ফাঁসি মওকুফ পাওয়া আসলাম হত্যা মামলায় আবার গ্রেপ্তার

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : রাষ্ট্রপতির সাধারণ ক্ষমায় ফাঁসি মওকুফ পাওয়া আসলাম ফকির (৫০) আবার একটি হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার হয়েছেন। আজ রোববার সকাল ছয়টার দিকে যশোরের চৌগাছা কলেজপাড়ার একটি ভাড়া বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব-৮–এর একটি দল। এরপর তাঁকে র‌্যাবের ফরিদপুর ক্যাম্পে নিয়ে আসা হয়।

আসলাম ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার মানিকদহ ইউনিয়নের মানিকদহ গ্রামের মৃত শুকুর ফকিরের ছেলে। তিনি মানিকদহ ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং সদরপুর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ছিলেন।

গত ২১ এপ্রিল ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে বৃষ্টির পানি পড়া নিয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে শহীদ শেখ (৪৮) নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। এ ঘটনায় পরের দিন আসলামকে ১ নম্বর আসামি করে ভাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা করেন শাহজাহান মাতুব্বর (৫৪) নামের এক ব্যক্তি।

মামলায় আসলাম ছাড়া আরও ৫৩ জনের নাম উল্লেখ করা হয় এবং অজ্ঞাতনামা ১৫ থেকে ২০ জনকে আসামি হিসেবে দেখানো হয়। মামলার পর থেকেই পলাতক ছিলেন আসলাম।

আসলামকে গ্রেপ্তারের বিষয় নিয়ে র‌্যাবের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বেলা দেড়টার দিকে ফরিদপুর শহরের গোয়ালচামটে র‌্যাব-৮ ফরিদপুর ক্যাম্পের সম্মেলনকক্ষে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৮ ফরিদপুরের কোম্পানি অধিনায়ক এএসপি দেবাশীষ কর্মকার বলেন, ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে শহীদ শেখ নামের এক ব্যক্তি খুনের অভিযোগে ২২ এপ্রিল আসলাম ফকিরের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করা হয় ভাঙ্গা থানায়। মামলার পর থেকেই তিনি পলাতক ছিলেন। মামলার পর প্রধান আসামি আসলামকে গ্রেপ্তারের উদ্যোগ নেয় র‌্যাব। প্রথমে তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্য নেওয়া হয়। কিন্তু আসলাম বাড়িতে নিজের মুঠোফোন রেখে যাওয়ায়, তা কোনো কাজে আসেনি। পরে মাঠপর্যায়ে অনুসন্ধান শুরু করা হয়। আসলাম কোথায় কোথায় যেতে পারেন, সেসব সম্ভাব্য জায়গায় তল্লাশি করা হয়। কিন্তু ২২ এপ্রিলের পর থেকে কমপক্ষে পাঁচবার স্থান বদল করেন তিনি। মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে তিনি নিজেকে একজন প্রবাসী পরিচয় দিয়ে চৌগাছার কলেজপাড়ার ওই বাড়িতে ভাড়াটে হিসেবে ওঠেন। র‌্যাবের গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্তবর্তী জেলা যশোর থেকে আজ সকাল ছয়টার দিকে আসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাবের কোম্পানি অধিনায়ক বলেন, আসলাম ভারতে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। যদিও তাঁর কাছে কোনো পাসপোর্ট ছিল না। তবে অবৈধভাবে ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগেই তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

২০০৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ভাঙ্গার মানিকদহ ইউপির চেয়ারম্যান এ কে এম সাহেদ আলী ওরফে সাহেব মিয়া হত্যা মামলায় আসলাম ফকিরসহ অপর দুই আসামি তারা মৃধা ও ইমারত আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন ফরিদপুরের জেলা ও দায়রা জজ আদালত। হাইকোর্টেও এ রায় বহাল রাখা হয়। ২০১৪ সালের ১৩ নভেম্বর আসলামের ফাঁসি কার্যকরের দিন ধার্য হয়। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, সিভিল সার্জনসহ সবাইকে চিঠি দিয়ে প্রস্তুতও থাকতে বলা হয়েছিল। কিন্তু সবকিছু ঠিক থাকলেও ফাঁসির এক দিন আগে অস্বাভাবিক আচরণের কারণে তাঁর ফাঁসি স্থগিত হয়ে যায়। ওই দিনই দ্বিতীয় দফায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন তিনি। এরপর সাধারণ ক্ষমায় তাঁর ফাঁসি মওকুফ করে ১৪ বছরের সাজা দেওয়া হয়। কারাগারে সদাচরণের কারণে সাজা কমিয়ে ১৩ বছর ২ দিন কারাভোগের পর ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট গাজীপুর হাই সিকিউরিটি কারাগার থেকে মুক্তি পান আসলাম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে আসলাম নিজ এলাকায় এসে আবার রাজনীতির মাঠে সক্রিয় হন। ভাঙ্গা-সদরপুর ও চরভদ্রাসন নিয়ে গঠিত ফরিদপুর-৪ সংসদীয় আসন। এই আসনে বর্তমানে স্বতন্ত্র সাংসদ হলেন মজিবুর রহমান নিক্সন চৌধুরী। আর সাবেক সাংসদ ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ।

স্থানীয়ভাবে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ভাঙ্গার মানিকদহ ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে নিক্সন চৌধুরী ও কাজী জাফরউল্যাহর সমর্থকদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। স্থানীয় পর্যায়ে কাজী জাফরউল্যাহর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মানিকদহ ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ওসমান মাতুব্বর। আর নিক্সনের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শাহজাহান মাতুব্বর। ২১ এপ্রিল এই দুই পক্ষের সংঘর্ষে শহীদ শেখ নিহত হন। এ ঘটনায় তাঁর স্ত্রী ও ছেলে বর্তমান থাকা সত্ত্বেও মামলার বাদী হয়েছেন শাহজাহান মাতুব্বর।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ভাঙ্গা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল্লাহ আজিজ বলেন, শহীদ শেখ হত্যা মামলায় এর আগে আরও আট আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁরা হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বর্তমানে তাঁরা জেলহাজতে। এসআই বলেন, আসলাম ফকিরকে ভাঙ্গা থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। আগামীকাল সোমবার তাঁকে আদালতে সোপর্দ করা হবে।

Share