চুরির অভিযোগে রশিতে বেঁধে মা-মেয়েকে ইউপি চেয়ারম্যানের মারধর

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : গরু চুরির অভিযোগ তুলে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার হারবাং ইউনিয়নের একটি গ্রামে মা–মেয়েকে রশিতে বেঁধে এলাকা ঘুরিয়ে ইউপি কার্যালয়ে নিয়ে মারধর করা হয়। চেয়ারম্যান নিজেই তাদের মারধর করেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে।

ঘটনাটি শুক্রবার দুপুরের। তবে শনিবার রাত ১১টার দিকে এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ও ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বিষয়টি জানাজানি হয়।

স্থানীয়দের ভাষ্য, মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে নেওয়ার পর চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তাঁদের আবার মারধর করেন। পরে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, কোমরে রশি বেঁধে দুই নারীকে প্রকাশ্য সড়কে ঘোরানো হচ্ছে। একপর্যায়ে তাঁদের হারবাং ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। ওই দুই নারী সম্পর্কে মা ও মেয়ে। ভিডিওর বাইরে এই দুই নারীর সঙ্গে আরও তিনজন ছিলেন। তাঁদের মধ্যে একজন নারী ও দুজন পুরুষ। পুরুষদের মধ্যে একজনের বাড়ি পেকুয়া উপজেলা। বাকি দুজনের বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলায়।

স্থানীয় লোকজনের কাছ থেকে জানা গেছে, হারবাং ইউপি থেকে হারবাং ফাঁড়ির পুলিশ গিয়ে মা ও মেয়েকে নিয়ে যায়। সঙ্গে আরও তিনজনকে। পরে তাঁদের চকরিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। শনিবার গরুর মালিক মাহবুবুল হক বাদী হয়ে গরু চুরির অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে তাঁদের চকরিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বলেন, মা-মেয়েকে রশি দিয়ে বেঁধে আনার পর হারবাং ইউনিয়ন পরিষদে স্থানীয় চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম তাঁদের আবার মারধর করেন। একপর্যায়ে ওই দুই নারীর শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাদের পুলিশের হাতে তুলে দেন চেয়ারম্যান।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান মিরানুল ইসলাম বলেন, যখন গরু চুরির ঘটনা ঘটে তখন তিনি ছিলেন ব্যক্তিগত কাজে চট্টগ্রামের কলাউজানে। অবশ্য ঘটনার খবর পেয়ে গ্রাম্য চৌকিদার পাঠিয়ে জনতার রোষানল থেকে তাদের উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদে নিয়ে আসা হয়। এরপর পরিষদ থেকে মাত্র ২০ গজের মধ্যে থাকা হারবাং ফাঁড়ির পুলিশের কাছে তাদের হস্তান্তর করা হয়। কিন্তু বিভিন্ন মাধ্যমে আমাকেও এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে ঘটনাটি ভিন্নখাতে নেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে।

হারবাং পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক আমিনুল ইসলাম বলেন, শুক্রবার স্থানীয় লোকজন ফাঁড়ি পুলিশকে খবরটি দেন। এরপর মা-মেয়েকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। এ ঘটনায় স্থানীয় এক ব্যক্তি গরু চুরির অভিযোগে পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করলে শনিবার তাঁদের জেলহাজতে পাঠানো হয়।

চকরিয়া থানার ওসি মো. হাবিবুর রহমান বলেছন, গরু চুরির ঘটনা যেমন অপরাধ, তেমন আইনের দৃষ্টিতেও গর্হিত অপরাধ নারীর প্রতি অমানবিকতা। তাই অতি উৎসাহী যারা নারীদের ওপর এমন গর্হিত কাজ করেছে, শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধেও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Share