বাংলাদেশ বেতারের নাম পালটে দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর খুনিরা

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ঘাতক চক্র শাহবাগে বাংলাদেশ বেতার কেন্দ্র দখল করে। ঘোষণা দেয়, শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে। খোন্দকার মোশতাক আহমেদের নেতৃত্বে ক্ষমতা দখল করেছে সেনাবাহিনী। সব বাহিনী প্রধানের আনুগত্যের শপথ বাক্য পাঠও রেডিওতে সস্প্রচার করা হয় সেদিন। এছাড়া বঙ্গবন্ধুর খুনিরা বাংলাদেশ বেতারের নাম পালটে রেডিও পাকিস্তানের আদলে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ ঘোষণা করে, যা ’৭৫ থেকে ’৯৬ পর্যন্ত অপরিবর্তিত ছিল।

ঐ দিন ভোর ৪টার দিকে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা ফাঁকা গুলি করতে করতে বেতার ভবনে ঢোকে। খুনি মেজর ডালিম ভোর ৬টা ১০ মিনিটে প্রথম ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু হত্যার কথা। কিছুক্ষণ পরপর এই ঘোষণা প্রচার হতে থাকে। পরে মেজর ডালিম বিশ্বাসঘাতক খোন্দকার মোশতাক আহমদকে বেতার ভবনে নিয়ে এসে প্রেসিডেন্ট স্যালুট দেয়। বঙ্গবন্ধুর খুনিরা সেনা, নৌ, বিমান ও রক্ষীবাহিনীর প্রধানদের খোন্দকার মোশতাকের কাছে হাজির করে। আর তারা আনুগত্যের শপথবাক্য পাঠ করে। এরপর খোন্দকার মোশতাক ভাষণ দেয় বেতারে।

গবেষক খালেক বিন জয়েনউদদীনের গ্রন্থ ‘পনেরোই আগস্টের কালরাত’-এ ‘পনেরোই আগস্ট:বাংলাদেশ বেতারে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অপারেশন’ শীর্ষক লেখায় উল্লেখ আছে, ‘ভোর ৪টায় পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক রাইফেল ও স্টেনগানধারী একদল সৈনিক নিয়ে বরখাস্তকৃত মেজর ডালিম পূর্বে আরেকটি অপারেশন শেষে করে গেট পেরিয়ে অনায়াসে ভেতরে প্রবেশ করে এবং মূল গেট খোলার কর্কশ নির্দেশ দিয়ে ডিউটি রুমের সামনে দাঁড়ায়।’ … ‘কক্ষটিতে আসন নেবার কয়েক মিনিটের মধ্যে রুমের আধিকারিক আপেল মাহমুদ ভবনে ঢুকে হাসতে হাসতে মেজর ডালিমকে অভিনন্দন জানায় এবং পূর্বের পরিকল্পনা অনুযায়ী বেতার চালু করার উদ্যোগ নেয়।

ইতোমধ্যে আপেল মাহমুদ ফোন করে বেতার চালু অর্থাৎ স্টুডিওর মেশিনপত্র চালনা করার টেকনিশিয়ান ও প্রকৌশলীদের হত্যার ভয় দেখিয়ে বেতার ভবনে নিয়ে আসে। কিছুক্ষণ পরেই ওয়্যারলেসে মেজর ডালিম বঙ্গবন্ধু এবং অন্যদের নিধনের সংবাদ পায়। এরপর আপেল মাহমুদের মুসাবিদার বঙ্গবন্ধু হত্যার কুসংবাদটি হাতে নিয়ে বেতার স্টুডিওতে যায় মেজর ডালিম। প্রথম ক’বার খুনি স্বকণ্ঠে ঘোষণাটি প্রচার করে। পরে আল মাহমুদের লেখা ঐ ঘোষণা রেকর্ড করে বারবার প্রচার করা হয়।’

বইতে আরও উল্লেখ রয়েছে, ‘বেতার ভবনে ছুটে আসে মুক্তিযুদ্ধের প্রচণ্ড বিরোধিতাকারী খান আতা ওরফে আতাউর রহমান। তিনি আল মাহমুদের রুমে বসে নিজের লেখা দুটি গানের সুর করেন। গান দুটি মেজর ডালিমের সঙ্গে আলাপ করে আগেই লেখা। গান দুটি ফারুক-রশিদ-ডালিমদের সূর্যসন্তান আখ্যায়িত করে লেখা। একটি গানের প্রথম চরণ এরকম—‘ওরা সূর্যসন্তান-সূর্যসেনা … ওরা কোনো বাধা মানবে না।’

Share