এনবিআর বিলুপ্তিতে পিছু হটল সরকার

সংশোধন হবে অধ্যাদেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক : কর্মকর্তাদের টানা আন্দোলনের মুখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) বিলুপ্ত করে দুই ভাগ করার চলমান পদক্ষেপ থেকে সরে এসেছে সরকার; অধ্যাদেশে ‘প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনার কথা বলেছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান কাঠামোতেই এনবিআরের সব কাজ চলবে বলে বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে।

সংশোধন করে অধ্যাদেশ বাস্তবায়ন ‘অনেক সময়সাপেক্ষ’ হওয়ার কথা তুলে ধরে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সব কার্যক্রম পূর্বের ন্যায় অব্যাহত থাকবে এবং কাস্টমস ও আয়কর ক্যাডারের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিদ্যমান ব্যবস্থায় সব কাজ করবেন।”

অর্থ মন্ত্রণালয় বলেছে, বিসিএস (কর) ও বিসিএস (শুল্ক ও আবগারি) ক্যাডারের স্বার্থ ঠিক করে পৃথকীকরণের প্রশাসনিক কাঠামো কীভাবে প্রণয়ন করা হবে তা এনবিআরসহ গুরুত্বপূর্ণ সব অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে অধ্যাদেশে ’প্রয়োজনীয় সংশোধনী’ আনা হবে।

এদিকে মন্ত্রণালয়ের এমন পদক্ষেপের পর অধ্যাদেশ বাতিল ও সংশোধনের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ’ তাদের কর্মসূচি চলবে না কি প্রত্যাহার হবে, সেই সিদ্ধান্ত পরে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে।

মন্ত্রণালয়ের নতুন পদক্ষেপের সিদ্ধান্ত আসার পর সংগঠনের তরফে সংবাদমাধ্যমকে এ কথা জানানো হয়।

গত ১২ মে রাতে এনবিআর বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি ও রাজস্ব ব্যবস্থাপনা অধ্যাদেশ, ২০২৫’ অধ্যাদেশ জারি করে সরকার।

পরদিন থেকে অবস্থান ও কলমবিরতিসহ টানা কর্মসূচি পালন করে আসছেন দেশের প্রধান রাজস্ব আহরণকারী সংস্থাটির কর্মীরা। এ নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা ও অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক হলেও তাতে সমাধান আসেনি।

এমন প্রেক্ষাপটে অধ্যাদেশ সংশোধনের সিদ্ধান্ত জানাল সরকার।

এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অধ্যাদেশটি জারি করার পর তা বাস্তবায়নের জন্য অনেকগুলো কাজ যেমন, দুইটি বিভাগের নতুন করে সাংগঠনিক কাঠামো প্রণয়ন করা: পদ সৃজনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যয় ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগ, বাস্তবায়ন অনুবিভাগ, সচিব কমিটি কর্তৃক চূড়ান্ত অনুমোদন ইত্যাদি সম্পাদন করতে হবে-যা যথেষ্ঠ সময়সাপেক্ষ বিষয়।

”তাছাড়া দুইটি নতুন বিভাগের জন্য ‘অ্যালোকেশন অব বিজনেস’ এবং আয়কর আইন, কাস্টমস আইন, মূল্য সংযোজন আইন এবং এসকল আইনের সাথে সম্পৃক্ত বিধি ও প্রবিধানেও পরিবর্তন আনার প্রয়োজন হবে। একাজগুলোও সময়সাপেক্ষ কাজ।”

অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, এসব কাজ শেষ না করে ‘কোনোভাবে অধ্যাদেশটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়’।

”সেহেতু জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এখুনি বিলুপ্ত হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।”

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয, কাস্টমস ও কর ক্যাডারের সদস্যদের কোনো পদ-পদবি কমানোর কোনো পরিকল্পনাও সরকারের নেই। বরং সংস্কার কাজ শেষ হলে তাদের পদের সংখ্যা বাড়বে এবং সচিব পদে নিয়োগসহ পদোন্নতির সুযোগ আরও অনেক বেশি বাড়বে।

অধ্যাদেশে এটির কার্যকর করার সময়ের ক্ষেত্রে বলা ছিল, পরে প্রজ্ঞাপন করে যে তারিখ নির্ধারণ করা হবে তখন থেকে এটি কার্যকর হবে। সে অনুযায়ী এনবিআর অধ্যাদেশ হওয়ার পর এখনও বিলুপ্তি হয়নি।

তবে আয়কর ও শুল্ক ক্যাডারের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা তাদের ‘মতামত প্রতিফলিত’ না হওয়ার দাবি করে অধ্যাদেশটি বাতিলে ১২ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন তারা।

সবশেষ তাদের দাবি দাওয়া নিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর বৃহস্পতিবার স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, “আজ (বৃহস্পতিবার) রাজস্ব বোর্ডের অবসরপ্রাপ্ত দুইজন সম্মানিত সদস্যের মধ্যস্ততায় সারাদিনব্যাপী দফায় দফায় আলোচনার একপর্যায়ে তাদের পাঠানো সমঝোতা প্রস্তাব সম্পূর্ণ মেনে নেওয়ার পরও শেষ মুহূর্তে তারা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে কাজে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।”

এতে ‘রাষ্ট্রের বৃহত্তর স্বার্থে’ অর্থবছরের শেষ সময়ে জাতীয় বাজেট কার্যক্রম এবং রাজস্ব আহরণে নিয়োজিত এনবিআরের সব স্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ‘অফিস সময়ে দপ্তরে উপস্থিত’ থেকে তাদের নিজ দায়িত্ব ‘নিষ্ঠার সাথে’ পালনের আহ্বান জানানো হয়েছে।

Share