নিজস্ব প্রতিবেদক : চলতি বছর জুনের শেষভাগে পদ্মা সেতু উদ্বোধন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক শেষে সচিবালয়ে বৈঠকের সিদ্ধান্ত জানাতে এসে এ কথা জানান তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, আশা করি জুনের শেষ সপ্তাহের আগে পদ্মা সেতু চালুর জন্য রেডি হয়ে যাবে। তবে আজকের মন্ত্রিসভার বৈঠকে পদ্মা সেতুর নামকরণ নিয়ে কোনো আলোচনা হয়নি। সেতু কর্তৃপক্ষ আবেদনের তারিখ চেয়ে সারসংক্ষেপ পাঠাবে, সে অনুযায়ী তারিখ ঠিক হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপত্বিতে অনুষ্ঠিত হয় এ বৈঠক।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জুন মাসের যে দিন সময় দেবেন, সেদিনই উদ্বোধন করা হবে। সারসংক্ষেপে শেখ হাসিনার নামে পদ্মা সেতুর নামকরণের প্রস্তাব করা হবে।
দক্ষিণ জনপদের সঙ্গে রাজধানীর সরাসরি যোগাযোগ স্থাপনের এই সেতুর নাম ‘শেখ হাসিনা সেতু’ করার দাবি ইতোমধ্যে তুলেছে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। নানা অঙ্গন থেকে তাতে সমর্থনও দেওয়া হচ্ছে।
পদ্মা নদীর বুকে নিজস্ব অর্থায়নে ৩০ হাজার কোটি টাকায় ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর কাজ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে উদ্বোধন করেছিলেন শেখ হাসিনা।সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ মান বজায় রাখা হয়েছে বলে জানান খন্দকার আনোয়ারুল।
গত এপ্রিলে সংসদে প্রধানমন্ত্রী জানান, ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতুটি নির্মিত হয়েছে।
গত ১৭ মে পদ্মা বহুমুখী সেতুর জন্য যানবাহনের শ্রেণি ও টোল হার চূড়ান্ত করেছে সরকার। মঙ্গলবার এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়েছে।
টোল হারে মোটরসাইকেলের টোল ১০০ টাকা, কার ও জিপ ৭৫০ টাকা, পিকআপ এক হাজার ২০০ টাকা, মাইক্রোবাস এক হাজার ৩০০ টাকা।
৩১ বা এর কম আসনবিশিষ্ট বাসের জন্য ১ হাজার ৪০০ টাকা, ৩২ বা এর বেশি আসনবিশিষ্ট বাসের জন্য ২ হাজার টাকা এবং ৩ এক্সেলবিশিষ্ট বাসের জন্য ২ হাজার ৪০০ টাকা টোল নির্ধারণ করা হয়েছে।
এছাড়া ৫ টন পর্যন্ত ছোট ট্রাকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, ৫ টনের অধিক থেকে ৮ টন পর্যন্ত মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ১০০ টাকা, ৮ টনের অধিক থেকে ১১ টন পর্যন্ত মাঝারি ট্রাকে ২ হাজার ৮০০ টাকা, ৩ এক্সেল পর্যন্ত ট্রাকে ৫ হাজার ৫০০ টাকা, ৪ এক্সেল পর্যন্ত ট্রেইলারে ৬ হাজার টাকা। এ আদেশ পদ্মা বহুমুখী সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য উন্মুক্ত হওয়ার দিন থেকে কার্যকর হবে।
পদ্মা সেতুর নির্ধারিত টোল বেশি হওয়া নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি বলেন, টোলটা হল, যখনই যেখানে ব্রিজ করি এর স্ট্যান্ডার্ড হল ফেরির দেড় গুণ। সেটা ধরেই করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ব্রিজ হল প্রায় ৫ কিলোমিটার আর এটা হলো ৯.৮৬ (সংযোগ সড়কসহ) অর্থাৎ প্রায় দ্বিগুণ। তাছাড়া ফেরির যে চরিত্র, সেটা কিন্তু এক ছিল না। বঙ্গবন্ধু ব্রিজ যখন ফেরিতে ধরা হয়েছে, ১৯৯৫-৯৬ এর টোল ধরে করা হয়েছে। তারপরে দুই বার বাড়ানো হয়েছে। পদ্মায় তো প্রেজেন্ট টোলের রেট ধরে করা হচ্ছে। ফেরির যে রেটটা, এটাই হল জেনারেল প্র্যাকটিস, ১ দশমিক ৫ গুণ, এই জিনিসটা একটু খেয়াল রাখতে হবে। তাও পরবর্তীতে যদি মনে করা হয় যে এটা বেশি হয়েছে।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর টাকা সেতু কর্তৃপক্ষকে ১ শতাংশ হার সুদে সরকারকে ফেরত দিতে হবে। সুতরাং সেতু কর্তৃপক্ষকে ওই জায়গা থেকে টাকা উপার্জন করতে হবে। পৃথিবীর কোথাও এই ধরনের স্থাপনার ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় পয়সা না দিয়ে যাওয়ার কোনো সিস্টেম নেই।
আনোয়ারুল বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডিতে যেমন ছিল যে, ২৪ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে টাকাটা (পদ্মা সেতুর নির্মাণ ব্যয়) উঠে আসবে। এখন মনে হচ্ছে ১৬/১৭ বছরের মধ্যেই টাকাটা উঠে আসবে। ওই পাড়ের যেসব কাজকর্ম এবং যেগুলো আছে সেগুলো ফিজিবিলিটি স্টাডিতে আসেনি। মোংলা পোর্ট যে এত স্ট্রং হবে, পায়রা বন্দর হবে, এত শিল্পায়ন হবে- এগুলো কিন্তু আসেনি। ধারণা ছিলো পদ্মা সেতু ১ দশমিক ৩ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি আনবে। এটা ২ এর কাছাকাছি চলে যাবে আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে।