
নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলা নববর্ষের বর্তমান মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করে পুরানো নামে রাখা হলো ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। পয়লা বৈশাখে প্রতি বছর চারুকলা অনুষদ আয়োজিত মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান বলেছেন, ‘আমরা নাম পরিবর্তন করছি না। আমরা পুরোনো নাম এবং ঐতিহ্যে ফেরত যাচ্ছি, যেটা দিয়ে চারুকলার এই কার্যক্রম শুরু হয়েছিল।’ চারুকলা ১৯৮৯ সাল থেকে পয়লা বৈশাখে শোভাযাত্রা করে আসছে। শুরুতে নাম ছিল ‘আনন্দ শোভাযাত্রা’। নব্বইয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের পটভূমিতে অমঙ্গলকে দূর করে মঙ্গলের আহ্বান জানিয়ে শোভাযাত্রার নামকরণ হয় ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। এবারের আয়োজনে ২৮ জাতিগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের মধ্যে শোভাযাত্রাটি ‘সকলের হয়ে উঠবে’ বলে মনে করছেন আয়োজন সংশ্লিষ্টরা। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’।
শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলা নববর্ষের এই শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন বিষয়ে এমন মন্তব্য করেন উপাচার্য। পয়লা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ-১৪৩২ উদ্যাপনের বিভিন্ন দিক জানাতে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা করা হয়, শোভাযাত্রার নতুন নাম হবে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। আগে নাম ছিল ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’। গত শতকের আশির দশকে সামরিক শাসনের অর্গল ভাঙার আহ্বানে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে যে শোভাযাত্রা বের হয়েছিল; সেটিই পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় রূপ নেয়।
এ প্রসঙ্গে উপাচার্য নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্যে দুটো মেসেজ (বার্তা) আছে। একটি হচ্ছে, একটি নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার অবসান। রাজনৈতিক ও সামাজিক নিবর্তনমূলক স্বৈরাচারীব্যবস্থার বিরুদ্ধে মানুষের যে স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদ, সেই বিষয়টি তুলে ধরা। কিছু মোটিফ সেই কাজটি করছে। আর দ্বিতীয় যে অংশটি আছে, সেটি হচ্ছে মূলত ঐক্যের ডাক, সম্প্রীতির ডাক। নিয়াজ আহমেদ খান বলেন, এই শোভাযাত্রায় এই দুটো বার্তাকে তাঁরা একসঙ্গে দিতে যাচ্ছেন।
পহেলা বৈশাখের সকালে বরাবরই রমনার বটমূলে ছায়ানটের বর্ষবরণ শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে জাতীয় সঙ্গীতের মধ্য দিয়ে শুরু হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। নববর্ষ উদযাপনে তার আগে থেকেই শাহবাগ এলাকা রূপ নেয় জনারণ্যে। নানা সাজে বিভিন্ন বয়সী মানুষে অংশ নেন শোভাযাত্রায়। ঢাকের তালে তালে শাহবাগ মোড় হয়ে শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ঘুরে ফের শাহবাগ হয়ে টিএসসিতে গিয়ে শেষ হয় এটি। এবারের শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ঠিক করা হয়েছে ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। এই প্রতিপাদ্য ধারণ করে শোভাযাত্রায় তুলে ধরা হবে আবহমান বাংলার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। সেই সঙ্গে গতবছর জুলাই-অগাস্টের অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে ‘ফ্যাসিবাদকে’ বিদায় জানানো হয়েছে, সেই ফ্যাসিবাদের উত্থান যেন এই দেশে আর না হয়, সে প্রত্যাশাও ছড়িয়ে দেওয়া হবে বলে আয়োজন সংশ্লিষ্টদের ভাষ্য।
জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞানবিষয়ক সংস্থা ইউনেসকো ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর মঙ্গল শোভাযাত্রাকে বিশ্বের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে।