নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : দুর্নীতিতে আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারের (পি কে হালদার) নামে কানাডার টরন্টোতে একটি মার্কেট রয়েছে। রয়েছে একটি বিলাসবহুল বাড়ি। প্রভাব খাটিয়ে প্রতারণা ও জালিয়াতি করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১০ হাজার ২শ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রয়েছে বিপুল অংকের অর্থ বিদেশে পাচারের অভিযোগ। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) তদন্তে বেরিয়ে এসেছে তার লাগামহীন দুর্নীতির তথ্যপ্রমাণ।
প্রশান্তের লাগামহীন দুর্নীতির নথিপত্র বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সংগ্রহ করেছে দুদক। এতে দেখা গেছে, পি কে হালদার অস্তিত্বহীন ৩০-৪০টি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে জালিয়াতি করে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড ও পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস থেকে আত্মসাৎ করেছেন প্রায় ১০ হাজার ২শ কোটি টাকা। এর মধ্যে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং থেকে দুই হাজার ৫০০ কোটি, এফএএস ফাইন্যান্স থেকে প্রায় দুই হাজার ২০০ কোটি, রিলায়েন্স ফাইন্যান্স থেকে প্রায় দুই হাজার ৫০০ কোটি ও পিপলস লিজিং থেকে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। এসব ঋণের বিপরীতে মর্টগেজ (জামানত) নেই বললেই চলে। তদন্তে দেখা গেছে, আত্মসাৎকৃত বিরাট অংকের এ অর্থ আদায়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ। প্রশান্ত এসব টাকা পাচার করেছেন সিঙ্গাপুর, ভারত ও কানাডায়।
প্রশান্ত দীর্ঘ সময় এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্সের এমডি ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন। পিপলস লিজিং ও অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কোনো পদে না থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম পরিচালনায় তার প্রত্যক্ষ ভূমিকা ছিল। এসব ক্ষেত্রে অদৃশ্য এক শক্তি ছিল তার পেছনে। ওই অদৃশ্য শক্তি এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
দুদক সূত্র জানায়, শুধু একটি কম্পিউটার ব্যবহার করে অস্তিত্বহীন কাগুজে প্রতিষ্ঠান তৈরি করে কীভাবে একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ লোপাট করে সেগুলোর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন পি কে হালদার। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও অদৃশ্য শক্তির সহায়তায় তিনি কানাডায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদকের এক পদস্থ কর্মকর্তা বলেন, প্রশান্ত দেশের খুব গুরুত্বপূর্ণ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের অর্থ আত্মসাতের সময় তার নিকটজনদের নিয়ে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছিলেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিকটাত্মীয়দের করা হয়েছিল ইন্ডিপেন্ডেন্ট পরিচালক। এই সিন্ডিকেটে যুক্ত ২০-২২ জন সদস্য এখনও প্রকাশ্যে বহাল তবিয়তে আছেন। অথচ তারা অস্তিত্বহীন ও জালিয়াতপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে ঋণের নামে অর্থ আত্মসাতে প্রশান্তের প্রত্যক্ষ সহযোগী ছিলেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুদক কর্মকর্তা বলেন, প্রশান্তের বন্ধু মার্কেন্টাইল ব্যাংকের পরিচালক একেএম শহীদ রেজার স্বার্থসংশ্নিষ্ট পাঁচটি প্রতিষ্ঠানে ১০৪ কোটি টাকা ও অস্তিত্বহীন কতিপয় প্রতিষ্ঠানের সাতটি ঋণ হিসাব থেকে ৩৩টি চেকের মাধ্যমে ওয়ান ব্যাংকের একটি শাখার গ্রাহক ব্যাংক এশিয়ার সাবেক এমডি ইরফান আহমেদ খানের জে কে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের একটি হিসাবে ৭৪ কোটি টাকা স্থানান্তর করা হয়। যার প্রমাণ রয়েছে দুদকের কাছে।
প্রশান্তের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা তদন্ত করছেন দুদক উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান ও মো. সালাহউদ্দিন। তদন্ত কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। শিগগির আদালতে চার্জশিট পেশ করা হবে।
পি কে হালদার বর্তমানে কানাডার টরন্টোতে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছেন। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর আত্মসাৎকৃত অর্থ ফেরত দেওয়ার শর্তে আদালতের হেফাজতে সম্প্রতি তিনি দেশে ফেরার ঘোষণা দিয়েছিলেন। গত ২১ অক্টোবর হাইকোর্ট দেশের মাটিতে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে পি কে হালদারকে গ্রেফতারের আদেশ দেন। গত রোববার এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি বিমানে তার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেরার কথা থাকলেও তিনি ফেরেননি।