ব্যাংকগুলোর আইন বিভাগ শক্তিশালী করার নির্দেশ

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : খেলাপি ঋণ আদায়ে ব্যাংকগুলোকে লিগ্যাল টিম শক্তিশালী করার নতুন নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। নতুন নির্দেশনায় লিগ্যাল টিমে কর্মকর্তা ও প্যানেল আইনজীবী নিয়োগ এবং তাদের বার্ষিক মূল্যায়ন কীভাবে করতে হবে, সে সম্পর্কে বলা হয়েছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ সংক্রান্ত এক নির্দেশনা জারি করেছে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সামগ্রিক ঋণ ব্যবস্থাপনায় আদায় কার্যক্রম সুসংহত করার ক্ষেত্রে ব্যাংকের আইন বিভাগ বা লিগ্যাল টিমের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাংকিং সেক্টরে বিদ্যমান খেলাপি ঋণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ অর্থ ঋণ আদালতে মামলাধীন। অনেক খেলাপি ঋণের বিপরীতে ঋণগ্রহীতা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ বা আপিল বিভাগে রিট পিটিশন দায়ের করেছেন। যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য ব্যাংকের লিগ্যাল টিমকে আরও শক্তিশালী করা হলে বিচারাধীন মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করা যাবে। ফলে, একদিকে ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আদায়ের হবে অন্যদিকে ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের ব্যাংকিং খাতের জন্য ঘোষিত কর্মকৌশলের রোডম্যাপ বাস্তবায়ন এবং খেলাপি ঋণ আদায়ে গতিশীলতা আনতে ব্যাংকগুলোর লিগ্যাল টিম শক্তিশালী করতে নির্দেশনাগুলো অনুসরণ করতে বলা হয়েছে।

আইন বিভাগ বা লিগ্যাল টিমের কাঠামো: ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার সরাসরি তত্ত্বাবধানে একজন চিফ লিগ্যাল অফিসার পদায়ন করতে হবে। তিনি মামলাধীন ঋণসমূহের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির নিমিত্তে প্রয়োজনীয় নীতি, কৌশল ও পদ্ধতি প্রণয়নের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন। চিফ লিগ্যাল অফিসারকে অবশ্যই কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএলবি) ডিগ্রিধারী হতে হবে। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লিগ্যাল টিমে ন্যূনতম পাঁচ বছর কাজের অভিজ্ঞতা এবং সংশ্লিষ্ট মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। এছাড়া বার- এট-ল, আইন বিষয়ে মাস্টার্স (এলএলএম), পিএইচডি ডিগ্রি বা আইন বিষয়ে বিশেষায়িত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে।

অর্থ ঋণ আদালত, হাইকোর্ট বিভাগ, আপিল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা এবং এর বিপরীতে অনাদায়ী অর্থের পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে লিগ্যাল টিমে প্রয়োজনীয় সংখ্যক দক্ষ জনবল নিতে হবে। লিগ্যাল টিমের জনবলের ন্যূনতম এক-তৃতীয়াংশ কর্মকর্তাকে আইন বিষয়ে ডিগ্রিধারী এবং ব্যাংকিং বিষয়ে অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

বিচারাধীন মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন প্রতি মাসে চিফ লিগ্যাল অফিসার ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বা প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে দাখিল করতে হবে। প্রতি তিন মাসে লিগ্যাল টিমকে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সভায় মামলার অগ্রগতি প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হবে।

প্যানেল আইনজীবী নিয়োগের যোগ্যতা: কোনো স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক (এলএলবি) ডিগ্রি থাকতে হবে। এছাড়া, বার- এট-ল, আইন বিষয়ে মাস্টার্স (এলএলএম), পিএইচডি ডিগ্রি বা আইন বিষয়ে বিশেষায়িত উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনকারীদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। বাংলাদেশ বার কাউন্সিল বা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক বার অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য পদ থাকতে হবে। প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক আপিল ট্রাইব্যুনাল, সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগ ও আপিল বিভাগে মামলা পরিচালনাকারী দক্ষ আইনজীবীগণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেওয়ানি, ফৌজদারি, দেউলিয়াবিষয়ক আদালত বা অর্থ ঋণ আদালতে মামলা পরিচালনায় কমপক্ষে তিন বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। আদালতের কার্যক্রম, সালিশ, মধ্যস্থতা এবং বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি ফোরামে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্ব করার অভিজ্ঞতাসম্পন্ন আইনজীবীগণকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ফৌজদারি অপরাধে ১ বছর বা ততধিক সময়ের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত কোনো আইনজীবী প্যানেলভুক্তির যোগ্য হবেন না। প্যানেলভুক্ত কোনো আইনজীবী ফৌজদারি মামলায় ন্যূনতম এক বছরের জন্য দণ্ডপ্রাপ্ত হলে উক্ত আইনজীবীকে অনতিবিলম্বে প্যানেল থেকে বাদ দিতে হবে।

প্যানেলভুক্ত আইনজীবীর পারফরম্যান্স মূল্যায়ন: ব্যাংকের প্যানেলভুক্ত আইনজীবীর পারফরম্যান্স প্রতি বছর মূল্যায়ন করতে হবে এবং মূল্যায়নকালে মামলা নিষ্পত্তির পরিমাণ ও হার, নির্ধারিত সময়ে যথাযথ ও মানসম্মত আইনি মতামত প্রদান, আদালতে উপস্থিতির হার ও প্রত্যক্ষভাবে মামলা পরিচালনা, মামলা সংশ্লিষ্ট শাখ বা অফিসের সাথে যোগাযোগ রক্ষাসহ অন্যান্য পেশাগত যোগ্যতা বিবেচনা করতে হবে। ইসলামী শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকসমূহ তাদের খেলাপি বিনিয়োগ আদায় কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে উপরোক্ত নীতিমালার আলোকে নিজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

Share