নিজস্ব ডেস্ক : নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও ভয় দেখিয়ে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মত প্রকাশের অধিকারকে হুমকির মুখে ফেলেছে। তাছাড়া নির্বাচনী প্রচারের শুরুতেই রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষে বহু মানুষের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটছে।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ এনেছে। অবশ্য এর আগে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে বিতর্কিত বিবৃতি ও প্রতিবেদন দিয়ে সমালোচিত হয়েছিল সংস্থাটি।
নির্বাচনী প্রচারে সহিংসতা রোধ এবং সব দলের অংশগ্রহণে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ ভোট নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারকে জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত ও অন্যান্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে চাপ দেওয়া উচিত বলে বিবৃতিতে মন্তব্য করা হয়েছে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস অভিযোগ করেন, স্বতন্ত্র ও বিরোধী কণ্ঠকে নিয়মতান্ত্রিকভাবে দমন করছে আওয়ামী লীগ সরকার। তাদের উদ্দেশ্য পূর্ণ রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পথে কেউ যেন বাধা না হয়। সরকারের প্রধান প্রতিপক্ষ দলের সমর্থক ও নেতাকর্মীরা গ্রেফতার, খুন, এমনকি গুমের শিকার হচ্ছেন- যার ফলে এক ধরনের ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। এ অবস্থা বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিপন্থী।
বিবৃতিতে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলা হয়, অক্টোবর থেকে ডিসেম্বরের শুরু পর্যন্ত পাওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে বিধিবহির্ভূতভাবে গ্রেফতার, বিরোধী মতের নেতাকর্মীদের সাজা ও ক্ষমতাসীন দলের যুব ও ছাত্র সংগঠনের মাধ্যমে সহিংসতা ও ভয় দেখানোর বেশকিছু ঘটনা ঘটেছে। এ ধরনের অভিযান ও কার্যক্রমকে আইনি বৈধতা দেওয়ার কারণেও নির্বাচনের আগে ভয়ের পরিবেশ তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে বিচার বিভাগ ও নির্বাচন কমিশন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিবৃতিতে অভিযোগ করে এইচআরডব্লিউ।
সংসদের বাইরে থাকা বড় দল বিএনপির বরাত দিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, সেপ্টেম্বরে ধরপাকড় শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে তিন লাখের বেশি ফৌজদারি মামলা হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে, এসব মামলা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মামলার অধীনে কয়েক হাজার বিরোধী নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিএনপি নেতাদের বরাত দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে বিধিবহির্ভূতভাবে এসব মামলা চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এইচআরডব্লিউ বিএনপির অভিযোগের ভিত্তিতে তাদের বিবৃতিতে বলেছে, নির্বাচন কমিশন ক্ষমতাসীন দলকে সমর্থন করছে। যদিও প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নূরুল হুদা সবাইকে নির্বাচনী আচরণবিধি মেনে চলার গুরুত্বারোপ করছেন। অবশ্য বিবৃতিতে উদারহণ দেওয়া হয়েছে, যেখানে বিএনপির ১৪১ প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করে কমিশন, সেখানে আওয়ামী লীগের মাত্র তিন প্রার্থী বাদ পড়ে।
এইচআরডব্লিউর এশিয়াবিষয়ক পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরাট অভিযোগ তুলেছেন। তিনি সরকারকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মানবাধিকার কেড়ে নেওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে দাতা সংস্থাগুলোর উচিত বাংলাদেশের মানবাধিকার রক্ষার বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া।