রেকর্ড পরিমাণ মদ উৎপাদনের বছরে কেরুর লাভ ৮৩ কোটি টাকা

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি : চুয়াডাঙ্গার কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আওতায় মোট পাঁচটি খাতের মধ্যে চিনি খাতে লাগাতার লোকসান দিয়ে থাকে। কিন্তু মদ ও অন্যান্য খাত থেকে যা আয় হয় তা সমন্বয় করে প্রতিবছর কোম্পানি লাভের মুখে দেখে।

মদ উৎপাদনে অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে রাষ্ট্রায়ত্ত্ব প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি (বাংলাদেশ)। গেল অর্থবছরে মদসহ পাঁচটি খাতের আয়-ব্যয় সমন্বয় করে ৮৩ কোটি টাকা লাভ হয়েছে।

কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কেরু কোম্পানি মোট ৫৯ লাখ ৬৭ হাজার লিটার মদ উৎপাদন করেছে। এর মধ্যে ১৬ লাখ ৪২ হাজার ৬১৯ লিটার বিদেশি মদ ও ৩২ লাখ ৮০ হাজার ২২০ লিটার বাংলা মদ। এছাড়া ডিনেচার স্পিরিট রেকটিফাইড স্পিরিট উৎপাদন করে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি।

এ অর্থবছরে ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার প্রুফ লিটার মদ বিক্রি হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে তিন লাখ ২৫ হাজার প্রুফ লিটার বেশি। এ থেকে প্রতিষ্ঠানটি আয় করেছে ৪৩৯ কোটি টাকা; লাভ হয়েছে ১৫২ কোটি টাকা। যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৩ কোটি টাকা বেশি।

মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন আরও বলেন, গত বছর ডিস্টিলারি খাতে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লাভ করেছিল ১৩২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এ বছর লাভ দাঁড়াবে ১৫০ কোটি টাকার ওপরে।

কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, দেশে কেরুর মদের ১৩টি ওয়্যার হাউস ও ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চুয়াডাঙ্গার দর্শনায় তিনটি বিক্রয়কেন্দ্র আছে। কেরু কোম্পানি উৎপাদিত মদের মধ্যে আছে- ইয়েলো লেবেল মল্টেড হুইস্কি, গোল্ড রিবন জিন, ফাইন ব্র্যান্ডি, চেরি ব্র্যান্ডি, ইম্পেরিয়াল হুইস্কি, অরেঞ্জ কুরাকাও, জরিনা ভদকা, রোসা রাম ও ওল্ড রাম।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন বলেন, “মদ বিক্রিতে রেকর্ড লাভ ছাড়াও কোম্পানির আরও একটি বড় সফলতা এসেছে। সেটি হলো: কেরুর কৃষি খামার ইউনিটটি ৩০ বছর পর এ বছর মুনাফা করেছে।”

কোম্পানির কর্মকর্তারা আশা করছেন, এখন থেকে কৃষিখাতে নিয়মিত লাভ করবে কেরু।

ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে কোম্পানিটির মোট পাঁচটি খাতের আয়-ব্যয় সমন্বয় করে ৮৩ কোটি টাকা লাভ হয়েছে; ভ্যাট ট্যাক্স পরিশোধ করার পর নিট আয় হবে ৬০ কোটি টাকার মত।

ছয়টি খাতের মধ্যে আছে- মদ, চিনি, বাণিজ্যিক কৃষি খামার, আকন্দবাড়িয়া পরীক্ষামূলক কৃষি খামার ও জৈব সার।

চুয়াডাঙ্গার অবস্থিত কেরু অ্যান্ড কোম্পানির আওতায় ওই পাঁচ খাতের মধ্যে চিনিতে লাগাতার লোকসান দিয়ে থাকে। কিন্তু মদ ও অন্যান্য খাত থেকে যা আয় হয় তা সমন্বয় করে প্রতিবছর কোম্পানি থাকে লাভজনক পর্যায়ে।

মোশারফ হোসেন আরও জানান, প্রতিষ্ঠানটির পাঁচটি ইউনিটের মধ্যে একমাত্র চিনিকল ছাড়া সব ইউনিটে মুনাফা করেছে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি। কেরুর কৃষি খামার ইউনিটটি ৩০ বছর পর এ বছর মুনাফা করেছে। গত অর্থবছরে প্রায় তিন কোটি ৪৪ লাখ টাকা লোকসান ছিল; এ বছর ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা লাভ হবে।

গত বছর আকন্দবাড়িয়া পরীক্ষামূলক কৃষি খামারে লোকসান ছিল ২৪ হাজার টাকা। এ বছর সেখানে লাভ হবে ১৫ লাখ টাকা।

এ ছাড়া জৈব সার কারখানায় গত বছর লাভ ছিল এক লাখ ৪৬ হাজার টাকা। এ বছর সেখানে লাভ হবে ১৪ লাখ টাকা।

তিনি আরও জানান, ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র ৪২ দিন চালু ছিল চিনি উৎপাদন। আখের অভাবে ৪২ দিন পর চিনি উৎপাদন বন্ধ করে দেওয়া হয়। চিনিখাতে এবার লোকসান হয়েছে ৬৮ কোটি ১৬ লাখ টাকা।

Share