নয়াবার্তা প্রতিবেদক : বছরজুড়ে উত্থান-পতন আর নানামুখী আলোচনার মধ্যে রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারাই বজায় থাকল সদ্য সমাপ্ত অর্থবছর শেষে; বিদেশে পণ্য বিক্রি থেকে মোট আয় ৫৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে রপ্তানি কম হলেও মোট এ আয় একক বছরের হিসাবে সর্বোচ্চ।
সোমবার রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) রপ্তানির সবশেষ পরিসংখ্যান প্রকাশ করেছে। এতে দেখা গেছে, গত ২০২২-২৩ অর্থবছরের রেকর্ড এ রপ্তানি আয়ে প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে শেষ মাস জুনের ৫ বিলিয়নের কিছুটা বেশি আয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে, যদিও একক মাসের লক্ষ্যমাত্রা থেকেও তা কিছুটা পিছিয়ে ছিল।
এর আগের মাসের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গত মাসে ৫০৩ কোটি ডলার আয় এসেছে, যা আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ দশমিক ৫১ শতাংশ বেশি। তবে ৫৫৬ কোটি ডলার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৯ দশমিক ৬১ শতাংশ কম। আগের দুই মাসের নেতিবাচক অবস্থা কাটিয়ে গত মে মাসে রপ্তানি হয়েছিল প্রায় ৪৮৫ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই মাসের চেয়ে প্রায় ২৭ শতাংশ বেশি।
ডলার সংকটের মধ্যে অর্থবছর শেষে প্রবাসী আয়ের পর রপ্তানিতে ইতিবাচক ধারা বজায় থাকায় তা অর্থনীতির জন্য সুখবর হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
প্রবৃদ্ধির হার বিবেচনায় আগের ২০২১-২২ অর্থবছরের চেয়ে কম হলেও সদ্য সমাপ্ত ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে রপ্তানি থেকে মোট আয় ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলার ছাড়িয়েছে; প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আগের অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ২০৮ কোটি ডলার, প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৩৪ দশমিক ৩৮ শতাংশ।
সেবা ছাড়া শুধু পণ্য রপ্তানি থেকে আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি আয় হলেও তা অর্থবছরের নির্ধারিত আয়ের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ দশমিক ২১ শতাংশ বা ২৪৪ কোটি ডলার কম। বছরজুড়ে মোট ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার আয়ের লক্ষ ধরা হয়েছিল।
কোভিড মহামারী থেকে উত্তরণের প্রক্রিয়ার মধ্যে ইউক্রেইন যুদ্ধ ডলার সংকটকে তীব্র করে। দেশে দেশে মূল্যস্ফীতির পারদ চড়তে থাকলে চাপে পড়ে বিশ্ব অর্থনীতিও। সেই থেকে রপ্তানিকারকরা রপ্তানিতে নানান সংকটের কথা বলে আসছিলেন।
তাদের সেই শঙ্কার মধ্যে গত অর্থবছরের বেশ কয়েক মাস রপ্তানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে কমেও যায়। বছরজুড়ে ওঠানামার মধ্যেই শেষ দুই মাসে ঘুরে দাঁড়ায় রপ্তানি।
মোট রপ্তানির মধ্যে বরাবরের মতো তৈরি পোশাক থেকেই আয় এসেছে বেশি। ইপিবির তথ্য বলছে, মোট ৫ হাজার ৫৫৬ কোটি ডলারের মধ্যে প্রধান এ রপ্তানি পণ্যের বিক্রি থেকে আসা আয়ের পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৯৯ কোটি ডলার; আগের অর্থবছরের চেয়ে ১০ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি এবং লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি। গত ২০২১-২২ অর্থবছরে আয় এসেছিল ৪ হাজার ২৬১ কোটি ডলার। আর ২০২২-২৩ অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪ হাজার ৬৮০ কোটি ডলার।
পোশাকের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১২২ কোটি ডলারের, যা আগের অর্থবছরের চেয়ে ১ দশমিক ৭৪ শতাংশ কম।
অন্যান্য উল্লেখযোগ্য পণ্য রপ্তানির মধ্যে প্লাস্টিক পণ্য ও চামড়াবিহীন জুতার রপ্তানি বেড়েছে। কমেছে হিমায়িত খাদ্য, পাট ও পাটজাত পণ্য, কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য, হোমটেক্সটাইল ও প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি।