সিনেমার গানে সুরকার হিসাবে প্রথম সাতক্ষীর’র মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : সাবিনা ইয়াসমিন। কিংবদন্তি এই কণ্ঠশিল্পী সম্প্রতি সারাহ বেগম কবরী পরিচালিত ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে সংগীত পরিচালনা করেছেন। পাঁচ দশকের ক্যারিয়ারে চলচ্চিত্রে প্রথম সংগীত পরিচালনা ও অন্যান্য প্রসঙ্গ নিয়ে কথা হয় তার সঙ্গে

চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ হলো। নিজের সুর-সংগীতে প্রথম গান রেকর্ডের অনুভূতি জানতে চাই…

কিছু অনুভূতি বলে বোঝানো যায় না। এটাও তেমনি একটি বিষয়। ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ গানটি রেকর্ড করার আগে সুর-সংগীত নিয়ে অনেক ভেবেছি। স্টুডিওতে গান রেকর্ড করতে গিয়ে অন্যদের সুরে গান গাওয়ার মতোই বিষয়টা মনে হয়েছে। যখন রেকর্ডিং শেষ হলো, তখন অনেকে দেখি গানের প্রশংসা করছেন। নিজের সৃষ্টি নিয়ে তখন অন্যরকম এক অনুভূতিতে মনটা ভরে গেছে। এই অনুভূতি আসলে মুখে বলে বোঝানো যাবে না।

গানের বিষয়ে সবসময় আপনার কাছে শ্রোতার বাড়তি প্রত্যাশা থাকে। সংগীত পরিচালনায় আসার পরও আপনার কাছে তেমনই প্রত্যাশা থাকবে- এ নিয়ে কোনো ভাবনা কাজ করেছে কি?

কেমন হবে নিজের সংগীত পরিচালনার গান? শ্রোতারা আমার কাজকে কীভাবে গ্রহণ করবেন, অন্য শিল্পীরা যখন আমার সুরে গাইবেন- সেটি কেমন হবে? এমন অনেক প্রশ্নই মনে উঁকি দিয়েছে। বাসায় বসে তো বিভিন্ন সময়ে অনেক গানের সুর করেছি। কিন্তু বাসায় বসে নিজে নিজে সুর করা আর সিনেমার জন্য কোনো সুর করা তো এক বিষয় নয়। এটা এমন অভিজ্ঞতা, যা আগে কখনও হয়নি। তাই কিছুটা ভাবনা তো কাজ করছেই। আমার সুরে অন্য শিল্পীদের গান কেমন হয়, সিনেমার গল্পের সঙ্গে গানগুলো কীভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এবং তা নিয়ে দর্শক-শ্রোতা কী বলেন, এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।

শিল্পী জীবনে অসংখ্য সুরকার ও সংগীত পরিচালকের সঙ্গে কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে। চাইলে তো অনেক আগেই সুরকার হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারতেন। কিন্তু এতটা সময় নিলেন কেন?

এ কথা সত্যি যে, অসংখ্য সংগীত পরিচালকের সঙ্গে হাজার হাজার গান করার অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের কাছে অনেক কিছু শেখার সুযোগও পেয়েছি। তার পরও কখনও ভাবিনি সংগীত পরিচালনা করব। কিন্তু বাস্তব অনেক সময় কল্পনাকেও হার মানায়। যা কখনও ভাবিনি সেটিই এখন বাস্তব হয়ে ধরা দিয়েছে। কবরীর সঙ্গে বহু বছরের হৃদ্যতা। কবরী যখন তার ‘এই তুমি সেই তুমি’ ছবিতে সংগীত পরিচালনার প্রস্তাব দেন, তখনই কেবল বিষয়টি নিয়ে আলাদা করে ভেবেছি। যখন মনে হয়েছে, পাঁচ দশকের সংগীত জীবনের অভিজ্ঞতায় এটুকু সাহস তো করতেই পারি- তখনই সংগীত পরিচালনার জন্য রাজি হয়েছি। রফিকউজ্জামানের লেখা ‘দুটি চোখে ছিল কিছু নীরব কথা’ গানের রেকর্ডিং দিয়ে শুরু হলো সংগীত পরিচালনা। প্রথম গানের কাজ তো ভালোভাবেই শেষ হলো, এখন দেখা যাক বাকি গানগুলো কেমন হয়।

সংগীত পরিচালক হিসেবে আপনার কাজে নিজস্ব কোনো স্বাক্ষর রাখার চেস্টা করছেন?

যেকোনো কাজেই নিজস্বতা ধরে রাখা জরুরি। গান শুনে তার স্রষ্টাকে চিনে নেওয়া যাবে- এমন কাজই করতে চাই। সেই ভাবনা থেকেই ছবির জন্য শ্রুতিমধুর কিছু তৈরি করছি। যদি অন্য সবার মতোই কাজ করি, তাহলে গানে কোনো নতুনত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে না। শিল্পী হিসেবে যেমন নিজস্বতা ধরে রেখেছি, তেমনি সংগীত পরিচালক হিসেবেও কাজের নিজস্ব একটা ছাপ রেখে যেতে চাই। চলচ্চিত্রের গান তৈরি হয় গল্প, চরিত্র ও ঘটনার বাঁকবদল নিয়ে। তাই কোনো অ্যালবাম কিংবা অনুষ্ঠানের জন্য গান তৈরি আর ছবির গান তৈরি এক নয়। চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালনা তাই সবসময় চ্যালেঞ্জিং।

অনেকদিন ঘরবন্দি থাকার পর গানের ভুবনে এলেন। কেমন লাগছে কাজের পরিবেশ?

কাজ তুলনামূলক কম হলেও পরিবেশ আগের মতোই আছে। কিন্তু মন এখনও পুরোপুরি ভালো হয়নি। একে একে সব কাছের মানুষকে হারিয়ে ফেলছি। অনেক প্রিয় মুখের দেখা মিলবে না আর, এসব ভেবেই মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায়। তার পরও জীবন তো থেমে থাকে না, কোনো না কোনো কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতেই হয়।

Share