‘সাহসী’ বর্ষা যেভাবে ঠেকাল নিজের বাল্যবিবাহ

নয়াবার্তা প্রতিনিধি : নিজের বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে থানায় হাজির হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদরের কিশোরী বর্ষা এখন সাহসী মেয়ে। সে ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী। আজ বুধবার সে যখন বিদ্যালয়ে যায়, গর্বিত শিক্ষক-সহপাঠীরা তাকে স্বাগত জানায়। সহপাঠীরা করতালি দিয়ে বরণ করে নেয় বাল্যবিবাহের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া তাদের প্রিয় বন্ধুকে। ভালোবেসে জড়িয়ে ধরে। সাহসী হওয়ার এমন অভিবাদনে আনন্দিত বর্ষার চোখে জল আসে।

আজ বর্ষা যখন বিদ্যালয়ে গেল, সবার একটাই প্রশ্ন, এত সাহস সে কোথায় পেল? দশম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের এই ছাত্রী উত্তরে বলছিল, ‘যাদের বাল্যবিবাহ হয়েছে, তাদের কেউ সুখে-শান্তিতে নেই। পড়াশোনা শিখে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বিয়ে করতে চাই।’ বাল্যবিবাহের কুফল সম্পর্কে তাদের সচেতন করার জন্য শিক্ষক শামসুন্নাহার শিলার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে সে। বলে, ‘ম্যাডাম প্রতিদিন ক্লাসে গিয়ে বলেন, বাল্যবিবাহ করা যাবে না। ছাত্রীদের স্বাবলম্বী হতে হবে, নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকা যাবে না। এসব কথা আমাকে সাহস জুগিয়েছে।’

আমার ঘটনা পেপারে লিখে সাংবাদিকেরা ভালো কাজ করেছেন। এতে অন্য মেয়েরা অনুপ্রাণিত হবে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে। আমি পড়াশোনা শিখে সাংবাদিক হতে চাই।

বান্ধবীরা জানতে চাইছিল, নিজের বিয়ে ঠেকাতে সে যে পুলিশের কাছে চলে গেল, তার ভয় করেনি? উত্তরে বর্ষা বলে, ‘আমি জানতাম, হয়তো তারা অন্য ব্যবস্থা না নিলেও বিয়েটা অন্তত বন্ধ করবে। এটা তো পুলিশেরই কাজের অংশ, দায়িত্ব।’ তার খবরটি গণমাধ্যমে প্রকাশ করে সাংবাদিকেরা ভালো কাজ করেছেন বলে মনে করে সে। তার ভাষায়, ‘আমার ঘটনা পেপারে লিখে সাংবাদিকেরা ভালো কাজ করেছেন। এতে অন্য মেয়েরা অনুপ্রাণিত হবে। বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।’ জানাল, পড়াশোনা শিখে সে সাংবাদিক হতে চায়।

বর্ষা বলে, কয়েক দিন ধরে মামা ও খালারা মিলে তার বিয়ের জন্য চাপ দিয়ে আসছিলেন। সে বিয়ে করতে চাইছিল না। এমন টানাপোড়েনের মধ্যে সে নিজের পড়াশোনায় মনোযোগী হতে পারছিল না। এই বয়সে বিয়ে হয়ে যাবে, ভাবতেই আতঙ্কে ঘুমাতে পারত না সে। বর্ষা বলছিল, ‘প্রায়ই স্বপ্নে দেখি, মা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর খুব খারাপ লাগে। এরপর যেকোনো মূল্যে বিয়ে বন্ধের চিন্তা করতে থাকি। মনে মনে একটা উপায় বের করি। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার থানায় হাজির হয়ে ওসি স্যারকে সব খুলে বললে তিনি দ্রুত ব্যবস্থা নেন। বন্ধ হয়ে যায় আমার বিয়ে।’

বর্ষা বলছিল, সদর থানার পাশ দিয়ে তাকে বাড়ি থেকে স্কুলে আসা-যাওয়া করতে হয়। ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে পুলিশকে সহযোগিতা করুন’, এমন ব্যানার দেখে সে পুলিশের সহযোগিতা চাইতে যায়।

প্রায়ই স্বপ্নে দেখি, মা বিয়ে দিয়ে দিচ্ছেন। ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর খুব খারাপ লাগে। এরপর যেকোনো মূল্যে বিয়ে বন্ধের চিন্তা করতে থাকি। মনে মনে একটা উপায় বের করি।

ঝিনুক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেবেকা সুলতানা বলেন, মেয়েটির এসএসসি পরীক্ষা পর্যন্ত বিনা খরচে প্রাইভেট পড়ার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়েছে।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘মেয়েটির স্কুলে যাতায়াতের জন্য যে খরচ প্রয়োজন, তার স্থায়ী সমাধান করে দিয়েছি।’

Share