নিয়ম মানলে ঈদের পরও পদ্মা সেতুতে চলবে মোটরসাইকেল : সেতুমন্ত্রী

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : পদ্মাসেতুতে নিষেধাজ্ঞার প্রায় সাড়ে নয় মাস পর বৃহস্পতিবার থেকে ফের মোটরসাইকেল চলাচল শুরু হয়েছে; নিয়ম মেনে চললে ঈদের পরও সেই সুযোগ অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

বৃহস্পতিবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তে টোল আদায় কার্যক্রম ও মোটরসাইকেল চলাচলের পরিস্থিতি পরিদর্শন করে একথা জানান তিনি।

প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “শৃঙ্খলায় থাকলে, দায়িত্বশীল থাকলে প্রধানমন্ত্রী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত অব্যাহত থাকবে।”

এ সময় পদ্মা সেতুর উত্তর প্রান্তে অপেক্ষমাণ যাত্রীদের সঙ্গে সেতুতে চলাচলের নির্দেশনা নিয়ে কথা বলেন সেতুমন্ত্রী। পরে মোটরসাইকেল চলাচলের পরিস্থিতি ঘুরে দেখেন।

সেতু সচিব মনজুর হোসেন, সেতু বিভাগের যুগ্মসচিব ভিখারুদ্দৌলা চৌধুরী, মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার মাহফুজুর রহমান আল-মামুনসহ সেতু বিভাগের অন্যান্য কর্মকর্তাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে সহজ যোগাযোগের মাধ্যম পদ্মা সেতু গতবছরের ২৫ জুন উদ্বোধনের পরদিন যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এরপর সেতুতে মোটসাইকেল ‘দুর্ঘটনা আর বিশৃঙ্খলার জেরে’ একদিন পরই মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

ওই সময় থেকেই পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন চালকরা; ঈদের আগ দিয়ে বৃহস্পতিবার নয় মাসেরও বেশি সময়ের সেই অপেক্ষার অবসান হল।

বৃহস্পতিবার ভোরে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য পদ্মাসেতু খুলে দেওয়ার খবরে বুধবার রাতে থেকেই মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজার সামনে আসতে থাকেন আরোহীরা।

ভোরের আগেই সহস্রাধিক মোটরসাইকেল পদ্মা পাড়ি দেওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে দেখা যায়। নির্ধারিত বুথে ১০০ টাকা টোল দিয়ে তারা উঠছিলেন পদ্মা সেতুতে। তবে মোটরসাইকেল চালকরা বেশ ধৈর্য্যের সঙ্গে শৃঙ্খলা নিয়ে অপেক্ষমাণ ছিলেন বলে পুলিশ জানায়।

বাইকারদের শৃঙ্খলা দেখে ‘অবাক’ পদ্মা উত্তর থানার ওসি আলমগীর হোসাইন জানান, “বাইকাররা ধৈর্যের পরিচয় দিচ্ছেন। এখানে শর্ত মেনেই সকাল থেকে তারা বাড়ি ফিরছেন। সবার মাথায় হেলমেট রয়েছে। অনেক নারীও যাচ্ছেন বাইকে চড়ে। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বাইকে ঈদযাত্রা তাদের ঈদ আনন্দে ভিন্ন মাত্রা যুক্ত করেছে।”

টোল প্লাজায় এসে যাতে জটলা সৃষ্টি না হয় সেজন্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীও সতর্ক রয়েছেন। টোলপ্লাজায় দায়িত্ব পালন করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও।

দায়িত্বরত লৌহজং থানার ইউএনও আব্দুল আউয়াল বলেন, “প্রধানমন্ত্রীর মহানুভবতায় পদ্মা সেতুতে বাইক চলছে। তারা যদি নিয়ম মেনে চলে তাহলে এই ধারা অব্যাহত থাকতে পারে।

“আমরা এখানে আছি। যদি কেউ আইন ভঙ্গ করে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এদিকে দীর্ঘ সময় পর পদ্মায় সেতুতে মোটরসাইকেল চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছেন চালক ও আরোহীরা। তাদের কথায়, এই দিনটির জন্যই তারা অপেক্ষায় ছিলেন।

শরীয়তপুরের নড়িয়া উপজেলার কাগদী গ্রামের আনোয়ার দেওয়ান, লতিফ কাজী বলেন, তারা ট্রলারে পদ্মা নদী পারাপার হয়ে ঢাকায় যাতায়াত করতেন। কিন্তু স্বপ্নের পদ্মা সেতুতে মোটরসাইকেল চালাতে পারবেন না, ভাবলেই কষ্ট হতো। কিন্তু আজ মোটরসাইকেল নিয়ে সেতু পেরিয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। এতে অনেক আনন্দ লাগছে।

সন্তান ও স্ত্রীকে নিয়ে প্রথমবার মোটরসাইকেলে করে পদ্মা সেতু পেরিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করলেন জিল্লুর সরদারও। তিনি পালং ইউনয়নের কোটাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে ব্যবসা করা জিল্লুর বলেন, “জীবনের প্রথম মোটরসাইকেল নিয়ে পদ্মা সেতু পার হলাম। প্রায় ১৩ মিনিটে সেতু পার হয়েছি। অনেক আনন্দ লাগছে। ঈদের যাত্রা দুর্ভোগমুক্ত করার জন্য সরকার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তাতে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”

Share