নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : যশোরে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে ‘তথ্যপ্রযুক্তি এবং উদ্ভাবন বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতা ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সফটওয়্যার পার্কে বিনিয়োগকারী আইটি-আইটিইএস কোম্পানিসমূহের উৎপাদিত উদ্ভাবনী সেবাসমূহ ব্র্যান্ডিং এবং এক্ষেত্রে ভারত-বাংলাদেশ সহযোগিতার ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিত করার লক্ষ্য নিয়ে বুধবার এ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। টেকনোলজি পার্কের অডিটরিয়ামে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালার সম্মানিত অতিথি বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলি দাস বলেন, ভিশন-২০২১ এর মাধ্যমে বাংলাদেশের তরুণদের জ্ঞানভিত্তিক বিশ্বমানের নাগরিক তৈরি হতে হবে। চাহিদাভিত্তিক মানবসম্পদ তৈরির জন্য কাজ করতে হবে। আর এজন্য চাকরিগ্রহিতা নয়- চাকরিদাতা হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের দুই দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক এখন সোনালী অধ্যায়ে পৌঁছেছে। তথ্যপ্রযুক্তি, এনার্জি, রেলসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মসূচিতে দুই দেশের ৯০টি চুক্তি রয়েছে। বাংলদেশের জিডিপি ৮ ভাগে উন্নীত হয়েছে। খুব শিগগিরই দেশটি মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছাবে। এ দেশের জনগণের পাশাপাশি আমরাও উন্নয়নশীল দেশের অংশীদার।
হাইকমিশনার বলেন, ভারত দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির কাজ করছে। ভারতের আইটি সেক্টরে ৭ থেকে ৯ ভাগ হারে গ্রোথ হচ্ছে। বাংলাদেশও একই সুবিধা পেতে পেরে। এ দেশের তরুণরা স্টার্ট আপে ভালো করতে পারে। কারণ বাংলাদেশে মেধাবি মানুষ রয়েছে। সরকারও তাদের সহযোগিতা করছে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কর্মশালার প্রধান আলোচক তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। প্রতিমন্ত্রী বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ভারতের অসামান্য অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে বলেন, বর্তমানে দুই দেশের বাণিজ্য ঘাটতি হ্রাস পেয়েছে এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে আইসিটি সেক্টরে ভারতের বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের প্রযুক্তি ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশও অনেক সমৃদ্ধ হতে পারে। বর্তমানে দেশের ১২টি জেলায় হাই-টেক পার্ক স্থাপন প্রকল্পে ভারত সরকার অর্থায়ন করছে। অদূর ভবিষ্যতে ভারত বাংলাদেশে তাদের সহযোগিতার ক্ষেত্র আরো প্রসারিত করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (সচিব) হোসনে আরা বেগম।
প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন এবং ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের রিসোর্স পারসন সৌম্য বসু। পরে ‘সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কে বিনিয়োগ, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা ও প্রশ্ন-উত্তর পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ‘বাংলাদেশে স্টার্ট-আপ কালচার’ : সমস্যা, সম্ভাবনা এবং চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক প্যানেল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালির তথ্যপ্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ টিনা জাবিন। তিনি নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরির জন্য স্টার্টআপদের মেন্টরিং ও আন্তর্জাতিক পরিম-লে ফান্ড পেতে করণীয় সম্পর্কে আলোকপাত করেন।
এতে সভাপতিত্ব করেন যশোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ। কর্মশালা শেষ পর্যায়ে মাল্টি টেন্যান্ট বিল্ডিং-এ আইটি কোম্পানিসমূহের উদ্ভাবনী সেবাসমূহের প্রদর্শনী ও স্থানীয় স্টেকহোল্ডারদের সাথে বিজনেস টু বিজনেস সভা অনুষ্ঠিত হয়।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আইসিটি শিল্পের সুষম বিকাশ ও উন্নয়ন সাধন করার উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। এই পার্কে আধুনিক সকল সুযোগ-সুবিধাসহ ১৫ তলা মাল্টি-টেন্যান্ট বিল্ডিং, আন্তর্জাতিক থ্রি-স্টার মানের আবাসন ও জিমনেসিয়ামের সুবিধাসহ ১২ তলা ডরমিটরি বিল্ডিং, একটি ক্যান্টিন ও অ্যাম্ফিথিয়েটার, ৩৩ কেভিএ পাওয়ার সাব-স্টেশন, ফাইবার অপটিক ইন্টারনেট লাইন এবং অন্যান্য ইউটিলিটি সার্ভিস দেওয়া হচ্ছে।
২০১৭ সালের ১০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এ সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্কের উদ্বোধন করেন।