স্বপ্নের সীমানা ছাড়ানো জয়

ক্রীড়া প্রতিবেদক : ‘সিরিজ শুরুর আগে কি স্বপ্নের সীমানায় ছিল হোয়াইটওয়াশ?’, সংবাদ সম্মেলনে প্রথমেই এই প্রশ্ন ছুটে গেল সাকিব আল হাসানের দিকে। উত্তর দিতে খুব একটা ভাবতে হলো না তাকে। অভাবনীয় এই সাফল্যকে ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে ‘প্রত্যাশিত কিছু’ প্রমাণ করার পথেও তিনি হাঁটলেন না। বাংলাদেশ অধিনায়ককের সরাসরিই উত্তর, ‘নাহ, ওভাবে চিন্তা ছিল না..।”

চিন্তা থাকার কোনো কারণও নেই। ইংল্যান্ড টি-টোয়েন্টির বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় সেরা দল। গত কয়েক বছরে ক্রিকেটের সব সংস্করণের ভাষা, চরিত্র ও ধরন বদলে দেওয়া দল। বাংলাদেশ সেখানে টি-টোয়েন্টির ভাষা পড়তেই হিমশিম খাওয়া দল। লড়াই তো জমারই কথা নয়!

যদিও ইংল্যান্ডের সম্ভাব্য সেরা দলের বেশ কজনই এই সিরিজে নেই। তবে এই ইংল্যান্ড তো বিশ্ব ক্রিকেটে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব ফুটিয়ে তুলেছে শক্তির গভীরতা দিয়েও। তাদের বিকল্প ক্রিকেটাররাও খুব একটা পিছিয়ে নেই। বাংলাদেশ যদিও খেলছে দেশের মাঠে, এই সংস্করণে তবু ভরসা করার ভিতই নেই।

বাংলাদেশ এই সিরিজ জিতে যাবে, সিরিজ শুরুর আগে এমন ভাবনা খুব বেশি লোকের থাকার কথা নয়। সেই দল শুধু সিরিজই জেতেনি, ইংল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করে ছেড়েছে। কোনো ম্যাচেই উত্তেজনা শেষ ওভার পর্যন্ত জিইয়ে থাকেনি। যেটায় ফুটে ওঠে, বাংলাদেশ জিতেছে বেশ দাপটেই।

সিরিজের শুরু থেকেই মাঠে ক্রিকেটারদের শরীরী ভাষা, নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার তাড়না, দুর্দান্ত টিম স্পিরিট, সবকিছু দেখেই মনে হয়েছে, নিজেদের মেলে ধরতে মরিয়া ছিল দল।

সাকিব অবশ্য বললেন, তাদের চাওয়া ছিল স্রেফ ভালো খেলা।

“সিরিজ শুরুর আগে কেউ চিন্তাও করিনি যে আমাদের ম্যাচ জিততে হবে বা এমন কিছু। আমরা খুব ভালো ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি। তিন ম্যাচেই আমরা চেষ্টা করেছি ব্যাটিংয়ে যার যার জায়গা থেকে যতটুকু সম্ভব অবদান রাখা, বোলিংয়েও। ফিল্ডিংটা আমাদের তিনটা ম্যাচেই আমার মনে হয় অসাধারণ ফিল্ডিং করেছি। বিশেষ করে, টি-টোয়েন্টি ম্যাচে, যেখানে ২ রান, ৪ রান, ১০-১৫ রান পার্থক্য গড়ে দেয়, ওই জায়গাতে আমরা এবার অনেক বড় একটা টিক মার্ক দিয়েছি এবার।”

দেশের মাঠে ২০২১ সালে নিউ জিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। তবে ক্রিকেট বিশ্বের প্রথাগত কোনো বড় দলকে হোয়াইটওয়াশ করার সাফল্য ধরা দিল এই প্রথম। সাকিব অবশ্য কোনো সিরিজের সাফল্যকে এগিয়ে বা কোনোটিকে পিছিয়ে রাখার তুলনায় যেতেই নারাজ।

“আসলে আমি তুলনা করতে চাই না কোনো সিরিজের সঙ্গে কোনো সিরিজ। প্রতিটা ম্যাচ জেতা আমাদের জন্য জেতা গুরুত্বপূর্ণ। যেভাবে খেলে জিতেছি, আমার মনে হয় আমরা এটা খুব বেশি একটা করিনি, বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে। ওদিক থেকে আমরা সন্তুষ্ট, পুরো দল।”

স্বপ্নের সীমানা ছাড়ানো জয় : এই সিরিজে বাংলাদেশের জয়ের মতো আলোচনার জন্ম দিয়ে খেলার ধরনও। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার যে বার্তা দল থেকে বারবার দেওয়া হয়েছে, নিজেদের একটি ঘরানা তৈরি করার যে তাড়নার কথা বছরের পর বছর ধরে বলা হয়েছে, সেসবের ছাপ এই সিরিজে পড়েছে বলেই বাইরে থেকে দেখে মনে হয়েছে।

সাকিবের মতে, এই পরিবর্তন রাতারাতি হয়নি। এই দফায় তিনি টি-টোয়েন্টির নেতৃত্ব পাওয়ার পর গত অগাস্ট-সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ থেকে প্রক্রিয়াটা শুরু হয়েছে বলে দাবি তার। সেখান থেকে বিশ্বকাপ হয়ে এই সিরিজে তা বয়ে এসেছে।

“দেখুন, আমি বলব যে পরিবর্তনটা …জানি না, এশিয়া কাপ থেকে বোধহয় আমার অধিনায়কত্ব শুরু হয়েছে, আমরা হয়তো সেখানে ম্যাচ জিতিনি, কিন্তু আমরা খুবই ভালো ক্রিকেট খেলেছি। এশিয়া কাপ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপে…আমি তো মনে করি আমরা খুবই দুর্ভাগা যে বিশ্বকাপে সেমিফাইনাল খেলত পারিনি। একটা ম্যাচ বেশি জিতলেই সেমিফাইনাল খেলতে পারতাম, ওই সুযোগ আমাদের ছিল।”

“আমরা জানতাম আমরা যে খুবই ক্লোজ আছি। আমার মনে হয়, পুরো দলেরই এই বিশ্বাস গত বিশ্বকাপ থেকে তৈরি হয়েছে যে, বড় দলের সঙ্গে আমরা লড়াই করতে পারি। বিশ্বকাপে যাওয়ার আগে অনেক সংশয় ছিল, কিন্তু বিশ্বকাপে পারফরম্যান্স আমাদের বিশ্বাস দিয়েছে বড় দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারি। আর যখন আমাদের দেশে খেলা, আত্মবিশ্বাস আরও বেশি ছিল।”

শুরুটা কয়েক মাস আগে হলেও ফল আসতে একটু সময় লেগেছে, তা বলছেন সাকিব নিজেই। এখন তার আশা, এই ধারা যেন সামনেও বয়ে নিতে পারে দল।

“আমরা যেভাবে খেলেছি, যে অ্যাপ্রোচ নিয়ে খেলেছি, ওটা একটা তৃপ্তির জায়গা। সেটা আমরা এশিয়া কাপ থেকেই শুরু করেছি। আসলে ফল আসতে একটু সময় লাগে। এটা শুরু হলো। আশা করি এটা যেন ধরে রাখতে পারি আমরা।”

বাংলাদেশের পরের টি-টোয়েন্টি সিরিজ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে, এই মাসেই। তার আগে অবশ্য আইরিশদের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজও খেলবে বাংলাদেশ।

Share