র‍্যাব হেফাজতে নারীর মৃত্যুর বিষয়টি সেনসিটিভ, আর দেরি করবেন না : হাইকোর্ট

নয়াবার্তা প্রতিবেদক : র‍্যাব হেফাজতে নওগাঁর ভূমি অফিসের কর্মচারী সুলতানা জেসমিনের (৪০) মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে আরও দুই মাস সময় দিয়েছেন হাইকোর্ট।

তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন দাখিল করতে সময় চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি মুহম্মদ মাহবুব-উল ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।

শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘বিষয়টি সেনসিটিভ। দুই মাস ক্রস করবেন না। দুই মাস কিন্তু দুই মাসই। আর দেরি করবেন না।’

নওগাঁ শহর থেকে আটকের পর র‍্যাবের হেফাজতে সুলতানা জেসমিনের মৃত্যুর ঘটনার উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন বিচারিক তদন্ত চেয়ে করা রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ৫ এপ্রিল হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেন।

জেসমিনের মৃত্যুর পুরো ঘটনা তদন্তে একটি উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করতে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট। কমিটিতে নওগাঁর জেলা ও দায়রা জজ এবং চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে অন্তর্ভুক্ত করে ওই কমিটি গঠন করতে বলা হয়। একই সঙ্গে ৬০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় আজ বিষয়টি কার্যতালিকায় ওঠে।

আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস, সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল কালাম খান ও তৌফিক সাজাওয়ার।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের পক্ষে দুই মাস সময়ের আরজি জানিয়ে শুনানিতে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে (সমন্বয় ও সংস্কার) আহ্বায়ক করে গত ২২ মে উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি রাজশাহী ও নওগাঁ সরেজমিন পরিদর্শন করে তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে।

আদালত বলেন, তদন্ত প্রক্রিয়া কি সম্পূর্ণ হয়েছে? তখন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এভিডেন্স ও তথ্যাদি সংগ্রহ করা হয়েছে। তদন্ত শেষ হয়নি। কমিটি প্রতিবেদন দাখিলের জন্য দুই মাস সময় বাড়ানোর প্রার্থনা করেছে।

আদালত বলেন, কমিটি কবে ঘটনাস্থলে গিয়েছিল? জবাবে সমরেন্দ্র বিশ্বাস বলেন, গত ২৯ থেকে ৩১ মে। যেসব মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়েছে, তা জব্দ করা হয়েছে। এগুলোর ফরেনসিক টেস্ট করা হবে। সার্বিক বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে প্রতিবেদন প্রস্তুত করা হবে।

রিট আবেদনকারী আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক বলেন, গত ৫ এপ্রিল আদালত আদেশ দেন। ২২ মে কমিটি গঠন করা হয়। আদালতের আদেশের পর এক মাসের বেশি সময় লেগেছে কমিটি গঠন করতে। ধীরগতিতে করেছে। এক মাস সময় দেওয়া যেতে পারে।

এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেন, নওগাঁ ও নাটোরের র‍্যাবকে বিবাদী করে রিট আবেদনকারী রিট করেন। এটি সংশোধন করতে হয়েছে, যা রিট আবেদনকারী আদালতে আনেননি। দুই মাস সময় দিলে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন দাখিল করা যাবে।

এ সময় আদালত বলেন, ‘বিষয়টি সেনসিটিভ। বারবার সময় নেওয়া যাবে না। দুই মাস কিন্তু দুই মাস। এর মধ্যে শেষ করবেন।’ পরে আদালত দুই মাস সময় দিয়ে আদেশ দেন।

সুলতানা জেসমিন নওগাঁ সদর উপজেলার চণ্ডীপুর ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। গত ২২ মার্চ নওগাঁ শহরের মুক্তির মোড় থেকে তাঁকে আটক করে র‍্যাব। ২৪ মার্চ সকালে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। র‍্যাবের ভাষ্য, প্রতারণার অভিযোগে সুলতানা জেসমিনকে আটক করা হয়েছিল। আটকের পর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

তাৎক্ষণিকভাবে তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। স্বজনদের অভিযোগ, আটক হওয়ার আগে সুলতানা জেসমিন সুস্থ ছিলেন। র‍্যাবের হেফাজতে নির্যাতনের কারণে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।

‘উইমেন ডাইস ইন র‍্যাব কাস্টডি’ শিরোনামে দ্য ডেইলি স্টারের গত ২৭ মার্চ প্রকাশিত প্রতিবেদন হাইকোর্টের এই বেঞ্চে তুলে ধরেন আইনজীবী মনোজ কুমার ভৌমিক।

সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত সুলতানা জেসমিনের ময়নাতদন্ত (পোস্টমর্টেম) প্রতিবেদনসহ সংশ্লিষ্ট তথ্য দেখতে চান। রাষ্ট্রপক্ষকে ২৮ মার্চ এসব কাগজপত্র ও তথ্য দাখিল করতে বলা হয়। পাশাপাশি পত্রিকার খবর আদালতের নজরে আনা আইনজীবীকে লিখিত আবেদন প্রস্তুত করে নিয়ে আসতে বলা হয়। এ অবস্থায় মনোজ কুমার ভৌমিক গত ২৮ মার্চ ওই রিট করেন।

Share