বাবা মা-ভাইবোনের রক্তাক্ত লাশের পাশে বসে কাঁদছিল শিশুটি

নিজস্ব জেলা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ‘ফোর মার্ডার’ ঘটনায় ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে মাত্র ৪ মাস বয়েসের শিশু কন্যা মারিয়া খাতুন। শিশুটি বর্তমানে স্থানীয় হেলাতলা ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা মেম্বার নাসিমা খাতুনের জিম্মায় রয়েছে।

স্থানীয়রা জানায়, মায়ের বুকের একফোটা দুধের জন্য শিশুটির কান্না থামানো যাচ্ছে না। শিশুটির আর্তনাদে এলাকার বাতাস ভারি হয়ে উঠেছে। এতিম শিশুটি সকালে তার বাবা, মা, ভাই, বোনের রক্তাক্ত লাশের পাশে বসে যখন চিৎিকার করে কান্নাকাটি করছিলো, তখন হাজারো জনতা চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি। তারাও কেঁদেছে অঝোরে। মায়ের বুকের একফোটা দুধের জন্য সেই ভোর থেকেই চিৎকার করে কান্না করছে অবুঝ শিশুটি।

এর আগে বুধবার গভীর রাতে সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলায় ঘরে ঢুকে এক দম্পতি ও তাদের দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করেছে দুবৃর্ত্তরা। উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।

নিহতরা হলেন- খলসি গ্রামের মৃত শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক মাছ ব্যবসায়ী শাহিনুর রহমান (৩৭), শাহিনুরের স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (১০) ও মেয়ে তাসনিম (৮)।

নিহত শাহিনুর রহমানের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম বলেন, বড় ভাইয়ের পরিবারে তিন ছেলে মেয়ে, তারা দুইজন এবং আমাদের মাসহ মোট ৬ জন বসবাস করেন। মা আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। তিনি (রায়হানুল) ছিলেন পাশের বাড়িতে, তার ঘরে।

তিনি জানান, বৃহস্পতিবার ভোরে বড় ভাইয়ের ঘর থেকে তার ৫ মাস বয়সী মেয়ে মারিয়ার কান্না শুনতে পান। অনেকক্ষণ ধরে শিশুটি কান্না করতে থাকায় তিনি বড় ভাইয়ের ঘরের সামনে গিয়ে ভাইকে ডাকতে থাকেন। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে বারান্দার গেটের সামনে দিয়ে গ্রিলের ফাঁক দিয়ে দেখতে পান ঘরের দরজা বাইরে থেকে আটকানো। পরে গেটের তালা ভেঙ্গে ঘরের দরজা খুলে দেখেন ভেতরে ভাই-ভাবির নিথর দেহ পড়ে আছে। অপর ঘরের দরজা খুলে দেখেন ভাইপো সিয়াম ও ভাইজি তাজনিমের মৃতদেহ পড়ে আছে। আর পাঁচ মাসের শিশুটি দোলনায় শুয়ে কাঁদছে।

রায়হানুল আরও জানান, তাদের সঙ্গে জমা-জমি নিয়ে পাশের কিছু লোকের বিরোধ রয়েছে। কিন্তু কারা এ ঘটনা ঘটালো তা তিনি জানেন না।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক (তদন্ত) হারান পাল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিজের ঘরের মধ্যে শাহিনুর রহমান, তার স্ত্রী ও দুই শিশু সন্তানকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। এদের মধ্যে শাহিনুরের পা বাঁধা ছিল এবং তাদের চিলেকোঠার দরজা খোলা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে- ছাদের চিলেকোঠার দরজা দিয়ে হত্যাকারীরা ঘরে প্রবেশ করে। ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। সুরতহাল শেষে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।

Share