলতে পারে না।’

জামিরের পরিবারে ক্ষোভ-হতাশা : বাসচালক জামির হোসেনের বাড়ি চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দৌলতদিয়া স্কুলপাড়া এলাকায়। স্থানীয়রা জানান, দরিদ্র জীবনযাপন করা জামিরের স্ত্রীর নাম রশিদা বেগম। এ দম্পতির একমাত্র মেয়ের নাম আরিফা খানম।

বসতভিটা ছাড়া জামিরের আর কোনো জমিজমা নেই। ২০০৮ সালে মেয়েকে বিয়ে দেন এক কলেজশিক্ষকের সঙ্গে। জামিরের মৃত্যুর পর জামাতার বাড়িতেই আছেন স্ত্রী রশিদা বেগম।

কারাগারে জামিরের মৃত্যু নিয়ে পরিবারের সদস্যদের রয়েছে চাপা ক্ষোভ ও অভিমান। তারা জানান, জামির ৩৫ বছর ধরে গাড়ি চালিয়েছেন। মানিকগঞ্জের দুর্ঘটনাটি ছাড়া আর কখনো বড় কোনো দুর্ঘটনার মুখে পড়েননি। দুর্ঘটনার পর তাকে মেহেরপুরের গাংনীর চৌগাছা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তখন তিনি তিন মাস জেলে ছিলেন। সে সময় বারবার বলতেন, তার কিছুই হবে না, কারণ তিনি নির্দোষ।

জামিরের স্ত্রী রশিদা বেগম বলেন, ‘আমাদের খুব কষ্টের সংসার। কোনো জমিজমা নেই। খুব কষ্টে মামলার খরচ চালাতাম। তার ডায়াবেটিস ছিল, তেমন কিছু খেতে পারতেন না।’

আবেগাপ্লুত রশিদা বলেন, ‘জেলে যাওয়ার পর চিন্তায় চিন্তায় আমার স্বামীর জীবনটা চলে গেল। সেই থেকে আমাদের বাড়ি থেকে আনন্দ চলে গেছে। কেউ আর হাসে না। যে যাবার সে চলে গেছে। মারা যাওয়ার এক বছর পর এসে এখন এসব বলে বা নিউজ করে কী হবে? তখন তো কেউ আসেনি।’

মানিকগঞ্জে দুর্ঘটনার পর স্ত্রীর সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেন জামির হোসেন।

সেই সময়ের কথা জানিয়ে রশিদা বলেন, ‘তিনি কাঁপতে কাঁপতে বলেন, আমার গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। আমি অনেকবার হর্ন দিছি। গাড়ি রাস্তার পাশের খাদের দিকে নিয়ে গেছি।

‘আমার গাড়িতে অনেক যাত্রী ছিল। মাইক্রোবাসটি ভুল পথে এসে দ্রুত আমার গাড়িতে ধাক্কা মেরে দিল। আমার গাড়ি রাস্তার ঠিক দিকেই ছিল। মনে হচ্ছে খুব দামি মানুষ এরা। আমি পরে কথা বলব।’

পরিবারের সদস্যরা জানান, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পর মুষড়ে পড়েন জামির। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সুষ্ঠু বিচার পাইনি। আমি অপরাধী না হয়েও অপরাধী হলাম।’

কারাগারে মারা যাওয়ার এক সপ্তাহ আগে স্ত্রী রশিদা বেগমের সঙ্গে শেষবার মোবাইল ফোনে জামিরের কথা হয়।

তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার দুই নাতিকে দেখেশুনে রেখো। কোনো চিন্তা করো না। আমি নির্দোষ প্রমাণিত হবই। মেয়ে জামাইকে চিন্তা করতে নিষেধ করো। আমি ভালো আছি।’

জামিরের জামাতা ইব্রাহীম হোসেন বলেন, ‘প্রথম দিকে জামিন হওয়ার পর আমার শ্বশুর আবারও গাড়ি চালাতেন। একবার গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে পায়ে আঘাত পান। সেই অবস্থাতেও আদালতে হাজিরা দিতে হয়েছে। মেডিক্যাল রিপোর্ট দেয়া হলেও তা গ্রহণযোগ্য হয়নি।’

জামির হোসেন মারা যাওয়ার পরদিন ২ আগস্ট সকালে জানাজা শেষে তাকে চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে দাফন করা হয়।

জামিরের একমাত্র মেয়ে আরিফা খানম বলেন, ‘বাবা জামিন পেলে বাড়িতে এসে সবার সঙ্গে ঈদ করার কথা ছিল, কিন্তু সেই ঈদের দিন খবর এলো তিনি মারা গেছেন।’

Share