হরিণাকুণ্ডুতে ভুট্টাচাষ : প্রতি বিঘায় খরচ ১৫ হাজার, লাভ ২৯ হাজার

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি : অল্প পরিশ্রম, স্বল্প খরচে বেশি ফলন হওয়ায় ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডুতে কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বেড়েছে। ধানের চেয়ে অধিক লাভজনক হওয়ায় ভুট্টা চাষ এখন এ অঞ্চলের প্রধান আবাদি ফসলে পরিণত হয়েছে। চাষিরা বোরো চাষ কমিয়ে উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করছেন। আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার ভালো ফলনের আশা করছেন কৃষক।

ভুট্টা চাষ এ অঞ্চলের কৃষি অর্থনীতিতে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে। মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থার ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে এবং স্বনির্ভর হতে শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষক। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং ভুট্টা গাছ ও সবুজপাতা উন্নতমানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবেও এর যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। জ্বালানি হিসেবে ভুট্টা গাছের রয়েছে আলাদা কদর। এ ছাড়া ভুট্টার পাতা, কাণ্ড, ছাল কিংবা মোচা কোনোটাই উচ্ছিষ্ট থাকে না।

উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলার ভায়না, জোড়াদাহ, তাহেরহুদা, ফলসী, দৌলতপুরসহ ৮ ইউনিয়ন ও পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপকভাবে ভুট্টা চাষ হচ্ছে। উপজেলার ভেড়াখালী, কামারখালী, রিশখালী, দখলপুর, ভূঁইয়াপাড়া, গোবরাপাড়া গ্রামেও দেখা যায় একই চিত্র। এ এলাকায় আগাম ভুট্টা রোপণ করায় গাছের উচ্চতা মানুষকে ছাড়িয়ে গেছে। সবুজ পাতায় ছেয়ে গেছে মাঠের পর মাঠ। ভুট্টার ক্ষেতগুলোর পরিচর্যা ও নিড়ানি এবং সেচ কাজসহ নানা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা।

কৃষকরা জানান, ৯৫ দিনের মধ্যে ভুট্টার ফলন পাওয়া সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে চাষ, বীজ, সেচ, সার ও কীটনাশক এবং পরিচর্যা বাবদ খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন হয় ৪০ থেকে ৪৫ মণ। প্রতি মণের বর্তমান বাজার মূল্য এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা।

উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ উপজেলায় গত বছর ভুট্টা আবাদ হয়েছিল ৮৫০ হেক্টর জমিতে। চলতি বছর ৮২০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও তা ছাড়িয়ে ৯৩০ হেক্টরেরও অধিক জমিতে ভুট্টাচাষ করা হচ্ছে। গত ৫ বছরের তুলনায় এ বছর ভুট্টার বেশি আবাদ হয়েছে।

উপজেলার ভেড়াখালী গ্রামের ভুট্টাচাষি হিরু আলী বলেন, ‘বোরো ধান চাষে খরচ অনেক বেশি, লাভ কম। অথচ ভুট্টা চাষ করতে তেমন খরচ হয় না, পরিশ্রম কম কিন্তু লাভ বেশি। তাই ভুট্টা চাষ করছি।’

দৌলতপুর গ্রামের চাষি আব্দুল আলীম জানান, ‘যে কোনো ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষই এখন লাভজনক। এবার ৩ বিঘা জমিতে তিনি ভুট্টা আবাদ করেছেন। এরই মধ্যে বিঘাপ্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার টাকা। বর্তমানে মণপ্রতি এক হাজার ৬০০ টাকা ভুট্টা বিক্রি হচ্ছে। দাম এ রকম থাকলে বেশ ভালো লাভ হবে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাফিজ বলেন, ‘ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল। অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষ করে চাষিরা লাভবান হচ্ছেন। রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম, স্বল্প খরচে, কম সময়ে অধিক লাভ পাওয়ায় এখানকার কৃষকরা ভুট্টা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। চলতি মৌসুমে ভুট্টার বাম্পার ফলন হবে।’

Share