ভিডিও বার্তায় লিজা : ‘এক কোটি টাকা লোন নিয়ে বাড়ি বানিয়েছি’

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হকের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজার প্রায় ৩১ মিনিটের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওতে লিজা এনামুলের সঙ্গে তার প্রেম-বিয়ে এবং আগের স্বামীকে তালাক দেওয়া, ব্যবসা বন্ধ করা ও ভ্রণ হত্যাসহ তার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন। শুধু তাই নয় ওই ভিডিও বার্তা তিনি জানিয়েছেন ব্যাংক লোন নিয়ে কোটি টাকায় বাড়ি বানিয়েছেন লিজা। ভিডিও বার্তার কপি তিনি গণমাধ্যমের স্থানীয় প্রতিনিধিদেরও পাঠিয়েছেন। যার একটি কপি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

এদিকে স্ত্রী-সন্তান থাকার পরও এমপি এনামুল হকের প্রচলিত আইনে রেজিস্ট্রি-কাবিন ছাড়াই প্রেম-বিয়ে ও তালাকের গল্প রাজশাহীতে ‘টক অব দ্য টাউনে’ পরিণত হয়েছে। শুধু তাই নয়, আরও প্রায় অর্ধডজন নারীর সঙ্গে এনামুলের বিশেষ সম্পর্কের মুখরোচক আলোচনা এখন স্থানীয়দের মুখে মুখে ঘুরে ফিরছে। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার কর্মীরা ওই আলোচনার তথ্য সংগ্রহ করছে বলে ওয়াকিবহাল সূত্রে জানা যায়।

অন্যদিকে সংসদ সদস্য এনামুলের দ্বিতীয় স্ত্রী আয়েশা আক্তার লিজা বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ে তার সঙ্গে এনামুলের প্রেম, আগের স্বামীকে তালাম দেওয়ানো, ভ্রণ হত্যা ও প্রতারণার বিচার দাবিতে আহুত সংবাদ সম্মেলন হঠাৎ করেই স্থগিত করেছেন। এ বিষয়ে তিনি সাংবাদিকদের আনুষ্ঠানিক কিছু না বললেও নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, এনমুলের সঙ্গে দাম্পত্য সম্পর্ক রাখতে মহানগর আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতার মধ্যস্থতার আয়েশা আক্তার লিজা তার সংবাদ সম্মেলন স্থগিত করেছেন। এ বিষয়ে জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির রাজশাহী বিভাগীয় নেতৃবৃন্দও গণমাধ্যমকে আনুষ্ঠানিক কিছু বলেননি। তবে স্থগিত সংবাদ সম্মেলন আগামী ৬ জুন শনিবার একই সময়ে হতে পারে বলে সমিতির নেতৃবৃন্দ আভাস দিয়েছেন।

প্রায় ৩১ মিনিটের ভিডিওতে আয়েশা আক্তার লিজা দাবি করেন, ‘এমপি এনামুল হকের সঙ্গেই তার দুই বার বিয়ে হয়েছে। প্রায় ৮ বছর আগে এনামুলের বাগমারার বাড়িতে তাদের প্রথম বিয়ে হয় মৌখিকভাবে। এরপর ২০১৮ সালের ১১ মে দ্বিতীয়বার রেজিস্ট্রি-কাবিন মূলে তাদের বিয়ে হয়। এরপর লিজা সন্তান নিতে চাইলে এমপির সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এক পর্যায়ে এমপি এনামুল লিজার স্বাক্ষর জাল করে তাকে ডিভোর্স দিয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

