বিদায়ী অর্থবছরে প্রবাসী আয় এসেছে প্রায় ২৪ বিলিয়ন ডলার

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : গত ৩০ জুন শেষ হওয়া বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার বা ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মূদ্রায় যার পরিমাণ প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হিসাবে ২ লাখ ৮২ হাজার ২০০ কোটি ১৮ লাখ ৬০ হাজার টাকা। এর মধ্যে শেষের মাস গত জুনে এসেছে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার বা ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বাংলাদেশী মূদ্রায় যার পরিমাণ প্রতি ডলার ১১৮ টাকা হিসাবে ২৯ হাজার ৯৯১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। যা ৪৭ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। কোনো একক মাসে এত প্রবাসী আয় গত চার বছরে দেশে আসেনি। এর আগে ২০২০ সালের জুলাইয়ে ২ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন বা ২৫৯ কোটি ৮২ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এসেছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল একটি সূত্র এতথ্য নিশ্চিৎ করেছে।

বিদায়ী ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স আসে ২ হাজার ৩৯১ কোটি ৫২ লাখ ৭০ হাজার বা ২৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স এসেছিল ২ হাজার ১৬১ কোটি ৭ লাখ ৩০ হাজার বা ২১ দশমিক ৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১-২২ অর্থবছরে ২ হাজার ১০৩ কোটি ১৬ লাখ ৮০ হাজার বা ২১ দশমিক ০৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ৭৭ লাখ ১০ হাজার বা ২৪ দশমিক ৭৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৯-২০ অর্থবছরে ১ হাজার ৮২০ কোটি ৫০ লাখ ১০ হাজার বা ১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০-২১ অর্থবছরে মহামারী করোনার কারণে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক আজ জুন মাসের রেমিট্যান্সের হিসাব প্রকাশ করেছে। তাতে দেখা যাচ্ছে জুন মাসের ৩০ দিনে ২৫৪ কোটি ১৬ লাখ ৫০ হাজার বা ২ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রতি ডলার সমান ১১৮ টাকা ধরে যার পরিমাণ দাঁড়ায় ২৯ হাজার ৯৯১ কোটি ৪৭ লাখ টাকা। ঈদের আগে দুই সপ্তাহে প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল ১১ কোটি ৭৬ লাখ ২৪ হাজার ২৮৫ মার্কিন ডলার। ঈদের পর ২১ জুন অবধি প্রতিদিনের প্রবাসী আয় কমে দাঁড়ায় ৯ কোটি ১১ লাখ ৬০ লাখ ৪৭৬ ডলারে। মাস শেষে প্রতিদিনের গড় দাঁড়ায় ৮ কোটি ৪৭ লাখ ২১ হাজার ৬৬৬ ডলার।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, সাধারণত রোজা, ঈদ, বাংলা নববর্ষকে ঘিরে প্রবাসীরা অন্য সময়ের চেয়ে বেশি অর্থ দেশে পাঠিয়ে থাকেন। তবে জুন মাসে রেমিটেন্সের এই উল্লম্ফনের পেছনে ঈদ ছাড়াও ‘অন্য কারণ’ রয়েছে। এবার গত মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহে রোজা শুরু হলে এপ্রিলের মাঝামাঝি ঈদ পালিত হয়। এপ্রিলে রেমিটেন্সে ২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধির পরে মে মাসে আরো বাড়ার পেছনে টাকার অবমূল্যায়ন কাজ করে বলে মনে করছেন ব্যাংকাররা। গত ৮ মে একদিনে ৭ টাকা বাড়ে ডলারের দাম। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল বা আইএমএফ এর শর্ত বাস্তবায়নে বাজারভিত্তিক বিনিময় হার চালুর অংশ হিসেবে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। সেদিন ডলারের বিপরীতে টাকার মান ১১০ টাকা থেকে নির্ধারণ হয় ১১৭ টাকা। খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, এরই ধারাবাহিকতায় বর্তমানে রেমিট্যান্স প্রবাহে জোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যানুযায়ী, জুন মাসের ৩০ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৫০ কোটি ৫৬ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৯১ কোটি ৩৮ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ৭২ লাখ ৯০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। একক ব্যাংক হিসাবে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ৫৭ কোটি ২০ হাজার মার্কিন ডলার প্রবাসী আয় এসেছে। গত অর্থবছরে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৬১২ কোটি ৮২ লাখ ৪০ হাজার বা ৬ দশমিক ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বিদেশি উরি ব্যাংক, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ও হাবিব ব্যাংকের মাধ্যমে কোনো প্রবাসী আয় আসেনি। আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, সিটিজেন ব্যাংক, কমিউনিটি ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি ব্যাংক ও বিডিবিএল ব্যাংকের মাধ্যমেও কোন প্রবাসী আয় আসেনি।
উল্লেখ্য, প্রবাসী বাংলাদেশি রেমিট্যান্স যোদ্ধারা গত মে মাসে ২২৫ কোটি ৩৮ লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছেন। আর এপ্রিলে দেশে ২০৪ কোটি ৪২ লাখ ৩০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় পাঠায়। গত মার্চ মাসের পুরো সময়ে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা মোট ১৯৯ কোটি ৭০ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার, ফেব্রুয়ারি মাসে ২১৬ কোটি ৪৫ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, জানুয়ারি মাসে ২১১ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, ডিসেম্বর মাসে ১৯৯ কোটি ১২ লাখ ৬০ হাজার মার্কিন ডলার, নভেম্বর মাসে ১৯৩ কোটি ৪০ হাজার মার্কিন ডলার, অক্টোবর মাসে ১৯৭ কোটি ১৪ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি ৪৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, আগস্ট মাসে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার, এবং জুলাই মাসে ১৯৭ কোটি ৩১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন।

এদিকে জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো বিএমইটির সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মে পর্যন্ত প্রায় ১১ লাখ ৪২ হাজার মানুষ কাজের জন্য দেশ ছেড়েছেন। ২০২২-২৩ অর্থবছর দেশ ছাড়েন ১১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ। এছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ৯ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ বিদেশ গেছেন।

Share