চাঁপাইনবাবগঞ্জ প্রতিনিধি : চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে অর্থ সম্পদ হাতিয়ে নিয়ে মা শেরিনা বেগম (৮৫) ও বাবা দাহারুল ইসলাম (৯০) বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলেন সন্তানেরা। সাত সন্তানের দুইজন শিক্ষক, একজন ব্যবসায়ী হলেও কারও বাড়িতে ঠাঁই হয়নি বাবা-মার। বুধবার উপজেলার শ্যামপুর ইউনিয়নের কামাটোলা বাবুপুর গ্রামের নিজ বাড়ি থেকে তাদের বের করে দেন সন্তানেরা। নিরুপায় হয়ে তারা উপজেলার পুকুরিয়া এলাকায় বাল্য বন্ধুর বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
খবর পেয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল হায়াত। বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার কানসাট ইউনিয়নের কাজিপাড়া গ্রামের আমিনুল ইসলামের বাড়িতে গিয়ে তাদের খোঁজ-খবর নেন ইউএনও।
শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আবুল হায়াত বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে খবরটি ছড়িয়ে পড়লে জেলা প্রশাসক এই দম্পতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে রাতেই তাদের খোঁজ-খবর নেওয়া হয়। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ সব ধরনের ব্যবস্থা করা হবে।’
দাহারুল ইসলাম বলেন, ‘ছেলে-মেয়েরা আমাদের ভরণপোষণ ও দেখাশোনা না করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। আমরা স্বামী-স্ত্রী এখন অসহায় জীবন-যাপন করছি।’
বৃদ্ধা শেরিনা বেগম বলেন, ‘বড় ছেলে রায়নুল হক ঢাকায় ব্র্যাকে চাকরি করে। মেজো ছেলে বাগির আলম ভারতের বাসিন্দা। সেজো ছেলে ইমরান আলি শাহবাজপুর সোনা মসজিদ ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক। ছোট ছেলে সাইদুর রহমান শিবগঞ্জের বড় ব্যবসায়ী। মেজো মেয়ে পারচৌকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। আর এক মেয়ের স্বামী তারাপুরের একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের ১৩ বিঘা জমি ও ৪০ লাখ টাকা ছিল। ছেলে-মেয়েরা হাতিয়ে নিয়েছে। সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার পর কেউ আশ্রয় না দিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। এমনকি আমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র দুটিও তাদের কাছে।’
দাহারুল-শেরিনার সন্তান ও শাহবাজপুর সোনা মসজিদ ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক মো. ইমরান আলী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, বাবা-মা সব সম্পত্তি ছেলে-মেয়েদের ভাগ করে দিয়েছেন। সর্বশেষ চার বছর আগে বাগান বিক্রির ৮৫ লাখ টাকার মধ্যে আমার ভাগে ১০ লাখ টাকা পেয়েছি। চার বছর ধরে আমি তার বাবা-মার দেখভাল করি। অন্য ভাই-বোনেরা কেউ তাদের খোঁজ নেন না। সম্প্রতি পারিবারিক ঝামেলার কারণে ভাই-বোনদের কিছু দিনের জন্য দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ জানালেও সাড়া পায়নি। এতে বাবা-মা ক্ষুব্ধ হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছেন।’
আরেক ছেলে রায়নুল ও সাইদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোনে কোনো মন্তব্য করবেন না বলে জানান। তারা বলেন, ‘আপনারা আমাদের সাত ভাই-বোনকে একত্রিত করেন, তারপর যা বলার বলব।’