ভিডিতে লিজা আরও বলেন, ‘আমি আয়েশা আক্তার লিজা, বাসা রাজশাহীতে। আমি এমপি এনামুল হকের সেকেন্ড ওয়াইফ। এমপি এনামুল হকের সঙ্গে আমার সম্পর্কটা ফেসবুক থেকে। উনি ফার্স্ট আমাকে প্রোপজড করেন। ফেসবুকেই পরিচয়। তারপর তার সঙ্গে আমার কথা হয়। দিনের পর দিন কথা হতে থাকে। একটা পর্যায়ে দুই মাস পর উনি আমাকে প্রোপজড করেন। আমাকে ভালবাসি বলেন। আমি তার কথায় মুগ্ধ হয়ে যাই। তার প্রেমে পড়ে যাই। আমার তখন হাজবেন্ড ছিলেন এবং আমি একটা বিজনেস করতাম। আমার দু/তিনটা দোকান ছিল। আমার একটা ফ্যাশান হাউজ ছিল, লিজা ফ্যাসান হাউজ নামে আরডিএ মার্কেটে। আমার কাপড়ের বিজনেস ছিল। আমার একটা এনজিও ছিল। আমি উনার সাথে রিলেশনে জড়িয়ে যাই। উনি তখন আমাকে বলেন যে, আমি তোমাকে বিয়ে করব, তুমি তোমার হাজবেন্ডকে ছাইড়া দাও। আমি উনার কথাতে বিশ্বাস করে আমার হাজব্যান্ডকে তিন মাসের মধ্যে ডিভোর্স করে দিই। তার (সাংসদ) সেই মেসেজ, তার কথাগুলো আছে আমার কাছে। এরপর উনি আমাকে উনার বাগমারার বাসায় শিকদারিরতে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন। আমার ফ্যামিলির সকলের উপস্থিতিতে এবং তার ফ্যামিলির সকল সদস্যদের উপস্থিতিতে, তার বউ-বাচ্চা বাদে, তার ম্যাক্সিমাম বোন, দুলা-ভাইয়ের উপস্থিতিতে বিয়ে করেন। বিয়ে করার পর উনি আমাকে বলেন যে, আমার সামনে নির্বাচন। আমি এখন বিয়ে রেজিস্ট্রি করতে পারছিনা। আপাতত আমরা বিয়ে করে এভাবে থাকি। তুমি একটু গোপনে থাক, আমার স্বার্থের কথা চিন্তা করে। নির্বাচন পর্যন্ত তুমি আমার কাছে কাগজ চেওনা। নির্বাচনের পরে আমি তোমাকে রেজিস্ট্রি করে বিয়ে করে নিব। কারণ এখন যদি রেজিস্ট্রি করি আর এ ডকুমেন্ট যদি কোর্টে থেকে যায় তাহলে আমার নমিনেশন পাইতে সমস্যা হবে। আমি তার কথাতে বিশ্বাস করি এবং ওভাবেই তার সাথে সংসার করি। আমি এতটা দিন তার সাথে সংসার করছি, আমার কাছে এখনও তার ঢাকার বাসার চাবি আছে।’ লিজা আরও বলেন, ‘আমি তার ভাল’র কথা চিন্তা করে কখনো গণমাধ্যমে আসিনি, কখনো কারো কাছে প্রকাশ করিনি, আমি তার ওয়াইফ। আমার বিজনেসগুলো উনি ছাইড়া দিতে বলছেন, বলছেন যে তুমি ঘর থেকে বের হতে পারবা না। আমি আমার সব বিজনেস, সব দোকান ছাইড়া দিছি। এখন আমার নামে এক কোটি টাকা লোন আছে, যে টাকা দিয়ে আমি আমার বাড়িটা করেছি। এমপি সাহেবের সাথে পরিচয়ের আগে আমার তিন তলা একটা বাড়ি ছিল। আমি লোনের টাকা শোধ দিতে পারিনি বলে আমার নামে মামলাও হয়েছে। মামলাটি ব্যাংক করেছে। আমি ৮ বছর সংসার করছি, উনি আমার জন্য কিছুই করেননি। আমি টাকার জন্য নয়, তাকে ভালবেসে এতোটা দিন এতোটা সময় তার সাথে কাটিয়েছি। এখন সে আমাকে বলে আমি ভাল না, আমি প্রস্টিটিউট, আমি জঙ্গিবাদ। আমি ২০১৫ সালে কনসেপ করলাম। সে আমাকে বলে যে, এখন বাচ্চা নিলে আমার নির্বাচনে সমস্যা হবে। এখন বাচ্চাটা নষ্ট কর। তার কারণে, তার ভালোর জন্য আমি আমার বাচ্চাটা নষ্ট করেছিলাম। নির্বাচনে তার যখন নমিনেশন কনফার্ম হলো, তখন সে আমাকে ১১ মে ২০১৮ তে নির্বাচনের আগেই আমাদের রেজিস্ট্রি করে দ্বিতীয় বার বিয়ে হলো ঢাকায়।’

আয়েশা আরও বলেন, ‘এরপর আমি তাকে বললাম নির্বাচনের তো দুই বছর হয়ে গেল এখন তো তুমি আমাকে স্বীকৃতি দিবা। আমার একটা বাচ্চা নেয়া দরকার। আমার তো একটা লাইফের ব্যাপার আছে। আমার তো বয়স হয়ে যাচ্ছে। এ কথাকে কেন্দ্র করে এক মাস আগে আমাদের মধ্যে একটু মনোমালিন্য হয়। তারপরে আমি একটু ইমোশনালি হয়ে তাকে বললাম, তুমি যদি আমাকে বাচ্চা দিতে নাই চাও তাহলে ডিভোর্স করে দাও। কিন্তু সত্যি সত্যি যে আমাকে ডিভোর্স দিবে এটা কল্পনাও করতে পারি নাই … কান্না। আমাকে চাঁদ রাতের দিন হঠাৎ করে ম্যাসেজ দিয়ে বলছে, যে তুমি তো আমাকে ডিভোর্স করে দিছ। আমি তোমার ডিভোর্স পেয়ে গেছি। আমি তাকে বললাম তুমি আমার ডিভোর্স ক্যামন করে পাইলা। আমি তো তোমাকে ডিভোর্স করি নাই। এরপর আমাকে হোয়াইটস অ্যাপে একটা কাগজ সেন্ট করলোা যেটা আমার নামে জাল স্বাক্ষর করা।’ এছাড়া সাংসদ এনামুল হকের দাবিকৃত সাম্প্রতিক তালাকের নোটিশও এখনো পাননি বলেও দাবি করেন তিনি।

এ সব বিষয়ে মতামতের জন্য সাংসদ এনামুল হকের ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার রিং করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Share