নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : রাজশাহী নগরের সাগরপাড়া এলাকায় চার দিন থেকে একাই একটি বাড়িতে পড়ে আছেন আফসার উদ্দিন (৭০) নামের এক ব্যক্তি। ডাকলে সাড়া দিচ্ছেন, কিন্তু উঠতে পারছেন না। করোনা সন্দেহে স্বজনহীন মানুষটির কাছে প্রতিবেশীরা যেতে পারছেন না।
আফসার উদ্দিনের বাড়িটি নগরের সাগরপাড়া জামে মসজিদের পূর্ব দিকের একটি বাড়ির পরেই। তিনি অবিবাহিত। একাই বাড়িতে থাকতেন। আগে ব্যবসা করতেন। সম্প্রতি কিছুই করতেন না।
বৃহস্পতিবার রাতে স্থানীয় এক ব্যক্তি এই প্রতিবেদককে ফোন করে তাঁকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় কি না, তার জন্য পরামর্শ চান। তিনি বলেন, আফসার উদ্দিন নিয়মিত মসজিদের নামাজে যেতেন। চার দিন থেকে তাঁকে মাসজিদে না দেখে তাঁরা বুঝতে পারেন তাঁর কিছু হয়েছে। বাসায় উঁকি দিয়ে দেখেন তিনি পড়ে আছেন।
শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, একটি পুরাতন জরাজীর্ণ বাড়ির বারান্দায় মানুষটি পড়ে রয়েছেন। বাড়ির সামনে কিছু গাছগাছালি রয়েছে। একটি লুঙ্গি চিরে দুভাগ করে সামনে পর্দার মতো করে দেওয়া রয়েছে। তার ফাঁক দিয়ে দেখা গেল তিনি চোখ মেলছেন। কী হয়েছে জানতে চাইলে একবার শুধু ক্ষীণ স্বরে বলেন, কিছু হয়নি। তবে কিছুক্ষণ পরপর তাঁর কাশির শব্দ পাওয়া যাচ্ছিল। দেখে বোঝা যাচ্ছিল তাঁর ওঠার মতো শরীরে শক্তি নেই। একেবারে পড়ে রয়েছেন। চারপাশের পরিবেশটা খুবই মানবেতর।
প্রতিবেশী ওই ব্যক্তি জানান, বৃহস্পতিবার রাতেই বিষয়টি কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের রাজশাহীর বিভাগীয় পরিচালক কায়সার পারভেজকে জানানো হয়। তিনি বিষয়টি প্রথমে ৯৯৯ জরুরি সেবার নম্বরে ফোন করতে বলেন। তারা না করলে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান। রাতেই ওই প্রতিবেশী জরুরি সেবার ৯৯৯–এ ফোন করেন। সেখান থেকে স্বাস্থ্যসেবার আরেকটি নম্বর দেওয়া হয়। ওই নম্বরে ফোন করে তিনি কোনো ব্যবস্থা করতে পারেননি বলে জানান। কিছুক্ষণ পরে ওই ব্যক্তি জানান, দরকার নেই। স্থানীয়ভাবেই তাঁরা একটা ব্যবস্থা করবেন।
শুক্রবার দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তিনি একইভাবে পড়ে রয়েছেন। নাম প্রকাশ না করে একজন প্রতিবেশী বলেন, করোনা হয়েছে কি না, এই সন্দেহে তাঁরা কাছে যেতে পারছেন না। তবে রাতে তিনি অন্য একজনকে দিয়ে শুকনা খাবার পাঠিয়েছিলেন। তিনি খেয়েছেন। সকালেও পাঠিয়েছিলেন। বোধ হয় খেয়েছেন। তিনি বলেন, বিকেলে তাঁরা করোনা পরীক্ষার একটা ব্যবস্থা করবেন।