‘দানবীর ভিক্ষুক’ ঘরের চাবি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে চাইলেন

নিজস্ব বার্তা প্রতিবেদক : শেরপুরের সীমান্তবর্তী ঝিনাইগাতী উপজেলার গান্ধীগাঁও গ্রামের সেই দানবীর ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার পাকা বসত ঘর পেলেন। রোববার দুপুরে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব নাজিম উদ্দিনের বাড়িতে উপস্থিত হয়ে তার হাতে ঘরের চাবি ও ফুলের তোড়া তুলে দেন।

ঘরের চাবি হাতে পেয়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি বৃদ্ধ নাজিম উদ্দিন। আঞ্চলিক ভাষায় তিনি বলেন, ‘কুন কিছু পাওয়ার আশায় আমি দান করি নাই। গরিবের কষ্ট সহ্য হয় নাই। তাই ঘর ঠিক করার জন্য জমানো ১০ হাজার টাকা করোনা তহবিলে দিয়া দিলাম।’

নাজিম উদ্দিন আরও বলেন ‘আমার বয়স বিরাশি। এই বয়সে অনেক আজা (রাজা) দেখছি। কিন্তু শেখ হাসিনার মত দরদি আজা (রাজা) দেহি নাই। আমারে চিনে না, জানে না। লাখ লাখ ট্যাহা খরচ কইরা পাক্কা ঘর কইরা দিল। আমার আর কিছু চাওয়া পাওয়ার নাই। শুধু শেখ হাসিনারে সামনা সামনি দেকপার চাই। দেহা পাইলে তার পা দুইডা ধইরা সালাম করমু।’

ঘরের চাবি হস্তান্তর অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) তোফায়েল আহমেদ, ঝিনাইগাতীর ইউএনও রুবেল মাহমুদ, এনডিসি মো. মিজানুর রহমান, ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এস এম ওয়ারেজ নাইম, সাধারণ সম্পাদক আমিরুজ্জামান লেবু প্রমুখ ।

অনুষ্ঠানে জেলা প্রশাসক আনার কলি মাহবুব বলেন, অসহায় নাজিম উদ্দিনের দানের ঘটনাটি এ যুগে বিরল। যিনি তিল তিল করে কুঁড়ে ঘর মেরামত করার জন্য ১০ হাজার টাকা জমিয়েছিলেন। অথচ সেই টাকা দান করলেন করোনা তহবিলে।

তিনি আরও বলেন, যেভাবে মহৎ দান করেছেন নাজিম উদ্দিন, ঠিক সেইভাবেই আমাদের জনদরদী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে সম্মানিত করেছেন নিজের টাকায় পাকা ঘর তৈরি করে দিয়ে। একজন ভিক্ষুকের প্রতি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভালবাসা দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেছি।

পরে স্থানীয় গান্ধীগাঁও বাজারে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে দেওয়া একটি পাকা দোকানঘর ও ঝিনাইগাতী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এসএম ওয়ারেজ নাইমের উপহার একটি অটোরিকশার চাবি ওই ভিক্ষুকের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এদিন স্থানীয় লোকজন নাজিম উদ্দিনের প্রতি সম্মান জানিয়ে গান্ধীগাঁও বাজারের নাম দেন নাজিম উদ্দিন বাজার।

উপজেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২১ এপ্রিল ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন (৮২) ইউএনও’র করোনা তহবিলে ১০ হাজার টাকা দান করেন। ওই উপজেলার কাংশা ইউনিয়নের গান্ধীগাঁও গ্রামের বাসিন্দা অসহায় নাজিম উদ্দিনের দানের ঘটনা সারাদেশে ব্যাপক আলোচিত হয়।

প্রায় দুই বছর ধরে ভাঙ্গা কুঁড়ে ঘর মেরামত করার জন্য তিনি ওই টাকা জমিয়েছিলেন। করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর লকডাউন ঘোষণা করা হলে মানুষের দুঃখ-কষ্ট বেড়ে যায়। গরিব মানুষকে সাহায্য করার জন্য ভিক্ষুক নাজিম তার বহু কষ্টে জমানো টাকা ঝিনাইগাতীর ইউএনও’র হাতে তুলে দেন।

সরেজমিন দেখা যায়, প্রত্যন্ত গ্রামে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বারান্দাসহ বিশাল পাকা বসত ঘরে রয়েছে দুইটি শোবার ঘর, সংযুক্ত একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরূম। এছাড়া বিদ্যুতের খুঁটি লাগিয়ে প্রায় আধ কিলোমিটার দূর থেকে আনা হয়েছে বিদ্যুতের লাইন।

সারাজীবন অন্ধকারে থাকা নাজিম উদ্দিনের বাড়ি এখন আলোকিত। সব মিলিয়ে একটি পরিপাটি আবাসস্থল ও রোজগারের ব্যবস্থা হওয়ায় দারুণ খুশি ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিন।

ওই গ্রামের নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সদস্য মিলন কোচ (৬৫) বলেন, ‘নাজিম কাহার (কাকা) দানের প্রতিদানে একজন ভিক্ষুককে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেভাবে ঘর দান করলেন, সহানুভূতি দেখাইলেন এজন্য আমরা গ্রামের মানুষ খুব খুশি হইছি। আমার বয়সে এইরকম প্রধানমন্ত্রী দেহি নাই। যার মন ভিক্ষুকের জন্যও কাঁন্দে।’

গ্রামের আরেক বৃদ্ধ আইয়ুব আলী (৭০) বলেন, ‘পরথম শুনলাম নাজিম কাহারে (কাকা) প্রধানমন্ত্রী পাক্কা ঘর দিব। বিশ্বাস হয় নাই। এরপরে দেখলাম বাড়ি অইতাছে। অহনতো অত দূর থেইক্কা দেহা যায় ঝক ঝক করতাছে কাহার বাড়ি। তিনি বলেন, ‘আসলেই হাসিনা গরীবের দুঃখ বুঝে। হের আমলে গরিব মানুষ খুব ভাল আছে।’

Share