ঈদে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও রিজার্ভে ধ্বস

গাজী আবু বকর : ঈদকে সামনে রেখে রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়লেও রিজার্ভে ধ্বস নেমেছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে রিজার্ভ কমেছে ২১ কোটি ১১ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। বর্তমানে দেশে বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী দায়হীন তাৎক্ষনিক ব্যবহারযোগ্য নিট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১ হাজার ৯৮৯ কোটি ৪৭ লাখ মার্কিন ডলার বা ১৯ দশমিক ৮৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে। গ্রস রিজার্ভ কমে হয়েছে ২ হাজার ৫৩০ কোটি ৩ লাখ ২০ হাজার বা ২৫ দশমিক ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ঈদের আগের সপ্তাহে রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয় বা রিজার্ভ বেড়ে ২০ বিলিয়ন ডলারের উপরে উঠেছিলো। চলতি মাসের ৮ এপ্রিল বিপিএম-৬ হিসাবানুযায়ী রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো ২ হাজার ১০ কোটি ৫৮ লাখ ৩০ হাজার বা ২০ দশমিক ১০ বিলিয়ন ডলার। আর গ্রস রিজার্ভ বেড়ে হয়েছিলো ২ হাজার ৫৩৮ কোটি ৫২ লাখ বা ২৫ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছরের এই সময়ে মোট রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩১ দশমিক ১৮ বিলিয়ন বা ৩ হাজার ১১৮ কোটি ৮ লাখ ২০ হাজার মার্কিন ডলার।

গতকাল ১৮ এপ্রিল বৃহষ্পতিবার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০২২-২৩ অর্থবছরের শেষ দিন ৩০ জুন তারিখে গ্রস রিজার্ভের পরিমাণ ছিলো, ৩ হাজার ১২০ কোটি ৩০ লাখ বা ৩১ দশমিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের শুরুতে গ্রস রিজার্ভ ছিল ২৯ দশমিক ৭৩ বিলিয়ন ডলার আর বিপিএম-৬ অনুযায়ী ছিল ২৩ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন ডলার। গত ২০ মার্চ বিপিএম-৬ অনুযায়ী, রিজার্ভ ছিল ১৯ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন বা ১ হাজার ৯৯৮ কোটি ডলার। গত ৬ থেকে ২০ মার্চ পর্যন্ত দুই সপ্তাহে গ্রস রিজার্ভ কমে ১ দশমিক ০৯ বিলিয়ন ডলার এবং বিপিএম-৬ অনুযায়ী, কমে ১ দশমিক ১৬ বিলিয়ন ডলার।

তবে এর বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিট বা প্রকৃত রিজার্ভের আরেকটি হিসাব রয়েছে, যা শুধু আইএমএফকে দেওয়া হয়। প্রকাশ করা হয় না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সেই হিসাবে দেশের ব্যয়যোগ্য প্রকৃত রিজার্ভ এখন ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঘরে। প্রতি মাসে প্রায় ৬ বিলিয়ন ডলার হিসেবে এ রিজার্ভ দিয়ে তিন মাসের আমদানি ব্যয় মেটাতে কষ্টসাধ্য হবে বাংলাদেশের জন্য। সাধারণত একটি দেশের ন্যূনতম ৩ মাসের আমদানি খরচের সমান রিজার্ভ থাকতে হয়। সেই মানদণ্ডে বাংলাদেশ এখন শেষ প্রান্তে রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতির অন্যতম সূচক হল বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঈদের আগে প্রবাসীরা বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। তবে রপ্তানি প্রবাহও বেড়েছে। এসব কারণেই মূলত রিজার্ভ কিছুটা কমেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, গত দুই বছরের বেশি সময় ধরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে ঝোড়ো বাতাস বইছিল। যে হারে রিজার্ভ কমছিল, সে হারে বাড়ছিল না। ফলে ক্রমাগত কমছিল বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। গত দুই মাস ধরে সে অবস্থার কিছুটা উন্নতি শুরু হয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমার সঙ্গে সঙ্গে আবার তা পূরণ হয়ে যাচ্ছে।

Share