আওয়ামী লীগ দুর্বল হলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য, কাণ্ডারি হুঁশিয়ার

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগকে ছলে-বলে-কৌশলে নিশ্চিহ্ন বা দুর্বল করতে পারলেই পরাজিত শক্তির উত্থান অনিবার্য। কাজেই কাণ্ডারি হুঁশিয়ার। অপ্রিয় হলেও সত্য,আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে খর্ব করার এবং অর্থনৈতিক মুক্তির আকাঙ্ক্ষাকে নস্যাৎ করার ষড়যন্ত্র আজও থামেনি। ষড়যন্ত্রকারীরা এখনো ওত পেতে বসে আছে, কীভাবে বাংলাদেশের অগ্রসরমান অভিযাত্রাকে স্তব্ধ করা যায়। একাত্তরের পরাজিত শক্তি ও পঁচাত্তরের ঘাতক এবং তাদের দোসররা এখনো তৎপর রয়েছে পরাজয়ের বদলা নিতে। সুযোগ পেলেই তারা আঘাত হানবে। তাদের সামনে একমাত্র বাধা আওয়ামী লীগ।

স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সোমবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, যুগ যুগ ধরে আমাদের এই ভূখণ্ড ঔপনিবেশিক শক্তির লক্ষ্যবস্তু ছিল। নানা সময়ে বিদেশি শক্তিরা এ দেশ নিজেদের কবজায় নিয়ে শাসন করেছে, সম্পদ লুট করেছে, শোষণ করেছে। কোনদিনই বাঙালি পরিপূর্ণ স্বাধীনতার স্বাদ পায়নি। জাতির পিতার নেতৃত্বে ২৩ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম আর ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি ১৯৭১ সালে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠনের মাধ্যমে প্রথমবারের মতো সম্পূর্ণভাবে মুক্তি লাভ করে।

শেখ হাসিনা বলেন, বাঙালি বীরের জাতি। যুদ্ধ করে আমরা এ দেশের স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়- জাতির পিতা নির্দেশিত এই বৈদেশিক নীতি অনুসরণ করেই আমরা দেশ পরিচালনা করি। আমাদের কোনো প্রভু নেই, আছে বন্ধু। তাই কারও রক্তচক্ষু বাঙালি জাতি কোনোদিন মেনে নেবে না। প্রয়োজন হলে বুকের রক্ত দিয়ে বাঙালি জাতি দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব-সম্মান রক্ষা করবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী করার জন্য জনগণকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের লক্ষ্য যে উন্নয়ন-অগ্রগতি আমরা এখন পর্যন্ত সাধন করেছি, তা আরও এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা। যে বাংলাদেশ হবে জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্রমুক্ত অসাম্প্রদায়িক সোনার বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৫৪তম দিবসে আসুন, সকল কুট-কৌশল-ষড়যন্ত্রের বেড়াজাল ছিন্ন করে ঐক্যবদ্ধ বাংলাদেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে আরও সামনে এগিয়ে নিয়ে যাই।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে বিশ্বের ৩৫তম বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। দারিদ্রের হার ২০০৬ সালের ৪১.৫ শতাংশ থেকে হ্রাস পেয়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৮.৭ শতাংশে এবং হতদরিদ্রের হার ২৫.১ হতে ৫.৬ শতাংশে কমে এসেছে। আজ খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। বর্তমানে দানাদার খাদ্যশস্য উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪ কোটি ৯৩ লাখ মেট্রিক টন টন। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান, সবজি ও পেঁয়াজ উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে উন্নীত হয়েছে। মাছ-মাংস, ডিম, শাকসবজি উৎপাদনেও বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ দ্বিতীয় স্থানে এবং ইলিশ উৎপাদনকারী ১১টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম। অব্যাহত নীতি সহায়তা ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিক্ষেত্রে এসব সাফল্য এসেছে।

তিনি বলেন, শিশু মৃত্যুর হার নেমে এসেছে প্রতি হাজারে ২১ জনে এবং মাতৃমৃত্যুর হার প্রতি লাখে ১৬১ জনে। মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি পেয়ে ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে। পদ্মা সেতু, ঢাকায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল, শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তৃতীয় টার্মিনাল, বিভাগীয় শহরগুলোর সাথে চার বা তারও বেশি লেনের মহাসড়ক চালুসহ নানা অবকাঠামো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করেছে। দেশের শতভাগ এলাকা বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে।

