
গাজী আবু বকর : রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গতকাল শনিবার ‘মার্চ ফর গাজা’ গণজমায়েত কর্মসূচি থেকে, জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দাবি জানানো হয়েছে। প্যালেস্টাইন সলিডারিটি মুভমেন্ট-বাংলাদেশ, ফেসবুকে ‘মার্চ ফর গাজা’ নামে একটি ইভেন্ট পেজ তৈরি করে এই কর্মসূচি আহবান করে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), হেফাজতে ইসলামসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, বিভিন্ন সংগঠন, ইসলামি বক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ‘মার্চ ফর গাজা’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন।
এই গণজমায়েত কর্মসূচির ঘোষণাপত্রে আন্তর্জাতিক আদালতে ইসরায়েলি গণহত্যার বিচার নিশ্চিত করণ; যুদ্ধবিরতি নয়, গণহত্যা বন্ধে কার্যকর ও সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ; ১৯৬৭ সালের পূর্ববর্তী ভূমি ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য বাধ্যবাধকতা তৈরি করণ; পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি প্রদাণ এবং ফিলিস্তিনিদের আত্মনিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা ও রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার পথ উন্মুক্ত করণে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণে জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানানো হয়।
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গণজমায়েতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে চতুর্দিক থেকে আগত লাখ লাখ জনতার কন্ঠে মুহুর্মুহু ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’ স্লোগানের মধ্যে বিকেল ৩টার দিকে মূল কর্মসূচি শুরু হয়। বিকেল ৪টার দিকে ঘোষণাপত্র পাঠ করা হয়। ঘোষণাপত্র পাঠ করেন ও বক্তব্য দেন আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
ঘোষণাপত্রে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি দাবি জানানো হয়;-বাংলাদেশি পাসপোর্টে ‘Except Israel’ শর্ত পুনর্বহাল করতে হবে এবং ইসরায়েলকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি না দেওয়ার অবস্থান আরও সুস্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে হবে; সরকারের ইসরায়েলি কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যত চুক্তি হয়েছে, তা বাতিল করতে হবে; রাষ্ট্রীয়ভাবে গাজায় ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা পাঠানোর কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে; সব সরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং আমদানি নীতিতে জায়নবাদী কোম্পানির পণ্য বর্জনের নির্দেশনা দিতে হবে; জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী সরকারের অধীনে মুসলিম ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর চলমান নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবাদ জানাতে হবে, যেহেতু হিন্দুত্ববাদ আজ শুধু একটি স্থানীয় মতবাদ নয়-বরং আন্তর্জাতিক জায়নিস্ট ব্লকের অন্যতম দোসর এবং পাঠ্যবই ও শিক্ষা নীতিতে আল-আকসা, ফিলিস্তিন ও মুসলিমদের সংগ্রামী ইতিহাসকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, যাতে ভবিষ্যৎ মুসলিম প্রজন্ম নিজেদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও আত্মপরিচয় নিয়ে গড়ে ওঠে।
ঘোষণাপত্রে মুসলিম নেতাদের প্রতি যেসব দাবি জানানো হয়, সেগুলো হলো:- ইসরায়েলের সঙ্গে অর্থনৈতিক, সামরিক ও কূটনৈতিক সব সম্পর্ক অবিলম্বে ছিন্ন করতে হবে; জায়নবাদী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বাণিজ্যিক অবরোধ ও নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে হবে; গাজার মজলুম জনগণের পাশে চিকিৎসা, খাদ্য, আবাসন ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতাসহ সর্বাত্মক সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়াতে হবে; আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ইসরায়েলকে একঘরে করতে সক্রিয় কূটনৈতিক অভিযান শুরু করতে হবে এবং জায়নবাদের দোসর ভারতের হিন্দুত্ববাদী শাসনের অধীনে মুসলিমদের অধিকার হরণ, বিশেষ করে ওয়াকফ আইনে হস্তক্ষেপের মতো রাষ্ট্রীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ওআইসি ও মুসলিম রাষ্ট্রগুলোকে দৃঢ় প্রতিবাদ ও কার্যকর কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে।
সর্বশেষে ঘোষণাপত্রে থেকে কিছু অঙ্গীকার করা হয়। সেগুলো হলো-আমরা সবাই স্বতঃস্ফূর্তভাবে বয়কট করব সেই পণ্য, কোম্পানি ও শক্তিকে যারা ইসরায়েলের দখলদারিত্বকে টিকিয়ে রাখে; আমরা আমাদের সমাজ এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে প্রস্তুত করব, যারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সব প্রতীক ও নিদর্শনকে সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধার করবে; আমরা আমাদের সন্তানদের এমনভাবে গড়ে তুলবো—যারা নিজেদের আদর্শ ও ভূখণ্ড রক্ষায় জান ও মালের সর্বোচ্চ ত্যাগে প্ৰস্তুত থাকবে এবং আমরা বিভাজিত হবো না, কারণ আমরা জানি, বিভক্ত জনগণকে দখল করতে দেরি হয় না।
গতকালকের এই গণজমায়েতে বিপুল মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। সেখানে ‘ফ্রি ফ্রি প্যালেস্টাইন’সহ বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন উপস্থিত জনতা। মঞ্চে এই কর্মসূচিতে সংহতি জানানো বিভিন্ন দলের নেতারা উপস্থিত হন।
এই কর্মসূচি ঘিরে সকাল থেকেই ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিপুল মানুষ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে শুরু করেন। শাহবাগ ও আশপাশে গাড়ি চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরে মিরপুর, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, বিজয় সরণি, ফার্মগেট, বাংলামোটর ও শাহবাগ এলাকা হয়ে খণ্ড খণ্ড মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে। পিকআপ ভ্যানে করে তরুণদের স্লোগান দিতে দিকে উদ্যানের দিকে যেতে দেখা গেছে।