মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বাকে জোরপূর্বক প্রসব

নিজস্ব জেলা প্রতিবেদক : সাভারের আশুলিয়ায় মৃত্যুর ভয় দেখিয়ে সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক নারীকে ভুল বুঝিয়ে সন্তান প্রসবে বাধ্য করিয়ে এবং সেই নবজাতক বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিকে বিক্রি হওয়া কন্যা সন্তানকে উদ্ধার করে প্রকৃত মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সোমবার (২৪ মে) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদ।

গ্রেফতারকৃতরা হলো- আশুলিয়ার নরসিংহপুর এলাকার নিউ মডার্ন ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক ও চিকিৎসক কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার খোসগড় গ্রামের আব্দুল আজিজ খানের ছেলে মোস্তফা কামাল (৩৯), টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর থানার হাতরুড়া গ্রামের আব্দুল হামিদ মাস্টারের ছেলে আবু হানিফ (৪০), নওগাঁ জেলার মান্দা থানার বৈলশিং গ্রামের মৃত কুতুবউদ্দিন প্রামাণিকের ছেলে হানিফ বিন কুতুব (৪২), শরীয়তপুর জেলার সখিপুর থানার কাঁচিকাটা গ্রামের জালাল উদ্দীনের ছেলে মোহাম্মদ সুমন মিয়া (২৯), এবং নবজাতকটির ক্রেতা সিরাজগঞ্জ জেলার উল্লাহপাড়া থানার নতুন দাতপুর গ্রামের মৃত বরাত আলীর ছেলে অয়েজুল।

এঘটনায় ভুক্তভোগী দম্পতিরা হলেন- রাজশাহী জেলার বাগমারা থানার সূর্যপাড়া গ্রামের হাতেম আলীর ছেলে মো. আবুল কালাম আজাদ (২৮) ও তার স্ত্রী শিখা বেগম (২৬)।

পুলিশ জানায়, পেটের ভিতরে বাচ্চা উল্টো হয়ে আছে, মা ও শিশু উভয়ের জীবন সঙ্কটাপন্ন তাই দ্রুত প্রসব করাতে হবে এমন বিভিন্ন সমস্যার ভুল তথ্য গর্ভবতী নারী ও তার পরিবারের মাথায় ঢুকিয়ে দেয় বাচ্চা বিক্রিকারী চক্রটি। তাই চক্রটির কথামতো বাচ্চা যেহেতু বাঁচবেনা তাই সময়ের আগেই বাচ্চা প্রসব করাতে রাজি হয় পরিবারটি। তবে বাচ্চা প্রসব করিয়ে সেই বাচ্চা মূহুর্তেই বিক্রি করে দেয় প্রতারক চক্রটি।

নবজাতকের পিতা আবুল কালাম আজাদ বলেন, গত ১৭ মে আমার স্ত্রীর পেটে অনেক ব্যথা হয়। এসময় আমি স্ত্রীকে নিয়ে ওই ক্লিনিকে গেলে ডাক্তার আল্ট্রাসনোগ্রামের পরামর্শ দেন। তাদের কথামত আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হলে রিপোর্ট দেখে ডাক্তার বলেন, নবজাতকটি পেটের মধ্যে উল্টো হয়ে থাকায় মা ও শিশুর জীবন সঙ্কটাপন্ন, দ্রুত প্রসব করাতে হবে। এসময় ভয়ে আমরা ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের কথায় রাজি হলে তাদের এক নারী কর্মী এসে আমার স্ত্রীকে পার্শ্ববর্তী ঘোষবাগ এলাকার একটি বাড়িতে নিয়ে যায়। সেই বাড়িতে তার ডেলিভারি হয় এবং একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন শিখা। এরপরে ডাক্তার এসে বলেন, আমাদের মেয়ে খুব বেশি হলে ৩ দিন বাঁচতে পারে। ১৫ দিন বাঁচাতেও অনেক টাকার দরকার। এভাবে ভুল বুঝিয়ে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে মেয়েকে নিয়ে যায় এবং সন্তান ফেরত চাইলে ৫৫ হাজার টাকা দাবি করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

নবজাতকের মা শিখা খাতুন বলেন, আমি তৈরি পোশাক কারখানায় হেলপারের কাজ করি। আমাকে ভুল বুঝিয়ে ওই ক্লিনিকের মালিক মোস্তফা কামালসহ অন্য চিকিৎসকেরা মিলে আমার মেয়েকে সিরাজগঞ্জে ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয়। বিষয়টি থানায় জানানো হলে আমার সন্তানকে উদ্ধার করে পুলিশ।

আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) এমদাদ জানান, ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে ওই ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়। সেখানে ঘটনার সত্যতা পাওয়ায় অভিযুক্ত ৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় অভিযান চালিয়ে নবজাতটিকে উদ্ধার এবং নবজাতকটি ক্রয়ের অভিযোগে আরও একজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। নবজাতকটিকে তার প্রকৃত মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গ্রেপ্তারকৃতদেরকে সোমবার দুপুরে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

Share