নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার এবং তাঁর হেনস্তাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন ৫৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক। তাঁরা বলেছেন, রোজিনাকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে সরকার সত্য প্রকাশের বিরুদ্ধে যে অবস্থান নিয়েছে এবং নিপীড়নমূলক বার্তা দিচ্ছে, তা দেশের সংবিধান এবং স্বাধীনতার চেতনার সম্পূর্ণ পরিপন্থী।
মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে ৫৭ জন নাগরিক এ কথা বলেন। তাঁরা বলেন, ‘মানুষের স্বাস্থ্যের অধিকার নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করতে যেয়ে রোজিনা আজ জনগণের অর্থে পরিচালিত মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের হাতে নিপীড়িত হয়ে জেলে অবস্থান করছেন। এ অবস্থাকে আমরা দুঃসহ ও চরম অগ্রহণযোগ্য মনে করছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সংঘটিত ন্যক্কারজনক ঘটনায় এ দেশের স্বাধীন সাংবাদিকতা, মানবাধিকার এবং নাগরিকের মানবিক মর্যাদাকে ভূলুণ্ঠিত করা হয়েছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতার চর্চা করতে গিয়ে এবং বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন প্রকাশ করে রোজিনা ইসলাম যাদের রোষানলে পড়েছেন, তারাই রোজিনা ইসলাম তথা এ দেশে সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠ রুদ্ধ করতে তাঁকে এভাবে হেনস্তা করেছে এবং তাঁর বিরুদ্ধে মামলা সাজিয়েছে।
বিবৃতিতে বিশিষ্টজনেরা বলেন, ‘অতীতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সীমাহীন দুর্নীতির সংবাদের আলোকে আমরা এ-ও মনে করি যে, সরকারি নথির প্রকাশ অনেক ক্ষেত্রে বরং জনস্বার্থের জন্য অনেক বেশি প্রয়োজনীয় এবং এর বিরুদ্ধে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কোনো আইন বা আইনি ব্যাখ্যা থাকতে পারে না। বিশেষ করে মহামারির প্রেক্ষাপটে এই সব তথ্য জানার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে এবং ঔপনিবেশিক আইনের দোহাই দিয়ে, মনগড়া অভিযোগের ভিত্তিতে সে অধিকারে বাধা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।’
বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা সরকারকে এ দেশে স্বাধীন সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা অবারিত রাখার ক্ষেত্রে তার সাংবিধানিক দায়দায়িত্বের কথাও স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি এবং অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টসহ স্বাধীন সাংবাদিকতার পথে বাধা সৃষ্টি করে এমন সকল আইন ও বিধিবিধান বাতিলের জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বিবৃতিতে বলা হয়, করোনাকালীন রোজিনা ইসলামের বিভিন্ন প্রতিবেদন স্বাস্থ্য খাতে সুশাসন ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
বিশিষ্টজনেরা সাংবাদিক রোজিনাকে হেনস্তা, হয়রানি ও গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা এবং অবিলম্বে তাঁর বিরুদ্ধে করা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা প্রত্যাহার, তাঁর মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি করেন। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে আটক থাকা অবস্থায় রোজিনার ওপর মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ অন্যদের শারীরিক নিপীড়নের যেসব খবর ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর ভিত্তিতে চিহ্নিত কর্মকর্তাদের সাময়িক বরখাস্ত এবং নিরপেক্ষ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানানো হয়।
বিজ্ঞাপন
বিবৃতিদাতা ৫৭ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন, শিক্ষাবিদ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল, রাশেদা কে. চৌধুরী, হাফিজ উদ্দিন খান, হোসেন জিল্লুর রহমান, অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, মানবাধিকার কর্মী হামিদা হোসেন, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, নিজেরা করি-এর সমন্বয়কারী খুশি কবীর, সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহ্দীন মালিক ও সারা হোসেন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, অধ্যাপক আলী রীয়াজ, অধ্যাপক স্বপন আদনান, আলোকচিত্রী শহিদুল আলম, এএলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সি আর আবরার, আসিফ নজরুল, তানজিম উদ্দিন খান, রোবায়েত ফেরদৌস, সামিনা লুৎফা, শাহনাজ হুদা ও সুমাইয়া খায়ের, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, মির্জা তাসলিমা সুলতানা, অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, নাসরিন খন্দকার ও সায়েমা খাতুন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মাইদুল ইসলাম ও সাদাফ নূর, গবেষক নোভা আহমেদ ও রোজিনা বেগম, সাংবাদিক সায়দিয়া গুলরুখ, সাধনার আর্টিস্টিক ডিরেক্টর লুবনা মরিয়ম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথের নায়লা জেড খান, আইনজীবী তবারক হোসেইন, মানবাধিকার কর্মী শারমীন মুরশিদ, হানা শামস আহমেদ, সঞ্জীব দ্রং, পল্লব চাকমা, ফষ্টিনা পেরেরা, অরূপ রাহী, বিনা ডি কস্টা, রেজাউর রহমান লেলিন, শিরিন প হক, নূর খান লিটন, রেহনুমা আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, সালমা আলী, অধ্যাপিকা পারভীন হাসান, অধ্যাপিকা ফিরদৌস আজিম, অধ্যাপক আকমল হোসেন, কবির কিশোর ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।