সরকারপ্রধান বলেন, এবারের রমজান মাসকে সামনে রেখে আমরা বেশ আগে থেকেই চিনি, ছোলা, ডাল, ভোজ্যতেলসহ কয়েকটি পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ গড়ে তুলি। একচেটিয়া বাজার তৈরি করে অধিক মুনাফা যাতে কেউ করতে না পারে, সেজন্য ভারত থেতে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ এবং প্রায় সমপরিমাণ আলু আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। পাশাপাশি রমজান মাসের শুরু হতে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য রাজধানী ঢাকার অন্তত ২৫টি স্থানে ট্রাকে করে মাছ, মাংস, ডিম এবং দুধ সুলভ মূল্যে বিক্রি করা হচ্ছে। টিসিবি প্রথম পর্যায়ে সারাদেশের ১ কোটি কার্ডধারী পরিবারের জন্য সুলভ মূল্যে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি এবং ছোলা বিতরণ করছে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ঢাকা ও আশেপাশের এলাকার কার্ডধারী পরিবারের জন্য চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ছোলা ও খেজুর বিতরণ করছে। ঈদ উপলক্ষে সারাদেশের ১ কোটি ৬২ হাজার ৮০০ পরিবারের জন্য সরকার এক লাখ ৬২৮ মেট্রিক টন চালের বিশেষ বরাদ্দ দিয়েছে। প্রতি পরিবার বিনামূল্যে ১০ কেজি করে চাল পাবেন।

তিনি বলেন, আমরা এ বছর সরকারিভাবে এবং দলগতভাবে ইফতার পার্টির আয়োজন নিরুৎসাহিত করেছি। আওয়ামী লীগ ও এর সকল সহযোগী সংগঠন তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গরিব-দুঃখীদের ইফতারসামগ্রী বিতরণ করছে। রমজান মাসের শুরুতে খেজুর, আমদানি করা ফল, লেবু, তরমুজ, পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম কিছুটা চড়া ছিল। তবে এসব পণ্যের দাম কয়েকদিনের মধ্যেই স্বাভাবিক ও সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। জিনিসপত্রের দাম বাড়লে সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে সীমিত আয়ের মানুষের কষ্ট হয়। আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি মানুষের কষ্ট লাঘবের।

আওয়ামী লীগ জন্মের পর থেকেই গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং মানুষের মৌলিক অধিকার আদায়ের লড়াই করে আসছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এসব লড়াইয়ের অংশ হিসেবেই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে পাকিস্তানের স্বৈরশাসন, শোষণ-নির্যাতনের নাগপাশ থেকে মুক্তিলাভ করে সৃষ্টি হয় বাংলাদেশের। সাধারণ মানুষের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য তিনি প্রণয়ন করেন বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সংবিধান- যেখানে চার মূলনীতি হিসেবে যুক্ত হয়েছে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতা। ১৯৭৫-এর পর আইয়ুব-ইয়াহিয়ার অনুকরণে জিয়াউর রহমান ক্ষমতা দখল করলে আওয়ামী লীগই প্রথম এগিয়ে আসে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে। পরের একুশ বছর আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতা-কর্মী রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে গণতন্ত্র এবং ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ১৯৮১ সালে ৬ বছরের নির্বাসন শেষে দেশে ফিরে আসার পর ভোট ও ভাতের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে গিয়ে আমাকেও বার বার মৃত্যুর মুখোমুখি এবং কারাবন্দী হতে হয়েছে। আমাকে হত্যার জন্য কমপক্ষে ১৯ বার সশস্ত্র আক্রমণ চালানো হয়।

তিনি বলেন, হাজারও শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র আওয়ামী লীগ কখনই ভূলুণ্ঠিত হতে দেবে না। উচ্চ আদালতের রায়ের প্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের পথ আমরা চিরতরে বন্ধ করে দিয়েছি। দেশের সকল গণতান্ত্রিক দল এবং সাধারণ মানুষকে গণতন্ত্রকে সমুন্নত রাখার জন্য অতন্ত্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করতে হবে। মনে রাখতে হবে-আমাদের সংবিধানই গণতন্ত্রকে সুরক্ষা দেওয়া ও সমুন্নত রাখার সর্বোচ্চ রক্ষাকবচ। সংবিধানকে পাশ কাটিয়ে বা পদদলিত করে কোন কিছু করার চেষ্টার অর্থ হচ্ছে, গণতন্ত্রকে খর্ব করা।

আওয়ামী লীগ সরকার সব সময়ই সংবিধানকে সমুন্নত রেখে রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় সংসদকে আমরা রাষ্ট্রের সকল কার্যক্রমের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। স্থানীয় সরকারের সকল পর্যায়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা স্থানীয় পর্যায়ের উন্নয়ন নিশ্চিত করা হয়েছে।

Share