চলতি সপ্তাহে প্রবাসী আয়ে ধ্বস

২২ দিনে এলো ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলার

গাজী আবু বকর : মার্চ মাসের চলতি সপ্তাহে প্রবাসী আয়ে ধ্বস নেমেছে। পূর্ববর্তী দুই সপ্তাহের তুলনায় গত এক সপ্তাহে ১০০ মিলিয়ন ডলারের রেমিট্যান্স কম এসেছে। বৈধ ব্যাংকিং চ্যানেলে ২২ দিনে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ১৪১ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার ডলারের রেমিট্যান্স বা প্রবাসী আয় দেশে পাঠিয়েছেন। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রতি ডলার ১১০ টাকা হিসাবে যার পরিমাণ ১৫ হাজার ৫৫৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহের এ ধারা অব্যাহত থাকলে মাস শেষে এর পরিমাণ দুই বিলিয়ন ডলার হবে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। গতকাল রোববার ২৪ মার্চ বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি মার্চের প্রথম ২২ দিনে রেমিট্যান্স এসেছে ১ দশমিক ৪১ বিলিয়ন বা ১৪১ কোটি ৪৪ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। তার মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে ১৮ কোটি ২৫ লাখ ডলার, বিশেষায়িত একটি ব্যাংকের মাধ্যমে ২ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার, বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ১২০ কোটি ৪৮ লাখ ডলার এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে এসেছে ৫৭ লাখ ১০ হাজার মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স। আলোচিত সময়ের মধ্যে কোনো রেমিট্যান্স আসেনি এমন ব্যাংকের সংখ্যা ১২টি। তার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক বা বিডিবিএল, বিশেষায়িত রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বা রাকাব, বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক লিমিটেড, কমিউনিটি ব্যাংক, সিটিজেনস ব্যাংক, আইসিবি ব্যাংক ও সীমান্ত ব্যাংক। এছাড়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর মধ্যে রয়েছে ফরেন কমার্শিয়াল ব্যাংক, হাবিব ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান, স্টেট ব্যাংক অব ইন্ডিয়া এবং উরি ব্যাংক।

এর আগে সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসের পুরো সময়ে বিভিন্ন দেশে কর্মরত প্রবাসীরা মোট ২১৬ কোটি ৬০ লাখ ডলার বা ২৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা পাঠিয়েছিলেন। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ২০১ কোটি ডলার বা ২ দশমিক ১ বিলিয়ন ডলার বা ২২ হাজার ১১০ কোটি টাকা। আর বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে ১৯৮ কোটি ৯৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার বা ২১ হাজার ৮০০ কোটি টাকার বেশি রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।

গত বছরের প্রথম মাস জানুয়ারিতে রেমিট্যান্স এসেছিল ১৯৫ কোটি ৮৮ লাখ ডলার, ফেব্রুয়ারিতে আসে ১৫৬ কোটি ডলার, মার্চে ২০২ কোটি, এপ্রিলে ১৬৮ কোটি, মে মাসে ১৬৯ কোটি, জুনে ২২০ কোটি, জুলাইয়ে ১৯৭ কোটি, আগস্টে ১৫৯ কোটি ৯৪ লাখ, সেপ্টেম্বর মাসে ১৩৩ কোটি, অক্টোবরে ১৯৭ কোটি, নভেম্বর মাসে ১৯৩ কোটি ডলার এবং শেষ মাস ডিসেম্বরে আসে ১৯৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে (২০২৪) গড়ে প্রতিদিন ৭ কোটি ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার ১৪৩ ডলার দেশে এসেছিল। আর আগের বছরের মার্চ মাসে (২০২৩) প্রতিদিন প্রবাসী আয় এসেছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ১৫ হাজার ৬৬৬ ডলার। সে হিসাবে চলতি মার্চের প্রথম ১৫ দিনে প্রবাসী আয়ের গতি কিছুটা কমেছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের মতে, ২০২০ সালে হুন্ডি বন্ধ থাকায় ব্যাংকিং চ্যানেলে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিট্যান্স এসেছিল। বিদায়ী ২০২২-২৩ অর্থবছরে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসীরা পাঠিয়েছেন ২ হাজার ১৬১ কোটি মার্কিন ডলার। এটি এ যাবৎকালের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে করোনাকালীন ২০২০-২১ অর্থবছরে সর্বোচ্চ ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছিল দেশে।

Share