সাতক্ষীরায় এক স্কুলে ৫০ বাল্যবিবাহ তদন্ত কমিটি গঠন

সাতক্ষীরা জেলা প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আলীপুর ইউনিয়নের এক স্কুলের ৫০ ছাত্রীর বাল্যবিবাহের ঘটনা খতিয়ে দেখতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই স্কুলসহ ইউনিয়নের বাকি তিনটি স্কুলেরও শিক্ষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাল্যবিবাহ হওয়া এবং বাল্যবিবাহের ঝুঁকিতে থাকা ছাত্রীদের চিহ্নিত করতে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আজ বুধবার আলীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ইউপি কার্যালয়ে চারটি স্কুলের শিক্ষক, অভিভাবক এবং আলীপুর ইউনিয়ন বাল্যবিবাহ নিরোধ কমিটির সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। কাল বৃহস্পতিবার ইউনিয়নের চার স্কুলের শিক্ষক, ইউপি চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বৈঠক ডেকেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।

গত মঙ্গলবার একটি জাতীয় দৈনিকে ‘সাতক্ষীরার এক স্কুলেই ৫০ বাল্যবিবাহ’ শিরোনামের সংবাদ প্রকাশের পর এসব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, আলীপুর ইউনিয়নের আলীপুর আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামের স্কুলটির ৬৬ ছাত্রীর এ বছর বিয়ে হয়েছে। এর মধ্যে ৫০ জনের বাল্যবিবাহ হয়েছে।

সাতক্ষীরা সদর ইউএনও ফাতেমা-তুজ-জোহরা বলেন, সংবাদপত্রে একটি স্কুলের এতসংখ্যক ছাত্রীর বাল্যবিবাহের ঘটনা প্রকাশের পর এ নিয়ে করণীয় ঠিক করতে এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য সুপারিশ তুলে ধরতে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গতকাল গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে আহ্বায়ক, উপজেলা মহিলাবিষয়ক কর্মকর্তাকে (কর্মসূচি কর্মকর্তা) সদস্যসচিব এবং উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে সদস্য করা হয়েছে।

ইউএনও বলেন, ‘আমি আজ (বুধবার) ওই স্কুলসহ পাশের আরেকটি স্কুল পরিদর্শন করে শিক্ষকদের সঙ্গে দুই দফায় বৈঠক করেছি। আগামী শনিবার স্কুলটিতে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে একটি সচেতনতামূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে শিক্ষক, অভিভাবক, ছাত্রী এবং বেসরকারি সংগঠনের (এনজিও) কর্মীদের অর্ন্তভুক্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া বাল্যবিবাহ হওয়ার আগেই যেন তথ্য পাওয়া যায়, সে জন্য স্বেচ্ছাসেবক দলকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

আলীপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আবদুর রউফ আজ বলেন, ওই স্কুলসহ অন্য স্কুলের শিক্ষকদের বলা হয়েছে, ছাত্রীদের মধ্যে কাদের বাল্যবিবাহ হয়েছে এবং কারা ঝুঁকিতে আছে, সেই তালিকা করে জমা দিতে। তিনি বলেন, ‘বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের অভিভাবককে ডাকব। তারা কেন এই কাজ করল? সাজা হয় না দেখে ওদের মধ্যে কোনো ভয় কাজ করে না। অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, মেয়েগুলোর যে পড়াশোনা হবে না, সে জন্য আমাদেরই কষ্ট বেশি। নিজের ভালো যদি কেউ না বোঝে, তাহলে আপনি-আমি আর কতটুকু করতে পারব!’

সংবাদ প্রকাশের পর আলীপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে আরেকটি স্কুলের শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়েও তালিকা করা শুরু হয়েছে বলে জেলার বিভিন্ন পেশাজীবীকে নিয়ে গড়া বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ কমিটির প্রশাসনিক প্রধান মো. সাকিবুর রহমান জানিয়েছেন। তিনি আজ প্রথম আলোকে বলেন, ওই শিক্ষকদের সাতটি দলে ভাগ করে ছাত্রীদের বাড়ি বাড়ি পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একটি দলের কাছে জানতে পেরেছেন, তাঁরা সাতটি বাল্যবিবাহ শনাক্ত করেছে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এই স্কুলেও বাল্যবিবাহের সংখ্যা ৪০-৫০ হবে। স্কুল কর্তৃপক্ষ কাল ইউনিয়ন পরিষদে তাদের তথ্য জমা দেবে। ওই ইউনিয়নের বাকি দুটি স্কুল হচ্ছে মাহমুদপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাহমুদপুর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়।

Share